Advertisement
২২ জানুয়ারি ২০২৫

ট্রমা কেয়ার করেও বাড়ছে না অঙ্গদানের সংখ্যা

গত ১৫ জুলাই ১২০ শয্যার আধুনিক পরিকাঠামোযুক্ত এই ট্রমা কেয়ার ইউনিট চালু হয়েছিল। চার দিনের মধ্যেই সব শয্যা ভর্তি হয়ে যায়।

এসএসকেএম। ফাইল চিত্র।

এসএসকেএম। ফাইল চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৫৬
Share: Save:

প্রায় তিন মাস আগে এসএসকেএম হাসপাতালে চালু হয়েছিল ট্রমা কেয়ার সেন্টার। সে সময়ে স্বাস্থ্য দফতরের মূলত দু’টি উদ্দেশ্য ছিল— দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের মৃত্যুহার কমানো এবং মস্তিষ্কের মৃত্যু হওয়া রোগীদের থেকে দান করা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সংখ্যাবৃদ্ধি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত প্রথম লক্ষ্যে নজরকাড়া সাফল্য মিললেও মস্তিষ্কের মৃত্যু হওয়া রোগীর আত্মীয়দের রোগীর অঙ্গদানে রাজি করাতে সমস্যায় পড়ছেন চিকিৎসকেরা। পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন মাসের মধ্যে মাত্র
এক জন রোগীর থেকে দান করা যকৃৎ ও কিডনি অন্যের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

গত ১৫ জুলাই ১২০ শয্যার আধুনিক পরিকাঠামোযুক্ত এই ট্রমা কেয়ার ইউনিট চালু হয়েছিল। চার দিনের মধ্যেই সব শয্যা ভর্তি হয়ে যায়। এক মাস পরে এই বিভাগে ডেথ অডিট করে দেখা যায়, এর মধ্যে জরুরি বিভাগে এসেছিলেন ১,১৮০ জন রোগী। যার মধ্যে
ভর্তি হন ৪৫০ জন এবং মারা যান ৮০ জন। অর্থাৎ মৃত্যুর হার প্রায় ১৭ শতাংশ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ট্রমা কেয়ার ইউনিট চালুর আগে এসএসকেএমে আসা, দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের মৃত্যু-হার হার ছিল প্রায় ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ মৃত্যু-হার এক লাফে কমেছে ১০ শতাংশ। আবার ট্রমা কেয়ার চালুর দ্বিতীয় মাসে এসএসকেএমে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের মধ্যে মৃত্যু-হার ছিল ১৪ শতাংশ, যা আগের থেকে প্রায় ১৩ শতাংশ কম। এই পরিসংখ্যানকে ট্রমা কেয়ারের বিশেষ সাফল্য হিসাবে দেখছে স্বাস্থ্য দফতর।

ট্রমা কেয়ারের অন্যতম চিকিৎসক মাখনলাল সাহার কথায়, ‘‘এখানে ছ’টি অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে চারটি চালু হয়েছে। এর ইমার্জেন্সিতে আলাদা করে পাঁচটি এবং ওয়ার্ডে ১৭টি ভেন্টিলেটর রয়েছে। রয়েছে ২০টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট। আহতরা এসেই ভেন্টিলেটর পেয়ে যান। ২৪ ঘণ্টা জরুরি অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে। এই পরিকাঠামোতেই মৃত্যু-হার অনেকটা কমেছে।’’

কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, ট্রমা কেয়ার চালু হলে কিছু রোগীর ব্রেন ডেথ ঘোষণার পরে তাঁদের আত্মীয়দের বুঝিয়ে অঙ্গ সংগ্রহ ও প্রতিস্থাপন করা যাবে বলে মনে করা হয়েছিল। গত তিন মাসে তিনটি ব্রেন ডেথ-এর ঘটনা ঘটে, যে ক্ষেত্রে অঙ্গ নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু তার মধ্যে দু’জনের বাড়ির লোক অঙ্গ দিতে অস্বীকার করেন। দু’জন কাউন্সেলর অনেক চেষ্টা করেও তাঁদের মন বদলাতে পারেননি।

এ প্রসঙ্গে মাখনলালবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘গত ২৫ সেপ্টেম্বর মোটরবাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ২০ বছরের এক তরুণকে ট্রমা কেয়ারে ভর্তি করা হয়। বারুইপুরের বাসিন্দা ওই ছেলেটির ‘ব্রেনস্টেম ডেথ’ ঘোষণা করা হয় ২৮ তারিখ। পরের দিন আত্মীয়দের সেই কথা জানিয়ে অঙ্গদানের কথা বলা হয়। তাঁরা শেষ পর্যন্ত কিডনি ও যকৃৎ দিতে রাজি হলেও হৃদ্‌যন্ত্র দিতে চাননি।’’ হাসপাতালের এক কাউন্সেলরের বক্তব্য, ‘‘এর আগে ২৯ বছরের এক তরুণী ও ২২ বছরের এক তরুণের ব্রেন ডেথ ঘোষণার পরে বাড়ির লোক নানা ধর্মীয় ও সামাজিক কারণ দেখিয়ে অঙ্গদান থেকে পিছিয়ে গিয়েছিলেন।’’ এর ফলে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে গত তিন মাসে অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে মাত্র একটি।

তবে হাসপাতালের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘এখনই ভেঙে পড়লে চলবে না। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আশা করা যায়, মানুষের শুভবুদ্ধি হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Trauma Care Organ Donation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy