‘দ্য টেলিগ্রাফ ন্যাশনাল ডিবেট’ শেষে (বাঁ দিক থেকে) স্বরা ভাস্কর, ঐশী ঘোষ, কুণাল সরকার, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, এবিপি প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি এবং সিইও ডিডি পুরকায়স্থ, অভিজিৎ চক্রবর্তী, শিশির বাজোরিয়া এবং সুশীল পণ্ডিত। শনিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
হয় বিরোধিতা করবেন এবং দেশ-বিরোধী তকমা পাবেন। নয়তো মুখে কুলুপ এঁটে সব মেনে নিতে থাকবেন। আপনি কোন দিকে?
বেছে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছিল ‘দ্য টেলিগ্রাফ ন্যাশনাল ডিবেট’। কলকাতা রায় দিল, তারা প্রতিবাদের পক্ষে। এই শহর আরও জানাল, প্রতিবাদ মানেই দেশ-বিরোধিতা— দেশের শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া এই ‘তকমা’ তারা মানে না।
চিকিৎসক কুণাল সরকারের সঞ্চালনায় ক্যালকাটা ক্লাবের লনে শনিবারের সন্ধ্যায় বিতর্ক-সভা সরাসরি বিষয় থেকে সরে গিয়ে কখনও কখনও চেহারা নিল রাজনৈতিক তরজার। এবং রাজনীতির মতোই, এখানেও শেষ কথা এল জনতার মধ্যে থেকেই।
বিতর্কের বিষয় ছিল, আজকের ভারতে ভিন্ন মত হলেই তা দেশ-বিরোধী। প্রস্তাবের পক্ষে পরপর বক্তা ঐশী ঘোষ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্বরা ভাস্কর। বিপক্ষে সুশীল পণ্ডিত, অভিজিৎ চক্রবর্তী ও শিশির বাজোরিয়া। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-উত্তর ভারতে জাতীয় রাজনীতির সমীকরণ এখন ঠিক যে রকম, ক্যালকাটা ক্লাবে এই বিতর্ক-সভার পক্ষবিন্যাসেও অবিকল তারই ছাপ! বিতর্ক গড়াল সেই ছক মেনেই।
কে দেশ-বিরোধী আর কে নয়, ব্যাপারে শেষ কথা মানুষই বলবে— রাজনীতির পাঠ মেনে এই কথা বলে রেখেছিলেন যুব তৃণমূল সভাপতি ও সাংসদ অভিষেক। বিতর্ক শেষে হাত তুলে উপস্থিত শ্রোতাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ তাঁর মতেই সায় দিলেন। এবং এই বিষয়েও তাঁরা একমত যে, এ বারের বিতর্কের আসরে বেশি নজর কেড়েছেন অভিষেকই। প্রথমে জনতাকে প্রশ্নের ছলে, হাল্কা চালে নিজের মত এগিয়ে নিয়ে গিয়ে পরে বিপক্ষ মতের জবাবে আগ্রাসন বাড়িয়ে টিমকে জয়ের জায়গায় পৌঁছে দিলেন তিনি। ‘‘কলকাতায় বিতর্ক-সভা হচ্ছে, রাজ্যপাল জানেন তো? নইলে তিনি আবার অপমানিত হতে পারেন!’— তপ্ত তর্কের মাঝে অভিষেকের এই মন্তব্যে সহাস্যে সমর্থন জানাল সমবেত জনতা।
হিন্দির সঙ্গে ইংরেজি মিশিয়ে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী তাঁর জোরালো বক্তৃতা আবদ্ধ রেখেছিলেন মূলত ক্যাম্পাস এবং ছাত্র-রাজনীতিকে ঘিরেই। ঐশী জানাতে ভোলেননি, ‘‘আমরা কখনও বলিনি, পাকিস্তান আমাদের আদর্শ রাষ্ট্র। যে দেশে গণতন্ত্র নেই, ধর্মনিরপেক্ষতা নেই, সেই দেশ নিয়ে আমাদের কোনও মোহ নেই। তবু প্রতিবাদী আন্দোলনকে বদনাম করার জন্য পাকিস্তান নামটা টেনে আনা হয়।’’ অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক ও ওমর আবদুল্লা এবং মেহবুবা মুফতিকে কেন জন নিরাপত্তা আইনে আটকে রাখা হয়েছে?
বিপক্ষের হয়ে ব্যাট ধরে প্রাবন্ধিক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার সুশীল সোভিয়েত ইউনিয়ন, উত্তর কোরিয়া, চিন, কম্বোডিয়ার কথা তুলে যুক্তি দেন, কমিউনিস্ট শাসকেরা দেশে দেশে কালে কালে ভিন্ন মতের কণ্ঠরোধ করেছেন। এখন বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসীদের কাছ থেকে ভিন্ন মতের জ্ঞান নেওয়া অর্থহীন! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে বিতর্কে জড়ানো প্রাক্তন উপাচার্য অভিজিৎবাবুর দাবি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-বিদ্রোহ হচ্ছে ‘বহিরাগত’ মদতে এবং তার ধাক্কায় শিক্ষার মূল বিষয়গুলি চাপা পড়ে যাচ্ছে।
প্রস্তাবের পক্ষে বলতে উঠে বলিউডের অভিনেত্রী স্বরাকে অনেকটা সময় ব্যয় করতে হল সুশীল-অভিজিতের দাবির জবাব দিতে। ঐশীদের উপরে হামলাকারীরা কেন অধরা, কেন জামিয়া মিলিয়ার ক্যাম্পাসে দিল্লি পুলিশ পড়়ুয়াদের মারল, জানতে চাইলেন স্বরা। অভিজিৎবাবুকে অভিষেক স্মরণ করিয়ে দিলেন, ‘‘ছাত্রদের ভিন্ন মতের জন্যই আপনাকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল, ভুলে যাবেন না!’’
শিল্পপতি এবং সিপিএম থেকে বিজেপিতে আসা শিশির বাজোরিয়া বাংলার ঘটনার উপরেই আলো ফেলতে চাইলেন বেশি। তাঁর যুক্তি, ‘‘ভিন্ন মত কী ভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে, সেটাই আসল কথা। যেখানে সুদীপ্ত গুপ্ত পুলিশি হেফাজতে মারা যায়, ব্যঙ্গচিত্র পাঠিয়ে অম্বিকেশ মহাপাত্র জেলে যান, সিএএ-র পক্ষে সভা বানচাল হয়, সেখানে ভিন্ন মত নিয়ে এত কথা!’’ শেষে উপস্থিত জনতার হাত গুনতিতে জয় হয় বিতর্কের প্রস্তাবেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy