রাজ্য প্রশাসন এবং শাসক দল বন্ধ-বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়ার প্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই বন্ধ করবেন। শমীকের বক্তব্য, ‘‘সরকারের কাজ বন্ধ প্রতিরোধ করা। তারা করবে।
ফাইল চিত্র।
রাজ্যে ১০৮টি পুরসভার নির্বাচনে ‘সন্ত্রাস এবং ভোট লুঠের’ প্রতিবাদে আজ, সোমবার ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্ধ ডাকল বিজেপি। এই পুরভোট বাতিল করে ফের ভোট করার দাবিও তুলেছে তারা। রাজ্য প্রশাসন অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দিয়েছে, জনজীবন সচল রাখার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। কোথাও জোর করে বন্ধ করা বা বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা হলে পুলিশ-প্রশাসন কড়া হাতে তার মোকাবিলা করবে বলেও জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসও আজ শান্তিপূর্ণ ভাবে বন্ধ বিরোধিতার কথা জানিয়েছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার রবিবার বলেছেন, ‘‘ভোটে এ দিন যাদের যে ভাবে সন্ত্রাস করতে দেখা গিয়েছে, তাতে এখনই প্রতিবাদ করতে না পারলে এ রাজ্যের ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে বেশি সময় লাগবে না। বিষয়টা আর কোনও দলীয় রাজনীতির সীমায় আটকে নেই। গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের স্বার্থে। তাই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সব মানুষের কাছে অনুরোধ, কালকের ( সোমবার) বন্ধকে সমর্থন করুন।’’ মানুষের অসুবিধা হবে বলে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিয়েও সুকান্ত বলেছেন, পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়েই তাঁদের এই পথে যেতে হয়েছে। তাঁরা কি অন্য দলকেও বন্ধ সমর্থনের আহ্বান জানাচ্ছেন? সুকান্ত বলেন, ‘‘এডটা আর কোনও দলের ব্যাপার নয়। দলমত নির্বিশেষে সব মানুষকেই আমরা বন্ধ ও প্রতিবাদে শামিল হতে আবেদন জানাচ্ছি।’’
রাজ্যের মন্ত্রী এবং তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘আমরা নীতিগত ভাবে বন্ধের বিরোধী। তা ছাড়া, নির্বাচনী সংগঠন নেই। মানুষের আস্থা হারিয়ে এখন বিশৃঙ্খলা তৈরির পথ নিতে এই বন্ধের পথ নিয়েছে বিরোধীরা। গোটা রাজ্য সচল রাখতে প্রশাসন যা করণীয় করবে।’’ আর এক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও বলেছেন, ‘‘বাংলার মানুষ বন্ধে বিশ্বাস করে না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে তারা ভরসা রাখে। কড়া হাতে প্রশাসন এই বন্ধের মোকাবিলা করবে। তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা রাস্তায় থাকবে। অরাজকতা করতে দেওয়া হবে না। চক্রান্ত করে রাজ্যকে বদনাম করার চেষ্টা বরদাস্ত করব না! পরিবহণ, অফিস সব চালু থাকবে।’’ বিরোধীদের ‘বিশৃঙ্খলা’ তৈরির চেষ্টার প্রতিবাদে সারা রাজ্যেই আজ ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিলের কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল।
বিজেপির ডাকা বন্ধে আজ সব ধরনের প্রস্তুতিই রাখছে রাজ্য সরকার। রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয় এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সরকারি ও বেসরকারি সব দফতর যথারীতি খোলা থাকবে। যানবাহন স্বাভাবিক রাখা হবে। তার পরেও কেউ জোর করে মানুষকে বাধাদানের চেষ্টা করলে কড়া হাতে পদক্ষেপ করবে পুলিশ। বন্ধ মোকাবিলার জন্য রাতেই কড়া নির্দেশিকা জারি করেছে অর্থ দফতর। তাতে বলা হয়েছে, বন্ধের দিন কোনও ছুটি গ্রাহ্য করা হবে না। দিনের কোনও অর্ধেই ছুটি নেওয়া যাবে না ওই দিন। যাঁরা ২৫ ফেব্রুয়ারি ছুটিতে ছিলেন, আজ তাঁদের হাজির হতে হবে দফতরে। নির্দেশের অন্যথা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মীর বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর ( শো-কজ়) নোটিস দেওয়া হবে। জবাব এবং তার সপক্ষে দেওয়া নথি যথাযথ হলে তবে ছুটি গ্রাহ্য হবে। না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মীর ক্ষেত্রে ‘ডায়েস নন’ (কর্মজীবন থেকে এক দিন বাদ) প্রয়োগ করা হবে এবং তাঁর সেই দিনের বেতন কাটা যাবে। যাঁরা শো-কজ় নোটিসের জবাব দেবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হতে পারে। তবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, নিকটাত্মীয়ের মৃত্যু, ২৫ তারিখের আগে থেকে অসুস্থতার কারণে ছুটি নেওয়া থাকলে এবং চাইল্ড কেয়ার লিভ, মাতৃত্বকালীন ছুটি, মেডিক্যাল-আর্নড লিভ নেওয়া থাকলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিক এই পদক্ষেপের বাইরে থাকবেন।
সূত্রের খবর, এ দিনই মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী সব জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করে বন্ধে সরকারি নির্দেশিকার যথাযথ পালনের উপর জোর দিয়েছেন। জোর করে কেউ গোলমাল পাকানোর চেষ্টা রুখতেও বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে খবর। বৈঠকে পুলিশ সুপারেরাও ছিলেন।
শাসক তৃণমূল যেমন বিজেপির বন্ধ ব্যর্থ করার ডাক দিয়েছে, আর এক বিরোধী দল সিপিএম প্রশ্ন তুলেছে, ভোটের দিন ময়দানে না থেকে বন্ধ ডাকার মানে কী? সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘পুরভোট যে ভাবে হয়েছে, আমরা অবশ্যই তার বিরোধিতা করছি। নির্বাচনের নামে প্রহসন এবং ভোট লুঠ হয়েছে। রাস্তায় থেকে লড়াই করেছেন সাধারণ মানুষ এবং বামপন্থীরা। ৭৫ বিধায়কের দল বিজেপি তখন কোথায় ছিল? বামপন্থীরা তো শূন্য! কিন্তু তারা রাস্তায় ছিল। ময়দানে না থেকে বিজেপির এই বন্ধ ডাকার অর্থ কী? ’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অবশ্যে বলেছেন, ‘‘বন্ধের বিষয়কে সমর্থন করি। ক্ষমতা থাকলে আমরাও বন্ধ করতাম! পুলিশের সহায়তা নিয়ে শাসক দলের বাহিনী বুথের পর বুথে ভোট লুঠ করেছে। তার পরে কোনও রাজনৈতিক দল তাদের মতো করে প্রতিবাদ করতেই পারে।’’
রাজ্য প্রশাসন এবং শাসক দল বন্ধ-বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়ার প্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই বন্ধ করবেন। শমীকের বক্তব্য, ‘‘সরকারের কাজ বন্ধ প্রতিরোধ করা। তারা করবে। আমরা রাজনৈতিক দল। শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটিং, মিছিল, বন্ধ করা আমাদের অধিকার। আমরা করব।’’ নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশের এ দিনের ভূমিকার প্রেক্ষিতে দু’পক্ষকেই তৃণমূলের ‘দলদাস’ বলে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy