ফাইল চিত্র।
সরকার জমি বিক্রি করছে এক দরে। তার পর সেই জমির উপরে স্ট্যাম্প ডিউটি আদায় করছে তার থেকে বেশি দরে। এ নিয়ে শিল্প মহলের অনুযোগ দীর্ঘদিনের। এ বার সেই সমস্যা কাটাতে উদ্যোগী হল নবান্ন। কী ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় তা ঠিক করতে সচিব স্তরের একটি কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে শিল্পের জন্য এক ছটাকও জমি অধিগ্রহণ না-করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। শিল্পপতিদের বলা হয় হয় সরাসরি জমি মালিকদের কাছ থেকে জমি কিনে নিতে হবে, না হয় জমি নিতে হবে সরকারি জমি ব্যাঙ্ক থেকে। সড়ক বা রেল পথ নির্মাণের ক্ষেত্রে অবশ্য এখনও সংশ্লিষ্ট অধিগ্রহণ আইন মোতাবেক জমি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু স্ট্যাম্প ডিউটি সংক্রান্ত সমস্যা সব ক্ষেত্রেই।
সমস্যাটা ঠিক কী?
নবান্ন সূত্র বলছে, স্ট্যাম্প ডিউটির ফাঁকি রুখতে বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট-বাড়ি-জমির দাম নির্দিষ্ট করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। তার থেকে কম দামে সম্পত্তি কিনলেও স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হবে সরকারি নির্ধারিত দরেই। এখন সরকারি ল্যান্ড ব্যাঙ্ক থেকে জমি কিনলেও দেখা যাচ্ছে, তার দাম ও সেই এলাকায় সরকার নির্ধারিত দামের মধ্যে ফারাক রয়েছে। উদাহরণ দিয়ে নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘ধরা যাক, কেউ ল্যান্ড ব্যাঙ্ক থেকে ৫ লক্ষ টাকা একর দরে জমি কিনলেন। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে দেখলেন, সরকার নির্ধারিত দর একর-পিছু ৭ লক্ষ টাকা। তখন তাঁকে ৭ লক্ষ টাকা একর দরেই স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হচ্ছে।’’ একই সরকার জমির দু’রকম দর কী ভাবে ঠিক করছে, সেই প্রশ্ন উঠেছে শিল্প মহলে।
কিছু দিন আগে মুখ্যমন্ত্রীর এক প্রশাসনিক বৈঠকে প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন এক উদ্যোগপতি। তাঁর অভিযোগ ছিল, এই ত্রুটির কারণে শিল্পের জন্য জমি কেনার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেছিলেন তিনি।
সরকারি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ এবং সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে জমি কেনার ক্ষেত্রেও একই ধরনের সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ। শিল্পপতিদের একাংশের বক্তব্য, এমনিতেই এ রাজ্যে সরাসরি জমি কেনার বিস্তর ঝামেলা। তার পরে দেখা যাচ্ছে, বাজারচলতি যে দরে জমি কেনা হচ্ছে, তার থেকে সরকার নির্ধারিত দর অনেকটাই বেশি। ফলে স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। তা ছাড়া, সরকারি দর বেশি হওয়ায় প্রশ্ন তুলছে আয়কর বিভাগও। তারা সন্দেহ করছে, আয়কর কম দিতে কেনাবেচার সময় জমির দাম কম করে দেখানো হয়েছে। খানিকটা লেনদেন হয়েছে নগদ টাকায়।
কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকার যে দামে জমি অধিগ্রহণ করছে, হস্তান্তরের সময় তার দাম বেড়ে যাচ্ছে অনেকটাই।
নবান্নের এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘সরকার একটি সূত্র তৈরি করতে চাইছে, যার ভিত্তিতে দামের এই বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে। ভূমি এবং ভূমি সংস্কার দফতরের সচিবকে সেই সূত্র তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy