কলকাতা বিমানবন্দরে অপেক্ষায়।— ছবি পিটিআই।
পেটের দায় বড় দায়।
ফলে, আনলক-পর্ব শুরু হতেই উল্টো স্রোত। যে-সব পরিযায়ী শ্রমিক করোনার কারণে লকডাউন জারি হওয়ায় নিজেদের বাড়ি ফিরেছিলেন, তাঁদের একাংশ জানিয়েছিলেন, আর যাই হোক ফিরে যাবেন না। সেই পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাচ্ছে। অনেকেই এখন পুরনো কর্মস্থলে ফিরতে মরিয়া। কোভিড আবহে সুলভে শ্রম পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করছে না ভিন্ রাজ্যের সংস্থাগুলিও।
কিন্তু, কেন ফের ফেরার টান? পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রথমত, গ্রামে তাঁদের জন্য কাজের সুযোগ সে ভাবে নেই। দ্বিতীয়ত, ১০০ দিনের কাজ পেলেও তার মজুরি খুব কম। ভিন্ রাজ্যে যে কাজ তাঁরা করতেন, তাতে দৈনিক আয় অনেকটাই বেশি ছিল। শ্রমিকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, লকডাউনে বাড়ি ফিরে তাঁরা বিনামূল্যে রেশনের চাল পেয়েছেন। একশো দিনের কাজও মিলেছে। কিন্তু, মাটি কাটার অভ্যাসই যে চলে গিয়েছে!
বীরভূমের সিউড়ি ১ ব্লকের বাতাসপুরের বাসিন্দা শেখ রাজু ১০ বছর ধরে মুম্বইয়ে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন। সেখানে দিনে রোজগার হত ৪৫০-৫০০ টাকা। নিজের খরচ করে সংসারের জন্য নিয়মিত টাকা পাঠাতেন। তিনি এখন বলে দিচ্ছেন, ‘‘কাল যদি ট্রেন পাই, কালই মুম্বই রওনা হব। ইদের আগে বহু কষ্টে গ্রামে ফিরেছি। এখানে এসে ১০০ দিনের কাজও পেয়েছি। কিন্তু সাকুল্যে ১০ দিন। ওই টাকায় সংসার চলে না। তাই মুম্বই ফিরতেই হবে। তাতে করোনা হলে হবে!’’
মালদহের মোথাবাড়ির সফিকুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, গিয়াসউদ্দিন শেখরাও মুম্বইয়ে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। বাড়ি থেকে পাঠানো টাকায় চড়া ভাড়া দিয়ে ট্রাকে করে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন লকডাউনের মাঝে। কিন্তু আনলক পর্বেও এলাকায় ১০০ দিনের কাজ জোটেনি। তাই লোটাকম্বল নিয়ে ফের তাঁরা পাড়ি দিয়েছেন মুম্বইয়ে। দুই দিনাজপুর, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতেও ছবিটা প্রায় এক।
মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের হিসেব বলছে, লকডাউনের সময়ে ঘরে ফেরা প্রায় ত্রিশ হাজার শ্রমিক ইতিমধ্যেই ফিরে গিয়েছেন ভিন্ রাজ্যে। ডোমকলের ইব্রাহিম শেখ বলছেন, ‘‘এখানে দিনমজুরি করে দিনান্তে ১৮০ টাকা রোজগার হয়। দিল্লিতে সে কাজেই ৪০০ টাকার বেশি আয়। কষ্ট হলেও তাই ফিরে যাব।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৫৪ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন। এঁদের অধিকাংশই পুরনো কাজের জায়গায় ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। দিল্লিতে দিনমজুরের কাজ করতেন মেদিনীপুর গ্রামীণের শেখ বাদশা। তিনি বলেন, ‘‘এখানে তেমন কাজ পাচ্ছি না। দিল্লিতেই যেতে চাই।’
আবার উল্টো ছবিও আছে। পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুর ব্লকের উত্তরামপুর-জিৎপুর এলাকার বাসিন্দা বিজয় ক্ষেত্রপাল উত্তপ্রদেশে নির্মাণ কাজ করতেন। তিনি জানান, এলাকায় একশো দিনের কাজ পেয়েছেন। তাতে তাঁর চলে যাচ্ছে। করোনার প্রকোপ না কমা পর্যন্ত তিনি ফিরবেন না। আসানসোল শহরের রঙের মিস্ত্রি চয়ন প্রামাণিক গুজরাতে ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম ফিরে এসে কাজ পেতে সমস্যা হবে। কিন্তু, এলাকায় প্রচুর ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে। তাই কাজের সমস্যা হচ্ছে না।’’ তামিলনাড়ু থেকে একাধিক সংস্থা সম্প্রতি বাস পাঠিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ এলাকারও অনেক শ্রমিককে নিয়ে গিয়েছে।
লকডাউনে কাজ হারিয়ে প্রায় ৩৯ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক পুরুলিয়ায় ফিরেছিলেন। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, বিশ্বকর্মা পোর্টালের মাধ্যমে অনেকে বিকল্প কাজের খোঁজ পেয়েছেন। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘বিভিন্ন ব্লকে দশ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক একশো দিনের কাজের প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের অনেকেই জেলায় থেকে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।’’
যদিও পুরুলিয়ারই কাশীপুর এবং হুড়া ব্লকের এমন ৩৮ জন পরিযায়ী শ্রমিক ক’দিন আগেই বাসে রওনা হয়েছেন তামিলনাড়ুর কৃষ্ণাগিরির উদ্দেশে। তাঁদের মধ্যে কাশীপুরের দলালতা গ্রামের নির্মল গড়াই বলেন, ‘‘আমরা কৃষ্ণাগিরিতে গ্রানাইট পাথর বসাই। লকডাউনে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফিরেছিলাম। কিন্তু এখানে রোজগার নেই। তাই ফিরতে হচ্ছেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy