বৈপরীত্য: (বাঁ দিকে) হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও সুরুচি সঙ্ঘের মণ্ডপের ভিতরে ঢুকেই চলছে প্রতিমা দর্শন। (ডান দিকে) ১০ মিটারের দূরত্ব মাপার কাজ চলছে উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেনের মণ্ডপে। মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ
শহরের মণ্ডপগুলির ভৌগোলিক অবস্থানগত পার্থক্য বুঝে যদি আদালত তার রায় বদলায়! কলকাতা হাইকোর্টের দর্শকশূন্য পুজো করার ‘ঐতিহাসিক’ রায়ের পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে এই আশাতেই বুক বাঁধছে বিভিন্ন পুজো কমিটি। আজ, বুধবার সেই শুনানির আগে মঙ্গলবার বহু পুজোকর্তাই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “আদালত যদি পুরনো রায় বহাল রাখে, অমান্য করতে পারব না! কিন্তু ১০ মিটার দূরের ব্যারিকেডের সামনে ভিড় হলে তার দায়ও নিতে পারব না।” কিন্তু ভিড় না হওয়ার ব্যবস্থা করা তো পুজো কমিটিরই নৈতিক দায়িত্ব হওয়া উচিত! এ কথা শুনে এক পুজোকর্তার দাবি, “কোনও কিছু আইনের পথে চলে গেলে আর নৈতিক দায়িত্বের ব্যাপার থাকে না।”
তবে কি আদালতের কড়া নির্দেশের পরেও বেপরোয়া ভাবেই করোনা-কালের দুর্গোৎসব চলবে কলকাতায়? চতুর্থীর রাত পর্যন্ত এর উত্তর মেলেনি। প্রশাসনের কেউ এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেননি। পুলিশের তরফেও আদালতের নির্দেশের পরে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, জানানো হয়নি। কলকাতার পুলিশ কমিশনার শুধু বলেছেন, “আদালতের নির্দেশ অমান্য করার প্রশ্নই ওঠে না। সেটা আইনবিরুদ্ধ কাজ।” মণ্ডপে মণ্ডপে গার্ডরেল দেওয়ার কাজ শুরু হলেও পুলিশও আপাতত তাকিয়ে, আদালত রায় পুনর্বিবেচনা করে অন্য কিছু বলে কি না, সে দিকে।
ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সম্পাদক তথা হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোকর্তা শাশ্বত বসু বললেন, “এই রায়ে সমস্যায় পড়েছে সরু রাস্তার পুজোগুলি।” হাতিবাগান, নলিন সরকার স্ট্রিট, কুমোরটুলি সর্বজনীন, টালা বারোয়ারি, দক্ষিণের সমাজসেবীর মতো পুজোর উল্লেখ করে তিনি বলেন, “হাতিবাগানের পুজো যেখানে হয়, সেই রাস্তা ১৮ মিটার চওড়া।
আরও পড়ুন: হাইকোর্টের রায় মেনে বেলুড় মঠে পুজোর জায়গায় পনেরো জন
এত বছর এক দিক দিয়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করিয়ে অন্য দিক দিয়ে বার করানো হত। কিন্তু এ বার ১০ মিটার আগে ব্যারিকেড দিতে হলে ওই ১৮ মিটারের রাস্তা দিয়েই ঘুরিয়ে লোকজনকে বার করতে হবে। সেটা কি খুব নিরাপদ হবে?” সুরুচি সঙ্ঘের পুজোকর্তা স্বরূপ বিশ্বাসের দাবি, “দশ মিটার দূরে ‘নো এন্ট্রি’ করতে গেলে নিউ আলিপুর থানা, নিউ আলিপুর পোস্ট অফিস, জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অফিস, নিউ আলিপুর মার্কেট— সব বন্ধ করে দিতে হবে। তা হয় নাকি!”
সমাজসেবীর পুজোকর্তা অরিজিৎ মৈত্র আবার বললেন, “ব্যারিকেড করে দিলে দর্শনার্থীরা প্রতিমার মুখই দেখতে পাবেন না! তা করা হলে স্পনসরেরা হাত তুলে নেবেন। আমরা তো ভুগবই, গ্রামের যে ৭৫টি পরিবারের দায়িত্ব এ বার আমরা নিয়েছি, তারাও ভুগবে।” বেলেঘাটার ৩৩ পল্লির পুজোকর্তা পরিমল দে-র আবার চিন্তা, “আদালত পুজো কমিটির মাত্র ২৫ জনকে মণ্ডপে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে ২৫ জনকে বাছব কী করে?” একই বক্তব্য নাকতলা উদয়নের উদ্যোক্তা অঞ্জন দাসের। মুদিয়ালি ক্লাবের পুজোকর্তা মনোজ সাউ আবার বললেন, “পাড়ার মহিলাদের পুজোর কাজে যোগদান আটকাব কী করে? এর মধ্যেই স্পনসরেরা হাত তুলে নিতে শুরু করেছেন। পুজোর পরে তাঁরা টাকা না দিলে শিল্পীদের খরচ কী করে জোগাব, জানি না। আদালতের একই রায় বহাল থাকলে কোনটা আমাদের হাতে থাকবে, জানি না।”
একই হুঁশিয়ারি শিবমন্দিরের পুজোকর্তা পার্থ ঘোষের। তিনি বললেন, “যতটা বিধি মেনে করার, প্রথম থেকেই তা করা হয়েছে। এর পরে ব্যারিকেডের কাছে ভিড় হলে আমাদের হাত নেই সেখানে।” কুমোরটুলি পার্কের পুজোকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য আবার বললেন, “ব্যারিকেডের সামনেও ভিড় হলে সেখান থেকে লোকজনকে সরানো আমাদের কাজ নয়।” বাগবাজারের উদ্যোক্তা গৌতম নিয়োগীর আবার মন্তব্য, “মণ্ডপ করেছি, ঠাকুর করেছি, কিছু স্টলও বসিয়েছি। এর পরে মানুষ চাইলে আসবেন। আমরা কী করব?” একই রকম দায়হীন মন্তব্য চেতলা অগ্রণী এবং দেশপ্রিয় পার্কের পুজোকর্তাদেরও। দেশপ্রিয় পার্কের তরফে সুদীপ্ত কুমার বললেন, “আমাদের অনেক জায়গা পড়ে থাকে। ৩২ ফুটের ব্যারিকেড আগেই করেছি। এর পরে সেই ব্যারিকেডের সামনে ভিড় হলে আমরা দায়িত্ব নেব কী করে?”
আরও পড়ুন: ‘করোনা নিয়ে ভাবছি না, আরও অনেক ঝুঁকি রয়েছে’
সর্বত্রই ভাবখানা এমন, যেন যতটুকু বলা হচ্ছে, বাধ্য হয়ে করে দেওয়া হবে। তার বেশি দায়িত্ব কেউ নেবেন না। পুজোর উদ্যোক্তাদেরই কি এই দায়িত্বের কথা ভেবে পদক্ষেপ করা উচিত ছিল না? আদালতের রায়ের আগেই পুজোয় বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোকর্তা সজল ঘোষ বললেন, “দায় এড়ানোর এই সময়ে আদালতকে কুর্নিশ। রিভিউ পিটিশনের শুনানিতে আরও কড়া নির্দেশিকা আসুক, এটাই চাই। এমন ব্যবস্থা হোক, যেন গার্ডরেলের সামনেও ভিড় না হয়!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy