পড়শিদের সঙ্গে সুরজিতের মা। নিজস্ব চিত্র
এসটিকেকে রোড থেকে বাঁ দিকে নেমে গিয়েছে ঢালাই রাস্তা। পূর্বস্থলীর উত্তর শ্রীরামপুরের ঘোষপাড়ায় ওই রাস্তার ধারেই একতলা, রংচটা বাড়ি। বিকেল থেকে সারা পাড়ার লোক জড়ো হয়েছে সেখানে।
ছত্তীসগঢ়ের নারায়ণপুর জেলার কাদেনারে আইটিবিপি (ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ) ক্যাম্পে সহকর্মীর গুলিতে ছেলের প্রাণ হারানোর খবর দেখার পর থেকেই নাগাড়ে কেঁদে চলেছেন পার্বতী সরকার। শুধু বলছেন, ‘‘রাত ৯টায় ফোন করেছিল। বারবার বলছিল, ‘বাবাকে বেশি কাজ করতে দিও না। লোক লাগিয়ে বাড়ির কাজ করাও। আমি গিয়ে সব দেখে নেব’। কে জানে, ওইটুকুই শেষ কথা ছিল ছেলেটার।’’
নিহত সুরজিৎ সরকারের (২৭) বাবা পীযূষ সরকার জানান, বুধবার রাত পর্যন্ত আইটিবিপি-র তরফে কোনও ফোন পাননি তাঁরা। তবে স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসনের লোকজন ও টিভি মারফত খবর পান তাঁরা। কিন্তু তার পরেও বিশ্বাস হচ্ছে না খবরটা। প্রতিবেশীরাও বিশ্বাস করতে পারছেন না, হাসিখুশি ছেলেটা আর নেই। তাঁরা জানান, আগামী বৈশাখে বিয়ে ঠিক হয়েছিল সুরজিতের। বাড়ির উঠোন নতুন ঘরের ভিত গাঁথাও শুরু হয়েছিল। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।
তাঁরা জানান, স্থানীয় ইউনাইটেড হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন সুরজিৎ। উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন গয়ারাম দাস বিদ্যামন্দির থেকে। তার পরে কল্যাণীর একটি কলেজে পলিটেকনিক পড়া শুরু করেন। পড়তে পড়তেই আইটিবিপিতে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়ে যান। অরুণাচলপ্রদেশে প্রশিক্ষণের পরে ওড়িশা, রাজস্থান, তামিলনাড়ুতে কাজ করেছেন তিনি। শেষ দেড় বছর ছত্তীসগঢ়ের নারায়ণপুরে কর্মরত ছিলেন। কালীপুজোর আগে ২৭ দিনের টানা ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন সুরজিৎ। দিন সতেরো আগে রাস উৎসব কাটিয়ে ফিরে যান। পীযূষবাবু বলেন, ‘‘আমার ছেলের সঙ্গে কোনও সহকর্মীর গোলমাল ছিল বলে জানি না। তা হলে ওকে কেন বেঘোরে মরতে হল? বারবার বলছিল, ‘আবার ক’দিন পরেই আসব’। কে জানত, ওটাই শেষ বাড়ি আসা হবে।’’
স্থানীয় সুদীপ্ত ঘোষ, রামপ্রসাদ ঘোষেরা বলেন, ‘‘এলাকায় সবার সঙ্গে হেসে গল্প করত, আড্ডা দিত সুরজিৎ। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। এমন প্রাণবন্ত ছেলের এ ভাবে মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।’’ এ দিন বিকেলে ওই বাড়িতে আসেন পূর্বস্থলী ১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক। তিনিও বলেন, ‘‘এ ভাবে মৃত্যু মানা যায় না। ওই পরিবারের পাশে রয়েছি।’’ আজ, বৃহস্পতিবার রাতে দেহ গ্রামে পৌঁছতে পারে বলেও জানা গিয়েছে।
বর্ধমানের বাসিন্দা, সমর পালও ওই ব্যাটেলিয়নের অ্যাসিস্ট্যান্ট কম্যান্ডান্ট পদে কাজ করেন। তিনি ফোনে বলেন, ‘‘ওই ক্যাম্প থেকে বেশ খানিকটা দূরে থাকি। যতটা জানতে পেরেছি, ডিউটিতে যাওয়ার সময় সুরজিৎরা তৈরি হচ্ছিলেন। তখনই ঘটনাটা ঘটে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy