মিঠুন চক্রবর্তীর ‘হিট’ ছবির সংলাপ এ বার ডেঙ্গির প্রচারে। নিজস্ব চিত্র।
বড় পর্দার গণ্ডি পেরিয়ে রাজনীতির আঙিনায় আগেই আছড়ে পড়েছে বাংলা চলচ্চিত্রের সংলাপ। ‘সস্তা জনপ্রিয়তার’ এই কৌশলের বহুল প্রয়োগ দেখা গিয়েছে গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে। প্রকাশ্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে কখনও ‘জাত গোখরো’, কখনও ‘মারব এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে’র মতো সংলাপ ব্যবহার করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ‘খোঁচা’ দেওয়ার প্রবণতার প্রবল সমালোচনা হয়েছে। ভাষা-সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে। চলেছে বিস্তর রাজনৈতিক তরজাও। ভাষা ব্যবহারের ক্রমাগত ‘অবনয়ন’ দেখে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভাষাবিদেরা। এ সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে বাংলা ছবির একটি চটকদার সংলাপের প্রয়োগ দেখা গেল ডেঙ্গির প্রচারে।
তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী কেন্দ্রের অন্তর্গত ডায়মন্ড হারবার পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গির প্রচারমূলক দেওয়ার লিখনের একটি ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে। তাতে লেখা, ‘‘কামড়াব এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে!’’ এই সংলাপের ঠিকে পাশে আঁকা আঙুল উঁচানো মশার কার্টুন। তার সঙ্গে কয়েকটি পরামর্শ। যেমন—
১। মশারি ব্যবহার করুন, ২। যত্রতত্র খোলা জায়গায় জল জমিয়ে রাখবেন না, ডেঙ্গির মশা ডিম পাড়তে পারে। ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় এই দেওয়াল লিখন অনেকেরই নজর কেড়েছে। পুরসভার চেয়ারম্যান প্রণব দাস আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে এ বার বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা তো রাখতে হবে, তার সঙ্গে প্রচারের কাজটাও আমাদের খুব ভাল করে করতে হবে। আমরা সবাই ভাবনাচিন্তা করেই এটা করছি। গোটা পুরএলাকা জুড়েই এটা চলছে।’’
গত বছর ডেঙ্গির ভয়াল রূপ দেখেছে গোটা রাজ্য। পরিস্থিতি কার্যত হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল বিভিন্ন পুরসভায়। আসন্ন বর্ষায় যাতে আবার তেমন পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তার জন্য এখন থেকেই সক্রিয় রাজ্য সরকার। যে সব জেলায় ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি ছিল, সেই সব জেলার জেলাশাসকদের নিয়ে নবান্নে সম্প্রতি বৈঠকও হয়েছে। ডেঙ্গি নিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করায় বিশেষ জোর দিতে চাইছে প্রশাসন।
ডায়মন্ড হারবার পুরসভা সূত্রে খবর, ফেব্রুয়ারি থেকেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে, সরকারি অফিস, হাসপাতাল, বিভিন্ন পরিত্যক্ত জায়গায় ঘুরে ঘুরে সাফাই অভিযান শুরু হয়েছে। মশার লার্ভা মারার তেল ছেটানো হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি নিবিড় কর্মসূচিতে নজরদারি চালিয়ে মশার ডিম পাড়ার জায়গা খুঁজে বার করা, তা নষ্ট করা, ডেঙ্গি প্রতিরোধের জন্য গৃহস্থের কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত— তা নিয়ে প্রচার চালানোও চলছে। পুরসভার এক কর্মীর কথায়, ‘‘সাফাই অভিযান বা প্রচার অভিযান তো হতেই থাকবে। তবে প্রচার অভিযানে মানুষ যাতে আকৃষ্ট হন, আমাদের সেটা মাথায় রাখতে হবে। সাধারণ মানুষের নজর কাড়তে না পারলে প্রচার অভিযানের কোনও অর্থ হয় না। কারণ, মানুষের এখন এত সময় নেই যে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেওয়াল লিখন পড়বেন। এই ভাবনা থেকে এমন প্রচার কৌশল।’’
ঘটনাচক্রে, গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় নিজের সুপারহিট ছবির সংলাপ আওড়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন বিজেপির তারকা-নেতা মিঠুন চক্রবর্তী। ভোট প্রচারে ‘মারব এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে’র মতো সংলাপ ব্যবহার করে হিংসায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। মামলাও হয়েছিল। ডেঙ্গি নিয়ে প্রচারে সেই সংলাপের ব্যবহারে মুগ্ধ ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দারা। সমীর দাশগুপ্ত নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘যে দিন প্রথম বার দেখেছিলাম, চমৎকার লেগেছিল। এত ভাল ভাবনা! আমিও ছবি তুলে রেখেছি। এখন আর এই রকম দেওয়াল লিখন তো দেখা যায় না।’’ ডায়মন্ড হারবারের পুরএলাকার বাসিন্দা মৌসুমি বিশ্বাসের কথায়, ‘‘রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়িয়ে নেতারা যখন এই ধরনের সংলাপ বলেন, ভীষণ খারাপ লাগে। বাংলা ছবির এই ধরনের সংলাপের প্রয়োগ যে এমনও হতে পারে, তা ভাবিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy