দিব্যেন্দু অধিকারী
সড়ক পথে দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। কাঁথি থেকে হলদিয়ার ওই দূরত্বও অতিক্রম করতে সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী অপারগ বলে অভিযোগ তুললেন তৃণমূলেরই শ্রমিক সংগঠনের সদস্যেরা। আর সেই অভিযোগকে হাতিয়ার করেই আইএনটিটিইউসি পরিচালিত ‘হলদিয়া রিফাইনারি টাউনশিপ মেইনটেনেন্স ওয়ার্কার্স ইউনিয়নে’র সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল দিব্যেন্দুকে।
গত দু’বছর ওই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন দিব্যেন্দু। সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ৩৫০। স্থানীয় সূত্রের খবর, গত ১৯ অগস্ট আইওসি’র টাউনশিপের রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের ওই শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অভিযোগ, সেখানে সংখ্যা গরিষ্ঠ কর্মীদের সিদ্ধান্ত মতোই দিব্যেন্দুকে সরিয়ে কার্যকরী সভাপতি তথা হলদিয়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ মণ্ডলকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগঠনের এক সদস্য বলেন, ‘‘সাংসদ কাঁথিতে বসে হলদিয়ার ভাল-মন্দের খবর রাখতে পারছিলেন না। বিপদে-আপদে পড়লে কার্যকরী সভাপতির কাছেই ছুটে যেতে হত। তাই সভায় সংখ্যা গরিষ্ঠদের মতকে প্রাধান্য দিয়ে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ নতুন সভাপতি দেবপ্রসাদও বলছেন, ‘‘কার্যকরী সভাপতি হিসাবে সব দায়িত্বই পালন করেছি। ভবিষ্যতেও তা পালন করার চেষ্টা করব। এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই।’’
জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের অবশ্য মত, শিল্পশহরেও রাশ আলগা অধিকারী পরিবারের। তারই প্রমাণ কর্মী সংগঠনের সভাপতি পদ থেকে দিব্যেন্দুকে সরিয়ে দেওয়া। তবে ওই বৈঠকের কোনও বৈধতা নেই বলেই দাবি করছেন আইএনটিটিএইসি-র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কার্যকরী সভাপতি শিবনাথ সরকার। তাঁর মতে, ‘‘বৈঠকটি সম্পূর্ণ অবৈধ। দলীয় নির্দেশিকা না মেনে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সভাপতি পরিবর্তন করা হয়েছে।’’
দিব্যেন্দুও বলছেন, ‘‘সভাপতিকে না জানিয়েই এই বৈঠক করা হয়েছে— যা শ্রম আইন বিরোধী, অবৈধ। দলের ট্রেড ইউনিয়নের ঊর্দ্ধতন নেতৃত্বকে জানিয়েছি। আমি শনিবার গিয়ে সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলব। আর এখন যিনি সভাপতি হয়েছেন, তিনি তো প্রতারক।’’
কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে না জানিয়ে বৈঠক হল কী করে? এর সদুত্তর পাওয়া যায়নি শিবনাথের কাছে।
দিব্যেন্দুর এই পদ হারানো নিয়ে শোরগোলের মধ্যেই পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক পোস্ট ঘিরেও রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। মনীষী এবং বিদ্বজ্জনদের জন্ম-মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে শুভেন্দুর ফেসবুকে পেজে বরাবরই পোস্ট থাকে। গত ১৯ জুলাই পর্যন্ত সেই সব পোস্টে শুভেন্দু অধিকারীকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবহণ এবং সেচ ও জলপথ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক পোস্টগুলিতে শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের মন্ত্রী হিসাবে লেখা থাকায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বস্তুত, গত কয়েক মাস ধরেই দলহীন সমান্তরাল কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে শুভেন্দুকে। তাঁর অনুগামীরাও নানা কর্মসূচিতে পথে নামছেন শুধু শুভেন্দুকে সামনে রেখেই। কিছু দিন আগে ছবি-সহ শুভেন্দু বন্দনার হোর্ডিংয়ে ছয়লাপ হয়েছিল তমলুকের পথঘাট।
ফেসবুক পোস্টে মন্ত্রীর দফতর উল্লেখ না থাকা নিয়ে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ নেতা বলে পরিচিত তথা নন্দীগ্রাম ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাদ পাল বলেন, ‘ওঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট যাঁরা নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁরা সময়ের অভাবে হয়তো সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে পোস্ট করেছেন। এ ব্যাপারে বিতর্ক অহেতুক।’’ তবে শুভেন্দুর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy