অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্দোলনে নামতে চলেছে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস। —ফাইল ছবি।
বঙ্গ রাজনীতি যখন আরজি কর-কাণ্ড থেকে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের ‘দ্বন্দ্ব’ নিয়ে আবর্তিত হচ্ছে, তখন তার ‘অক্ষ’ বদলের লক্ষ্যে গা-ঝাড়া দিয়ে নামতে চাইছে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস। প্রত্যাশিত ভাবেই সেই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেবেন অধীররঞ্জন চৌধুরী। ১০০ দিনের কাজ, লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকার অঙ্ক বৃদ্ধি, দিল্লির মতো পুরোহিত ভাতা চালু করা থেকে ভাঙন রোধে সরকারি পদক্ষেপ— এমন একাধিক ‘মানুষের দাবি’ নিয়ে বৃহস্পতিবার জেলাপরিষদ ভবনের সামনে কর্মসূচি করতে চলেছে কংগ্রেস।
আগামী বছর বিধানসভা ভোট। তার আগের বছরটিকে প্রায় সব দলই ‘গা ঘামানোর বছর’ হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে। মুর্শিদাবাদ কংগ্রেসও পথে নেমে মানুষের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়েছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি। ১৯৪৮ সালের ওই দিনেই মহত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিলেন নাথুরাম গডসে। গান্ধীহত্যার দিন সারা দেশেই সেই সংক্রান্ত কর্মসূচি রয়েছে কংগ্রেসের। তবে অধীরের জেলার কংগ্রেস ওই দিন ‘মানুষের দাবি’ নিয়ে আন্দোলনের পথে যেতে চাইছে।
কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, আরজি কর থেকে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব, শাসকদলের হাতে শাসকদলের নেতাদের খুন হওয়া থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি— এখন এ সব নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। ফলে আড়ালে চলে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের দাবি। সেই দাবি নিয়েই জেলা পরিষদ অভিযানের কর্মসূচি নিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস। নামে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের কর্মসূচি হলেও আসলে এটি অধীরেরই কর্মসূচি। পাঁচ বারের সাংসদ অধীর গত লোকসভা ভোটে বহরমপুরে হেরে গিয়েছেন। লোকসভা ভোটের কয়েক মাস পরেই এসে পড়েছিল আরজি করের ঘটনা। ফলে রাজ্যের রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছিল ওই ঘটনা ঘিরেই। সে দিক দিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের এই কর্মসূচি অধীরের বিরোধী রাজনীতিতে ‘প্রত্যাবর্তন’ করার পদক্ষেপও বটে। যে কর্মসূচি বলছে, হেরে গেলেও লোকসভায় কংগ্রেসের প্রাক্তন দলনেতা এবং প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি ময়দান ছেড়ে যাননি।
১০০ দিনের কাজে কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’ নিয়ে রাজ্য সরকার কেন আদালতে যাচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অধীর। তাঁর বক্তব্য, ‘‘১০০ দিনের কাজ একটা অধিকার। বাংলার মানুষের সেই অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। রাজ্য বলছে, কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। কেন্দ্র বলছে, রাজ্য হিসাব দিচ্ছে না। এর মধ্যে আসল যেটা, সেটা হল বাংলার মানুষ কাজ পাচ্ছেন না।’’ অধীরের প্রশ্ন, ‘‘সব কিছু নিয়ে তো রাজ্য সরকার কোর্টে যায়! মানুষের করের টাকায় দামি দামি আইনজীবী দাঁড় করায়! ১০০ দিনের কাজ নিয়ে কেন মামলা নেই?’’
লক্ষ্মীর ভান্ডারের অর্থ বৃদ্ধি করে আড়াই হাজার টাকা করার দাবি তুলবে কংগ্রেস। তাদের প্রশ্ন, পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ড যদি অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়েও আড়াই হাজার টাকা দিতে পারে, তা হলে বাংলা নয় কেন? পাশাপাশিই কংগ্রেসের বক্তব্য, মুসলিমদের তৃণমূল ‘ভোট ব্যাঙ্ক’ হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে। ইমাম এবং মোয়াজ্জেমদের যে ভাতা রাজ্য সরকার দেয়, সেই টাকার অঙ্কও বৃদ্ধি করার দাবি করছে কংগ্রেস। কিছু দিনের মধ্যেই দিল্লিতে বিধানসভা ভোট। সেই ভোটের আগে আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল পুরোহিতদের জন্য মাসিক ১৮ হাজার টাকার ভাতা ঘোষণা করেছেন। কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গেও পুরোহিতদের জন্য ভাতা চালুর দাবি জানাবে। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছে কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, ভাঙন নিয়ে বাজেট বরাদ্দ হলেও জেলা পরিষদ নানা ভাবে টেন্ডার (দরপত্র) ডেকেও বাতিল করে দিচ্ছে। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। বাংলায় নতুন করে বেকার ভাতাও চালু করার দাবি তুলেছে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের দাবি, রাজ্যে ইমামদের মাসিক ১০ হাজার টাকা, মোয়াজ্জেমদের মাসিক সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, আবাস যোজনায় ৪ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার দাবিও তুলছে কংগ্রেস। উল্লেখ্য, এখন রাজ্য সরকার আবাস যোজনায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেয়। অধীরের বক্তব্য, ‘‘কর্নাটক সরকার ৪ লক্ষ টাকা দিতে পারলে বাংলার সরকার দেবে না কেন?’’
তৃণমূল যদিও কংগ্রেসের দাবি এবং তাদের ঘোষিত কর্মসূচিকে ‘নাটক’ বলে কটাক্ষ করেছে। শাসকদলের নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘বিভিন্ন খাতে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না বলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। মানুষ সেটা বুঝতে পারছেন। কংগ্রেস আসলে নাটক করতে চাইছে। মানুষ সব বোঝেন। তাই তো আট মাস আগে লোকসভা ভোটে অধীরবাবু তৃতীয় হয়েছিলেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy