প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সম্প্রতি ‘ন্যাশনাল হেল্থ প্রোফাইল ২০১৯’ (এনএইচপি) প্রকাশ করেছে। কিন্তু তাতে ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা নিয়ে কোনও তথ্য নেই। রাজ্য সরকার যে কেন্দ্রকে ডেঙ্গির তথ্য দিতে রাজি নয়, সেটা ফের প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
তবে স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, বিষয়টি আর ‘গোপনও’ নয়, ‘অভিযোগের’ স্তরেও নেই। অর্থাৎ প্রকাশ্যে আসার প্রশ্ন ওঠে না। কেননা এটা বাস্তব। এবং ডেঙ্গির তথ্য কেন্দ্রকে না-দেওয়াটাই রাজ্যের ‘নীতি’। ‘‘স্বাস্থ্য রাজ্য সরকারের বিষয়। আমরা আমাদের নীতি মেনেই কেন্দ্রকে ডেঙ্গির তথ্য দিই না। ডেঙ্গি মোকাবিলায় আমরা যে-ভাবে কাজ করি, অন্য কোনও রাজ্য তা করে বলে মনে হয় না। সর্বতোভাবে রাজ্যবাসীর পাশে আছে স্বাস্থ্য দফতর,’’ বলছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী।
স্বাস্থ্য যতই রাজ্যের বিষয় হোক, যেখানে আমজনতার জানপ্রাণের প্রশ্ন জড়িত, তার তথ্য কেন্দ্রকে জানিয়ে রাখতে আপত্তি কিসের, সেই প্রশ্নের সদুত্তর নেই। জাতীয় স্বাস্থ্য-ছবির রিপোর্টে ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৩৭,৭৪৬। মৃত ৪৬। কিন্তু পরের বছর বাংলায় ওই রোগে আক্রান্ত এবং মৃতের পাশে লেখা রয়েছে শূন্য! ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে জানানোর ক্ষেত্রে রাজ্যের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করার অভিযোগ নতুন নয়। তারই জেরে এনএইচপি-তে ২০১৮ সালে ডেঙ্গি নিয়ে এমন পরিসংখ্যান বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে বিধাননগর ও দক্ষিণ দমদমে
এ বছরেও দিল্লির কাছে তথ্য গোপনে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে স্বাস্থ্য ভবন। কেন্দ্রের তরফে বারবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের মনোভাব বদলায়নি। কেন্দ্রের কাছে তথ্য পাঠাতে এই ধারাবাহিক অনীহা কেন?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রকে এই তথ্য জানাতে আপত্তির কারণ প্রসঙ্গে দফতরের শীর্ষ কর্তাদের ব্যাখ্যা: রাজ্য সরকার ডেঙ্গি মোকাবিলায় ৪৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। সেখানে এই খাতে কেন্দ্রের অবদান যৎসামান্য। অতএব তাদের কাছে তথ্য পাঠানোরও দরকার নেই।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গির তথ্য গোপনের অভিযোগকে বরাদ্দ অর্থের মাপকাঠিতে বিচার করা ঠিক নয়। ‘‘কোনও রাজ্যে কোন রোগ বেশি হচ্ছে বা কম হচ্ছে, তা বোঝার উপায় হল পরিসংখ্যান। সে-ক্ষেত্রে তথ্য ধামাচাপা দিলে ক্ষতি সাধারণ মানুষেরই। পরিসংখ্যান ঠিক হলে রোগের মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় পরিকাঠামোকে কাজে লাগানো যায়,’’ বলছেন বিশেষজ্ঞেরা। রাজ্য জনস্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশ বলেন, ‘‘রাজ্য যেমন কেন্দ্রকে তথ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করছে, পুরসভা এবং পঞ্চায়েতও তো স্বাস্থ্য ভবনের কাছে তথ্য গোপন করে যেতে পারে। তাতে আখেরে জনস্বাস্থ্যেরই বিপদ।’’ প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রও বলছেন, ‘‘জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত অসুখের ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করা অনুচিত।’’
যদিও রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা এতে বিপদের কিছু দেখছেন না। তাঁদের বক্তব্য, তথ্য জানানো ছাড়া ডেঙ্গি সংক্রমণের গতিবিধি নিয়ে বিভিন্ন স্তরে কেন্দ্রের সঙ্গে যেটুকু আলোচনা হওয়ার, তা অবশ্যই হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy