Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

গরমের ঠেলায় ব্যবসা ঠেকেছে একবেলায়

হঠাৎ দেখলে মনে হবে বুঝি কার্ফু জারি হয়েছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা। স্কুল-কলেজে গরমের ছুটি চলছে। ভোটের পরে চারদিকে কেমন যেন একটা ঝিমোনো ভাব। সকাল থেকে একজনও আরোহী পাননি রিকশা চালক। দুপুরবেলা খাঁ খাঁ রোদে এক জন এলেন বটে। কিন্তু ততক্ষণে রিকশা টানার শক্তি নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। হাত নেড়ে ‘না’ বলতেও কষ্ট হচ্ছিল রিকশা চালকের।

পাখা কিনে বাড়ির পথে। কৃষ্ণনগরে সুদীপ ভট্টাচার্যের ছবি।

পাখা কিনে বাড়ির পথে। কৃষ্ণনগরে সুদীপ ভট্টাচার্যের ছবি।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৪ ০০:২৪
Share: Save:

হঠাৎ দেখলে মনে হবে বুঝি কার্ফু জারি হয়েছে।

রাস্তাঘাট ফাঁকা। স্কুল-কলেজে গরমের ছুটি চলছে। ভোটের পরে চারদিকে কেমন যেন একটা ঝিমোনো ভাব। সকাল থেকে একজনও আরোহী পাননি রিকশা চালক। দুপুরবেলা খাঁ খাঁ রোদে এক জন এলেন বটে। কিন্তু ততক্ষণে রিকশা টানার শক্তি নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। হাত নেড়ে ‘না’ বলতেও কষ্ট হচ্ছিল রিকশা চালকের। প্রচণ্ড গরমে এমনই কাহিল নদিয়া, মুর্শিদাবাদ।

কালবৈশাখিহীন বৈশাখ পার করে জ্যৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহ চলছে। স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা গড়ে চার ডিগ্রি বেশি। বৃষ্টিহীন রুক্ষ আবহাওয়া এবং বাড়তে থাকা গরমে শুধু চাষবাস নয়, থমকে গিয়েছে পর্যটন থেকে পাইকারি ব্যবসা, খুচরো কেনাবেচা।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি একবার বৃষ্টি হয়েছিল। তারপর মে মাসের প্রথম দু’দিন সামান্য ঝড়-জল। ক’দিনের জন্য তাপমাত্রা একটু যা নেমেছিল। তারপর থেকেই পারদ চড়ছে লাফিয়ে-লাফিয়ে। নদিয়া-মুর্শিদাবাদের যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা হরেন্দ্রকুমার ঘোষ জানাচ্ছেন, তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে চার পাঁচ ডিগ্রি বেশি থাকছে। ফলে চাষবাসের সামগ্রিক ছবিটাই বদলে গিয়েছে এবার। লাগামছাড়া তাপমাত্রা, পুড়িয়ে দেওয়া রোদ এবং বৃষ্টিহীনতার কারণে মরসুমি সব্জি থেকে আম, লিচু কোনওটাই ঠিক মতো বেড়ে উঠতে পারছে না।

এ দিকে, একটা গোটা বেলা কেটে যাওয়ার পরেও ‘বউনি’ হচ্ছে না দোকানে। অগত্যা সাড়ে এগারোটার মধ্যেই ‘শাটার’ নেমে যাচ্ছে। খুলতে-খুলতে সেই বিকেল সাড়ে পাঁচটা। নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিস্-এর সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, “প্রচণ্ড গরমে ব্যবসা-বানিজ্যের সময় বদলে গিয়েছে। সকাল সাতটা থেকে দশটার মধ্যেই খুচরো পাইকারি সব কেনাবেচা প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তারপর আর কেউ খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোতে চাইছেন না। বেলা সাড়ে দশটার মধ্যে দিনের মতো ব্যবসা শেষ। ফের সেই বিকেল পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটায় লোকে দোকান খুলছে।” কৃষ্ণনগরের গোয়ারিবাজার, পাত্রমার্কেট হোক বা নবদ্বীপের পাইকারি বড়বাজার, কিংবা মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, বেলেডাঙাসবর্ত্র একই ছবি। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গরমের কারণে ব্যবসা এখন একবেলায় ঠেকেছে।

গঙ্গায় ঝাঁপ। রঘুনাথগঞ্জে অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি।

নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, “ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। একে তো লম্বা সময় ধরে ভোট চলেছে। সেই জন্য ব্যবসার মন্দা চলছিল। তার উপর এই বেনজির গরম। সাধারণ ক্রেতা বলুন আর ব্যবসায়ীকেবল মাত্র প্রয়োজনের জিনিসটুকু ছাড়া কিছু কিনতে চাইছেন না কেউ। যার ঘরে ডাল আর চাল আছে সে ওই দিয়েই কাজ চালিয়ে নিচ্ছে।” তবে মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক প্রদ্যুৎ দে বলেন, “মুদিখানা ও সব্জির বাজার খারাপ চললেও এই সময়টা এসি, ফ্যান, ফ্রিজ, কোল্ড ড্রিঙ্কস্ ইত্যাদির ব্যবসা বাড়ছে। রোদচশমা, ছাতা, টুপি বিকোচ্ছে দেদার।”

গরমে পর্যটনেও ভাটার টান পড়েছে। হোটেল থেকে ধর্মশালা কার্যত ফাঁকা পড়ে আছে। নবদ্বীপ বা মায়াপুর কার্যত পর্যটকশূন্য। একটি হোটেল মালিক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক প্রসেনজিৎ সরকার বলেন, “ভোটের জন্য দীর্ঘ সময় লোকে বাড়ি থেকে বেরতে চায়নি। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে গরম। এখন সবাই পাহাড়ের ঠান্ডায় যেতে চাইছে। বৃষ্টি নেমে একটু তাপমাত্রা না কমলে এখানে পর্যটকেরা আসবেন না।”

গরমে ভিড় কমেছে সিনেমা হলেও। বেলডাঙা পুরসভার আমতলা রোডে দিন কয়েক আগে বসেছে নটরাজ সার্কাস। দলের ম্যানেজার সলিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দুপুরবেলা ১টা-৪টের শো-তে কোনও লোকই হচ্ছে না। ৪টে-৭টাও ফাঁকা যাচ্ছে। শুধু রাতের ৭টা-১০টায় লোক হচ্ছে।”

সব্জি ব্যবসায়ী হোক বা মুদির দোকানদার, হোটেল ব্যবসায়ী হোক বা সার্কাসের ম্যানেজারদু’ফোঁটা স্বস্তির বৃষ্টি চাইছেন সকলে।

অন্য বিষয়গুলি:

debasish banerjee sebabrata mukherjee krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy