Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Flood Situation in Bengal

ডিভিসি জল ছাড়বে জেনে দক্ষিণের আটটি জেলাকে ‘সতর্ক’ করে ‘মেমো’ পাঠায় নবান্ন, প্রকাশ্যে এল চিঠি

বানভাসি বাংলার বেশ কয়েকটি জেলা। এই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর থেকেই কেন্দ্র বনাম রাজ্য লড়াই বেধেছে ডিভিসি-র জল ছাড়া নিয়ে। যদিও রাজ্য আগে থেকেই বন্যার প্রস্তুতি নিয়েছিল।

Nabanna gave letter to districts before flood situation that DVC may discharge 2.5 lakh cusec water

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:১৯
Share: Save:

রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর থেকেই সরকারের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) রাজ্যকে না জানিয়ে বিপুল পরিমাণ জল ছাড়ার ফলে বানভাসি হয়েছে বাংলা। সেই অভিযোগ জানিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দু’টি চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার জবাবে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের তরফে দাবি করা হয়, রাজ্য এবং ডিভিসি-র প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কমিটিই ঠিক করে, কখন কতটা জল ছাড়া হবে। ডিভিসি-র তরফেও জানানো হয়, বাংলার পাশাপাশি ‘দামোদর ভ্যালি রিজ়ার্ভার রেগুলেশন কমিটি’ (ডিভিআরআরসি)-তে ঝাড়খণ্ড সরকারেরও প্রতিনিধি রয়েছেন। ওই কমিটির সদস্য সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন (সিডব্লিউসি)-র প্রতিনিধি।

ডিভিসি দাবি করে, সকলেই জল ছাড়ার কথা আগাম জানতেন। সেই দাবি উড়িয়ে দেয় রাজ্য সরকার। তবে রাজ্যের দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের একটি ‘মেমো’ অনুযায়ী, রাজ্য আগে থেকে জল ছাড়ার কথা জানত। গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে প্রথম চিঠিটি লেখেন মমতা। ঘটনাপ্রবাহ বলছে, তার তিন দিন আগে ১৭ সেপ্টেম্বর রাজ্যে ‘বন্যা পরিস্থিতি’ তৈরি হতে পারে বলে আটটি জেলাকে সতর্ক করেছিল নবান্ন। ১৭ তারিখের মেমো বলছে, ওই দিন হাওড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুর, দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার জেলাশাসকদের মেমো পাঠায় রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। সেখানে এটা উল্লেখ করা ছিল যে, ডিভিআরআরসি এবং সিডব্লিউসি জানিয়েছে, আবহাওয়ার কারণে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারে জলস্তর দ্রুত বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ডিভিআরআরসি আড়াই লক্ষ কিউসেক জল ছাড়বে। তার ফলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে তা মোকাবিলার যাবতীয় ব্যবস্থাও নিয়ে রাখতে বলা হয় ওই মেমোতে। একই সঙ্গে মেমোতে পরামর্শ দেওয়া হয়, প্লাবিত হতে পারে এমন এলাকার মানুষকে প্রয়োজনে যেন নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়।

বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের ওই মেমোতে বলা হয়েছিল যে, কংসাবতী বাঁধ থেকেও জল ছাড়া হতে পারে। তেমন হলে পূর্ব মেদিনীপুরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হবে। কংসাবতী বাঁধের সঙ্গে ডিভিসি-ও জল ছাড়ায় হলদি ও রূপনারায়ণের জল স্তর বাড়বে। এমন ‘সতর্কতা’ জেলায় জেলায় পাঠানোর পরেও কেন রাজ্য সরকার ডিভিসি কিছু জানায়নি বলে দাবি করছে? মঙ্গলবার এই প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, ‘‘ডিভিসি রাজ্যকে জানিয়েছিল না জানায়নি, তা আমি জানি না। তবে কোনও রকম সতর্কতা জারি হলেই আমরা প্রস্তুতি নিতে বলি। শুধু সেই সময়েই নয়, মে মাস থেকেই আমার দফতরে বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।’’

ডিভিসির এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রয়োজন হলে জল ছাড়তেই হয়। সেটা কমিটিই ঠিক করে। চেয়ারম্যানের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কথা বলে কিছু বদলাতে পারেন না। আর এ-ও তো সত্যি যে, রাজ্যের সব ক’টি বাঁধ ও জলাধার থেকে ওই সময়ে প্রচুর জল ছাড়া হয়েছিল।’’ ওই কর্তা এমনও দাবি করেন যে, কংসাবতীর মুকুটমণিপুর বাঁধ থেকে জল ছাড়ার জন্যই বানভাসি হয়েছে ঘাটাল। তাঁর আরও অভিমত, ‘বিতর্ক’ তৈরি হতেই যে ভাবে রাজ্যের আধিকারিকেরা কমিটি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন, সেটিও সঠিক পদ্ধতি নয়। প্রসঙ্গত, ডিভিসি-র বোর্ড থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রাজ্যের বিদ্যুৎ সচিব শান্তনু বসু। তাঁর বক্তব্য জানতে মঙ্গলবার শান্তনুর সঙ্গে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগ করা চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি ফোন ধরেননি। মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব মেলেনি।

সাম্প্রতিক বন্যাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ‘ম্যান মেড’ বলে দাবি করে ডিভিসিকে দোষারোপ করার পরেই পাল্টা সরব হয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য নেতারা। এমনকি, ‘অসত্য’ প্রচার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। ডিভিসি ছাড়াও রাজ্যের অধীনে থাকা বাঁধ ও জলধারের জল ছাড়ার জন্য রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে দাবি করা হয়। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী একে ম্যান মেড বন্যা বলেছেন। আমরা বলছি, এটা উওম্যান মেড বন্যা। রাজ্যের জলাধারগুলির জলধারণ ক্ষমতা বিপদসীমা পার করার আগেই জল ছাড়া শুরু করে। আরজি কর-কাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরাতেই এই অপচেষ্টা এবং বাংলার মানুষের দুর্ভোগ।’’

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বীরভূমের বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকের পরেও বন্যা নিয়ে ডিভিসি-কে আক্রমণ করেছেন মমতা। সেই প্রসঙ্গ টেনে জগন্নাথ বলেন, ‘‘বীরভূমে তো ভেসেছে ময়ূরাক্ষীর জলে। সেটা তো ম্যাসাঞ্জোর বাঁধ থেকে জল ছাড়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে ১০টি জেলায় বন্যার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ডিভিসি একা জল ছাড়লে সেটা কখনও সম্ভব নয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE