Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

খুনের মামলায় মুকুলকে টানা দু’ঘণ্টা জেরা

বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে বুধবার দুবরাজপুর থানায় ডেকে জেরা করল বীরভূম পুলিশ।

দুবরাজপুর থানা থেকে বেরোছেন মুকুল রায়। নিজস্ব চিত্র

দুবরাজপুর থানা থেকে বেরোছেন মুকুল রায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:২৫
Share: Save:

লাভপুরে সিপিএম সমর্থক তিন ভাইকে খুনের মামলায় ‘অভিযুক্ত’ বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে বুধবার দুবরাজপুর থানায় ডেকে জেরা করল বীরভূম পুলিশ। এসডিপিও (বোলপুর), সিআই (নানুর), ওসি (লাভপুর) এবং ওসি (ডিইবি)-র উপস্থিতিতে এ দিন দুপুর দুটো থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত টানা দু’ঘণ্টা জেরা করা হয় মুকুলবাবুকে। তবে জেরায় ঠিক কী উঠে এসেছে, তা নিয়ে পুলিশ গোপনীয়তা বজায় রেখেছে। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশেই মুকুলবাবুকে জেরা করা হয়েছে। এটা রুটিন জিজ্ঞাসাবাদ।’’

লাভপুরের এই হত্যা-মামলায় মুকুল রায়ের জড়ানোকে আগেই ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ বলে অভিযোগ করেছিল বিজেপি। এ দিন মুকুলবাবুও দাবি করেন, ‘‘এই মামলা সম্বন্ধে কিচ্ছু জানি না। শাসকদলের নির্দেশে পুলিশ জোর করে আমার নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। অবশ্য পুলিশের উপায় নেই। তৃণমূলের কেনও নির্দেশ অমান্য করলে পুলিশ আধিকারিকে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। সেই ভয়েই আমার নাম ঢোকানো হয়েছে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, বাংলায় গণতন্ত্র নেই। মুকুলবাবুর বক্তব্যের

প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘এটা পুলিশের বিষয়, এই নিয়ে কোনও কিছু বলব না।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১০ সালে বালিরঘাটের সালিশি সভায় নিজের বাড়িতে ডেকে লাভপুরের বুনিয়াডাঙা গ্রামের সিপিএম সমর্থক তিন ভাইকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে তৎকালীন তৃণমূল নেতা মনিরুল ইসলাম ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগের পরে মনিরুল গ্রেফতার হলেও পরে জামিন পান। ২০১৪-তে ওই মামলায় পুলিশ মনিরুল-সহ ২২ জনের নাম বাদ দিয়ে বোলপুর কোর্টে চার্জশিট জমা দেয়। গত বছর লোকসভা ভোটের পরে দিল্লিতে মুকুল রায়ের হাত ধরেই বিজেপি-তে যোগ দেন মনিরুল। তার কিছু পরে হাইকোর্টে পুনর্তদন্তের আবেদন জানায় নিহতদের পরিবার। গত সেপ্টেম্বরে হাইকোর্ট জেলা পুলিশ সুপারের তদারকিতে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয়। ডিসেম্বরে ফের তদন্ত করে বোলপুর আদালতে ‘সাপ্লিমেন্টারি’ চার্জশিট জমা দেয় লাভপুর থানা। ওই চার্জশিটেই মনিরুল ইসলামের সঙ্গে খুনে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মুকুলবাবুর নাম দেয় বীরভূম পুলিশ।

চার্জশিট জমার পরেই বোলপুর আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে মুকুল ও মনিরুলের নামে। হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন মুকুলবাবু। যদিও আবেদন ক্রটি থাকায় প্রথমে তা খারিজ করে দিয়েছিল আদালত। ১৬ ডিসেম্বর ফের আগাম জামিন মঞ্জুর না হলেও হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৫ সপ্তাহের রক্ষা কবচ দেয় ওই বিজেপি নেতাকে। নির্দেশে বলা হয়, মুকুলবাবুকে এই সময়কালের মধ্যে গ্রেফতার করা যাবে না। তিনি লাভপুর, বোলপুর থানা এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে, পলিশ তাঁকে ডাকলে তিনি তদন্তে সহযোগিতা করবেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, সেই নির্দেশের পরেই মুকুলবাবুকে দুবরাজপুর থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল। এ দিন বেলা সওয়া ১টা নাগাদ প্রথমে দুবরাজপুরে বিজেপি কার্যালয়ে আসেন মুকুলবাবু। সেখান কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে বেলা দুটো নাগাদ সেখান থেকে হেঁটে দলীয় নেতা-কর্মী ও নিরাপত্তা রক্ষীদের নিয়ে দুবরাজপুর থানায় যান। জেরার পরে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ ভাল ব্যবহার করেছে। কোনও অসুবিধা নেই।’’

যদিও বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘হেনস্থা করার জন্যই ৯ বছর আগের ওই মামলায় মুকুল রায়ের নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই মামলার সঙ্গে ওঁর কোনও যোগই নেই। যে পুলিশ প্রথম বার চার্জশিট থেকে মনিরুলের নাম বাদ দিয়েছিল, সেই পুলিশই ফের তাঁর নাম যোগ করল। মনিরুল দলবদল না-করলে এটা হত না।’’ জেলা তৃণমূলের এক নেতা পাল্টা বলছেন, ‘‘তদন্তে যদি কারও নাম আসে, পুলিশ তাদের নাম তো চার্জশিটে দিতেই পারে! এর মধ্যে অন্য কোনও উদ্দেশ্য কেন খোঁজা হচ্ছে, জানি না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mukul Roy Murder Charge Dudrajpur Police Station
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy