সকাল থেকেই অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। জল-মিষ্টি সাজানোই ছিল সামনের টেবিলে। দুপুরের দিকে শোভাযাত্রা এসে পৌঁছোতেই সকলের হাতে জলের বোতল, লাড্ডু তুলে দিলেন আকসার হোসেন এবং রিয়াজুল হকেরা । রামনবমীতে রাজ্যের জেলায় জেলায় অস্ত্র মিছিল যেমন দেখা গেল, তেমনই ধরা পড়ল সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের ছবিও। কোথাও আবার রামনবমী উদ্যাপনে শোভাযাত্রায় একসঙ্গে পা মেলাল তৃণমূল এবং বিজেপি।
রবিবার রাজ্য জুড়ে রামনবমী পালন শুরু হয়েছে। কোথায় বিজেপি, কোথায় শাসক তৃণমূলের নেতারা শোভাযাত্রায় যোগ দিয়েছেন। নন্দীগ্রামে রামনবমীর মিছিলে যোগ দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। খড়্গপুরে কর্মসূচি করেছেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। আবার বীরভূমের সিউড়িতে মিছিলে হেঁটেছেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। মালদহের ইংরেজ বাজারে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সকালে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে রামনবমীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তবে শান্তি, সম্প্রীতি রক্ষারও বার্তা দিয়েছেন তিনি।
তেমনই সম্প্রীতির ছবি দেখা গেল বীরভূমের রামপুরহাটে। রামনবমীর শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়া সকলকেই জল-মিষ্টি দিলেন বগটুইবাসী আকসার, রিয়াজুলেরা। দু’জনেই বলেন, ‘‘সম্প্রীতির বার্তা দিতেই আমাদের এই উদ্যোগ।’’ ওই কর্মসূচিতে যোগ দেন রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও। একই ছবি দেখা গেল মালদহের ইংরেজ বাজারেও। সেখানে রামনবমীর শোভাযাত্রায় পুষ্পবৃষ্টি করলেন রহিম শেখেরা। আলিঙ্গন করে মিষ্টিমুখও করানো হল মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের। রহিম বলেন, ‘‘খুব সুন্দর অনুভূতি, সম্প্রীতির অনুভূতি। এটাই ভারতবর্ষ। আমরা সকলে এক। হিন্দু-মুসলিম ভাই-ভাই। আমরা সকলে সম্প্রীতির বার্তা দিতে চাই।’’

উত্তর কলকাতায় রামনবমীর শোভাযাত্রায় কুণাল ঘোষ।
কলকাতায় ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত রামনবমীর শোভাযাত্রায় যোগ দেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। মিছিলে তাঁর সঙ্গে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরাও হেঁটেছেন।
বিরল দৃশ্য দেখা গেল বীরভূমেরই দুবরাজপুরে। সেখানে রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে শোভাযাত্রায় একসঙ্গে হাঁটল তৃণমূল এবং বিজেপি। ‘জয় শ্রীরাম সেবা সমিতি’র আয়োজনে দুবরাজপুরের রামসীতা মন্দিরপ্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রা বার হয়েছিল। সেই শোভাযাত্রায় হাঁটলেন দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপকুমার সাহা, জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক টুটুন নন্দী, বিজেপির দুবরাজপুর শহর সভাপতি দেবজ্যোতি সিংহ। হাঁটলেন জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়, দুবরাজপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পীযূষ পাণ্ডেও।
হাওড়ার সালকিয়ায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিলে হাঁটলেন উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক গৌতম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘আমি এলাকার সব ধর্মের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। আজ ওরা ডেকেছিল। তাই গিয়েছি।’’ এ নিয়ে তৃণমূল নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা বিজেপির পাতা ফাঁদ হতে পারে। কারণ এই মিছিলের উদ্যোক্তা ছিলেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাই। আমরা গৌতম চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলব।’’
তবে সর্বত্র যে শান্তি-সম্প্রীতির ছবি দেখা গিয়েছে, তা নয়। প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বীরভূম, মালদহ, শিলিগুড়ি-সহ কয়েকটি জায়গায় অস্ত্র নিয়ে রামনবমীর শোভাযাত্রা হয়েছে।