—ফাইল চিত্র।
বাবার পারলৌকিক কাজ করতে বসেছিল দুই ছেলে প্রীতম ও অনুভব। মঙ্গলবার তখন সকাল সাড়ে ১০টা। সন্দেশখালির ভাঙিপাড়ায় নিহত প্রদীপ মণ্ডলের বাড়িতে পৌঁছলেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। তাঁকে দেখেই আশেপাশের ভিড় থেকে উঠল ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি।
শনিবার বিকেলে দুই বিজেপি কর্মী এবং তৃণমূলের এক কর্মী নিহত হওয়ার পরে বিজেপির প্রতিনিধি দল ছাড়াও সন্দেশখালির ভাঙিপাড়ায় ইতিমধ্যেই ঘুরে গিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর ছ’জনের একটি দল। মঙ্গলবার রাজ্য গোয়েন্দারা অবশ্য গ্রামে ঢুকতে গেলে বিজেপির বাধার মুখে পড়ে ফিরে আসেন বলে অভিযোগ।
সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো বলেন, ‘‘বিজেপি পরিকল্পনামাফিক এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা এখন পুরো ব্যাপারটা জিইয়ে রেখে এলাকা অশান্ত করতে চাইছে। অনেক দিন ধরেই ওই এলাকায় প্রচুর অস্ত্র মজুত করেছে বিজেপি। বেআইনি অস্ত্র পাছে উদ্ধার হয়, তা আটকাতেই রাজ্যের তদন্তকারী দলকে গ্রামে ঢুকতে দিচ্ছে না ওরা।’’
অন্য দিকে, মুকুল রায়ের দাবি, সন্দেশখালির ভাঙিপাড়ায় সে দিন কোনও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। ছেলেরা বাড়িতে ঘুমোচ্ছিল। তাদের বাড়ি থেকে ডেকে তুলে মারতে মারতে মেছোভেড়ির দিকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উস্কানিতে এবং শেখ শাজাহানের নেতৃত্বে এই ঘটনা। খুন-খারাপির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর হওয়া উচিত।’’
এ দিন বিজেপি নেতাদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত প্রদীপ মণ্ডলের স্ত্রী পদ্মা। প্রীতম ও অনুভব দুই ছেলেকে পাশে নিয়ে বলেন, ‘‘কী এমন দোষ করেছিলেন উনি? ঘর থেকে টেনে বার করে কুপিয়ে-গুলি করে খুন করল শাজাহান-বাহিনী।’’ দোষীরা চরম শাস্তি পাবে বলে সান্ত্বনা দেন মুকুল। বলেন, ‘‘ছেলেরা যেন ভাল করে পড়াশোনা করে। আমরা সকলে পাশে আছি।’’
প্রদীপের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিজেপি নেতারা যান পাশেই দলের আর এক নিহত কর্মী সুকান্ত মণ্ডলের বাড়িতে। প্রদীপ-সুকান্তরা সম্পর্কে দাদা-ভাই। সুকান্তর মা কিনুবালা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘বিজেপি করার অপরাধে ছেলেটাকে ওরা বাঁচতে দিল না। যারা ছেলেকে খুন করল, তাদের যেন শাস্তি হয়।’’
মুকুলের দাবি, শনিবার গোলমালের পর থেকে নিখোঁজ দেবদাস মণ্ডল-সহ তাঁদের দলের আরও চার কর্মী। তাঁদের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন মুকুল রায়, গণেশ ঘোষ-সহ বিজেপি নেতারা।
প্রদীপের স্ত্রী পদ্মা ইতিমধ্যেই ব্লক তৃণমূল সভাপতি শেখ শাজাহান, দলের নেতা কাদের মোল্লা-সহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন থানায়। অন্য দিকে, রাজবাড়ি এলাকার নিহত তৃণমূল কর্মী কায়ুম মোল্লার বাবা লিয়াকত আলি মোল্লা বিজেপি নেতা তপন মণ্ডল, কৌশিক মণ্ডল-সহ ২৫ জনের নামে এফআইআর করেছেন। পুলিশও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুন, অস্ত্র আইন-সহ একাধিক ধারা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মুকুল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ না পাওয়ায় পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে পারছে না। এই পুলিশের তদন্তে আমাদের কোনও আস্থা নেই।’’ মুকুল জানান, সন্দেশখালির গ্রামের পরিস্থিতি তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাবেন।
এ দিনই বাদুড়িয়ায় ইছামতীর চরে পাঁচটি কাটা মাংস বোঝাই বস্তা উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায়। ওই মাংস মানুষের বলে গুজব রটে। ঘটনাটির কথা উল্লেখ করে মুকুল পরে বলেন, ‘‘এটা বেশ সন্দেহজনক। তদন্ত হওয়া উচিত।’’ পুলিশ বস্তা উদ্ধার করে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরে নিয়ে যায়। তদন্তকারীরা পরে দাবি করেন, বস্তায় পশুর মাংস ছিল। তা নদীপথে বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছিল। সীমান্তরক্ষীদের নজরে পড়ায় দুষ্কৃতীরা বস্তা ফেলে পালায়।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy