Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
ডোমকলে উদাসীন প্রশাসন

বিপজ্জনক লছিমনে স্কুলে যাতায়াত খুদেদের

পুলকার হিসেবে গ্যাসে চলা মারুতি ভ্যানের প্রচলন অনেকদিন আগেই হয়েছে। কিন্তু পুলকার হিসাবে লছিমন? আজ্ঞে হ্যাঁ, ডোমকল এলাকায় এখন হামেশাই দেখা মেলে এমন দৃশ্যের। বিপজ্জনক সেই লছিমনে ঠাসাঠাসি করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করছে খুদে পড়ুয়ারা। সব জেনেও অদ্ভুত ভাবে বিষয়টি নিয়ে উদাসীন অভিভাবক, স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে প্রশাসন সকলেই।

লছিমনে চেপে স্কুলে যাওয়াই রেওয়াজ। বিশ্বজিৎ রাউতের ছবি।

লছিমনে চেপে স্কুলে যাওয়াই রেওয়াজ। বিশ্বজিৎ রাউতের ছবি।

সুজাউদ্দিন
ডোমকল শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪০
Share: Save:

পুলকার হিসেবে গ্যাসে চলা মারুতি ভ্যানের প্রচলন অনেকদিন আগেই হয়েছে। কিন্তু পুলকার হিসাবে লছিমন? আজ্ঞে হ্যাঁ, ডোমকল এলাকায় এখন হামেশাই দেখা মেলে এমন দৃশ্যের। বিপজ্জনক সেই লছিমনে ঠাসাঠাসি করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করছে খুদে পড়ুয়ারা। সব জেনেও অদ্ভুত ভাবে বিষয়টি নিয়ে উদাসীন অভিভাবক, স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে প্রশাসন সকলেই।

ডোমকল ও লাগোয়া এলাকায় খুদে পড়ুয়াদের জন্য সম্প্রতি বহু বেসরকারি স্কুল তৈরি হয়েছে। পড়ার খরচ সেখানে তুলনামূলক ভাবে বেশি হলেও সেই সব স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করানোর ঝোঁক বেড়েছে মানুষের। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মহকুমা সদর কিংবা লাগোয়া এলাকার ওই স্কুলগুলোতে যাতায়াত করাএকটা বড় সমস্যা। আর সেই মুশকিল আসান করে দিচ্ছে লছিমন!

বিষয়টি বিপজ্জনক জেনেও কম খরচের কারণে রাজি হয়ে যাচ্ছেন বহু অভিভাবকেরাও। তাঁরা বলছেন, “এখন গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে তো তেমন পড়াশোনা হয় না। সেই কারণেই টাকা বেশি খরচ হবে জেনেও ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। সেখানে বই-খাতা আরও অন্যান্য খরচ ধরে মাসে ভাল টাকা খরচ হচ্ছে। কম খরচে এখানে লছিমন ছাড়া তো অন্য কিছু মেলেও না।” কিছু অভিভাবক আবার বলছেন, “ঝুঁকি কোথায় নেই বলুন তো? পুলকার হিসাবে যে মারুতি ভ্যানগুলো চলে তাদের বেশিরভাগই তো বেআইনি ভাবে গ্যাসে চলে। যে কোনও সময় বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্কুলগুলোতেও কোনও গাড়ির ব্যবস্থা নেই। অগত্যা ভরসা লছিমন।”

বিস্তর টাকা খরচ করে বেসরকারি স্কুলগুলো তৈরি হচ্ছে। পড়ুয়াদের টানতে তারা বিজ্ঞাপণ-প্রচার সব কিছুই করছে। তাহলে পড়ুয়াদের যাতায়াতের কোনও ব্যবস্থা তারা করছে না কেন? সাদিখাঁরদিয়ার এলাকার বেসরকারি এক স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা যেমন বলছেন, “যাতায়াতের বিষয়টি সম্পূর্ণ অভিভাবকদের ব্যাপার। তাঁরা কী ভাবে তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন সেটা স্কুল কর্তৃপক্ষের ভাবার কথা নয়।”

তবে ওই শিক্ষিকার মন্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারেননি অন্যান্য বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের একজন বলেন, “আমরাও নানা বাধা-বিঘ্নের মধ্যে দিয়ে এই এলাকায় স্কুলগুলো চালাচ্ছি। আর্থিক অসুবিধার কারণেই স্কুলে যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা এখনও করতে পারিনি। তবে ভবিষ্যতে গাড়ির ব্যবস্থা করা হবে।” কেউ আবার বলছেন, “কম খরচে লছিমনই ভরসাএ কথাটাও সমর্থন করা যায় না। কারণ প্রায় ওই একই খরচে রিকশাভ্যানেও পড়ুয়ারা যাতায়াত করতে পারে। অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবেই এমনটা ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও তাঁদের সঙ্গে কথা বলব।”

কোনও লছিমনে লোহার নেট দিয়ে তৈরি হয়েছে খাঁচা। কোনওটাতে আবার বাঁশের পায়ার উপরে কাঠের পাটাতন দিয়ে তৈরি হয়েছে বসার জায়গা। লছিমনের ইঞ্জিন চলতে শুরু করলেই দমবন্ধ করা কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে লোহার খাঁচা। ঠাসাঠাসি করে ওই বিপজ্জনক যানে কয়েক কিলোমিটার এবড়োখেবড়ো রাস্তা উজিয়ে স্কুলে যাচ্ছে খুদে পড়ুয়ারা। কিন্তু প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করছে না কেন? ডোমকলের মহকুমাশাসক পুষ্পেন্দু মিত্র বলেন, “লছিমনে স্কুলে যাতায়াত কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy