অনেক কষ্ট করে ছেলেকে পড়াশোনা শিখিয়েছিলেন মা। ছেলে বড় হয়ে হয়েছিলেন স্কুলের শিক্ষক। কিন্তু বয়সকালে ছেলের থেকে যত্নের পরিবর্তে মা পেয়েছিলেন নিত্য দিনের অপমান আর অবহেলা।
মা সরলাবালাদেবীকে আগুনে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে ছেলে জয়ন্ত মণ্ডল ও বৌমা মৌসুমি মণ্ডলকে গ্রেফতার করল ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ। সোমবার মণ্ডল দম্পতিকে ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক চার দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
রবিবার ভোরে ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবায় ছেলের বাড়ির ভিতরের উঠোনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় সরলাবালাদেবীর(৬৭)। কিন্তু বৃদ্ধার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রবিবারই সরলাবালাদেবীর ছেলে জয়ন্ত মণ্ডল ও বৌমা মৌসুমি মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় শেষ পর্যন্ত ওই দম্পতি স্বীকার করেন, শনিবার গভীর রাতে সরলাবালাদেবীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে তাঁরাই আগুন লাগিয়ে দেন। এরপরই এক প্রতিবেশীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার রাতেই জয়ন্তবাবু ও মৌসুমিদেবীকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুন, ষড়যন্ত্র ও প্রমাণ লোপাটের ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। সোমবার মণ্ডল দম্পতিকে ঝাড়গ্রামের এসিজেএম আদালতে তোলা হলে ধৃতদের চার দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত বিচারক অয়ন মজুমদার। আগামী ১৭ অক্টোবর জয়ন্ত-মৌসুমিকে ফের আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সোমবার দুপুরে ফের বাছুরডোবায় জয়ন্তবাবুর বাড়িতে তদন্ত করতে গিয়েছিল পুলিশ। জয়ন্তবাবুর স্কুল পড়ুয়া দুই ছেলের সঙ্গেও কথা বলেন তদন্তকারী অফিসার। প্রতিবেশীরাই জানান, বিনপুরের হাড়দা অঞ্চলের বাতাবনি গ্রামে জয়ন্তবাবুর আদিবাড়ি। ছোটবেলায় বাবা মারা যান। সরলাবালাদেবী মুড়ি ভেজে ও পরিচারিকার কাজ করে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন। ইংরেজির স্নাতক জয়ন্তবাবু প্রথমে নয়াগ্রামের নেকড়াশোল হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। কিন্তু গ্রাম্য বৃদ্ধা মা তাঁর সংসারে অবাঞ্ছিত হয়ে পড়েন।
এক প্রতিবেশিনী বলেন, “মাস ছয়েক আগে মাসিমার (সরলাবালা) ডান হাত ভেঙে যায়। কী করে এমন হল জানতে চাইলে মাসিমা জনিয়েছিলেন, ছেলে-বৌমার হাতে মার খেয়ে এই দশা।” অন্য এক প্রতিবেশী জানান, টিভিতে সিরিয়াল দেখতে ভালবাসতেন সরলাবালাদেবী। কিন্তু মৌসুমিদেবী শাশুড়িকে টিভি দেখতে দিতেন না। পড়শিদের বাড়িতে গিয়ে টিভি দেখতেন ওই বৃদ্ধা। শনিবার টিভি দেখা নিয়ে অশান্তি হয়েছিল।
আর এক প্রতিবেশীর অভিযোগ, রবিবার ভোরে জয়ন্তবাবু তাঁকে ডেকে বলেন সরলাবালাদেবী অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। ওই পড়শির কথায়, “আমি বলি তাহলে অ্যাম্বুল্যান্স ডাকছি, মাসিমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু জয়ন্তবাবু নির্লিপ্ত ভাবে বলেন, ‘ও সবের দরকার নেই। মা মারা গেছেন’। এমন কথা শুনে আমরা অবাক হয়ে যাই।” অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “আমার মক্কেলরা চক্রান্তের শিকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy