ফাইল চিত্র।
করোনা হানার পরে লকডাউন পর্বে রাজ্যের বহু মানুষের কাছে কেন্দ্রের পরিষেবা নিয়ে পৌঁছে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বৈদ্যুতিন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীন তথ্যমিত্র কেন্দ্র (সিএসসি)। এ বার প্রস্তাবিত বিএসকে বা বাংলা সহায়তা কেন্দ্রগুলি চালু করার জন্য প্রাথমিক ভাবে প্রায় ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করল রাজ্য সরকার।
প্রশাসনের অনেকের ধারণা, প্রচণ্ড আর্থিক টানাটানির মধ্যেও যে এই খাতে রাজ্যকে অর্থ বরাদ্দ করতে হল, তার মূলে আছে কেন্দ্রের সমান্তরালে নিজেদের বিভিন্ন জনমুখী উদ্যোগের সুফল তৃণমূল স্তর পর্যন্ত দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার তাগিদ। তবে প্রশাসনিক আধিকারিকদের অন্য একটি অংশের বক্তব্য, কোনও প্রতিযোগিতা নয়, পরিষেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ।
রাজ্যে এখন প্রায় ১৭,৫০০ সিএসকে সক্রিয় আছে। জুনের গোড়ায় প্রাথমিক ভাবে বাংলার ৩৪২ জন বিডিও, ৬৬ জন এসডিও, ২৩ জন জেলাশাসকের অফিসে, ১৫০০ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৮১৩টি গ্রন্থাগারে মোট ২৭৪৪টি বিএসকে তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল সরকার।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গত তিন মাসে (এপ্রিল, মে ও জুন) রাজ্যের কয়েক কোটি মানুষের কাছে কেন্দ্রের বিভিন্ন পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছে কমবেশি ১৩,০০০ সিএসকে। ওই সময়ে কেন্দ্র প্রতি মাসে জনধন অ্যাকাউন্ট গ্রাহকদের জনপ্রতি ৫০০ টাকা আর্থিক সাহায্য দিয়েছিল। বেশির ভাগ উপভোক্তা (যাঁরা সরাসরি ব্যাঙ্কে পৌঁছতে পারেননি), সিএসকে-র মাধ্যমে সেই টাকা হাতে পেয়েছিলেন। উজালা গ্যাস প্রকল্পের উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টেও ওই তিন মাস টাকা দিয়েছিল কেন্দ্র। উপভোক্তাদের হাতে সেই টাকা পৌঁছে দেওয়া এবং গ্যাস বুকিংয়ের কাজও করেছিল সিএসকে। তা
ছাড়া, কোভিড পর্বে সাধারণ ব্যাঙ্কিং এবং বিমা পরিষেবা, এক টাকার বিনিময়ে টেলিফোনে চিকিৎসা পরামর্শ, গ্রামের শিশুদের অনলাইনে শিক্ষাদানের মতো কাজ হয়েছিল তথ্যমিত্র কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে। সিএসকে সূত্রে বলা হয়, “ওই তিন মাস গড়ে ১০০ কোটি টাকা করে ব্যাঙ্কিং সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে উপভোক্তাদের কাছে। শুধু উজালা প্রকল্পের আওতায় কমবেশি ৫০ লক্ষ উপভোক্তাকে সুবিধা দিয়েছে বিভিন্ন সিএসকে।”
লকডাউন পর্বে মানুষের কাছে কী ধরনের পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, সেই বিষয়ে লাগাতার প্রচারও চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র। সেই সঙ্গে রাজ্যের সমালোচনা করতেও ছাড়ছেন না অনেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কেন্দ্র-রাজ্য দড়ি টানাটানির পাশাপাশি রাজনৈতিক টানাপড়েনও বাড়ছে।
রাজ্য প্রশাসনের অনেকের বক্তব্য, সমালোচনা হলেও ওই একই সময়ে নিখরচায় রেশন, মিড-ডে মিল, আইসিডিএস পরিষেবা, সামাজিক পেনশন, করোনার মোকাবিলা-সহ বিভিন্ন জনমুখী পদক্ষেপ করেছিল রাজ্য সরকারও। ঘূর্ণিঝড় আমপানের তাণ্ডবের পরে নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হয়েছে। ত্রাণ
এবং পুনর্গঠনের কাজও হয়েছে সমান্তরাল ভাবে। চলতি পর্বেও প্রান্তিক মানুষদের কাজের ব্যবস্থা করা, ফোনে চিকিৎসা-পরামর্শের মতো কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, “বিএসকে-র মতো মাধ্যম থাকলে একেবারে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পরিষেবা পৌঁছনো নিশ্চিত করা সম্ভব। সাধারণ মানুষের পক্ষেও সরকারের কাছে আবেদন করা আরও সহজ হবে। কারণ, তাঁরা সরকারের সব পরিষেবার কথা জানতে পারবেন। আসলে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াই শেষ কথা।”
প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, দ্রুত বিএসকে তৈরির জন্য এ বার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনকে। প্রস্তাবিত ২৭৪৪টি বিএসকে-র প্রতিটির জন্য প্রাথমিক ভাবে ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তা দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ-সহ দু’টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, স্ক্যানার-সহ প্রিন্টার, ন্যূনতম আসবাব কেনা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy