বিদ্যাসাগর হলে তৃণমূলের বৈঠক। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
দলের লোকসভা ভোট পরবর্তী পর্যালোচনা বৈঠকেই জেলায় বিজেপির উত্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন একাংশ নেতা। এঁদের মতে, কেন বিজেপির ভোট বাড়ল, তা গভীর ভাবে পর্যালোচনা করা জরুরি। ফাঁকফোঁকরগুলো পূরণ না- হলে গেরুয়া- শিবির আগামী দিনে আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তখন দলের সমর্থন কমতে পারে। বস্তুত, জেলার সর্বত্র বিজেপির তেমন সংগঠন নেই। কার্যত বিনা সংগঠনেই বিজেপির এই ভোটপ্রাপ্তিকে মোটেও লঘু করতে দেখতে চাইছেন না দলের একাংশ নেতা। বুধবার বিকেলে মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর হলে জেলা তৃণমূলের এই পর্যালোচনা বৈঠক হয়। দলের অঞ্চল সভাপতি, ব্লক সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ- সভাপতির পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি, জেলা সভাপতি দীনেন রায়, জেলার দুই কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি শ্রীকান্ত মাহাতো প্রমুখ।
কাল, শুক্রবার দলের নেতা- কর্মীদের নিয়ে কলকাতায় বৈঠক রয়েছে। তার আগে জেলাস্তরে লোকসভার ফলাফলের পর্যালোচনা করতেই এই বৈঠক হবে দলীয় সূত্রে খবর। তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, আগামী দিনে বুথস্তর এবং অঞ্চলস্তরে আরও গভীর ভাবে ফলাফলের পর্যালোচনা হবে। বস্তুত, পশ্চিম মেদিনীপুরের তিনটি লোকসভা আসনে এ বার বিপুল জয় পেয়েছে তৃণমূল। ঘাটাল, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামের মতো আসনে দলের প্রার্থীরা লক্ষাধিক ভোটে জিতেছেন। তবে এই বিপুল জয়েও দলের দুর্ভাবনা কাটছে না। কারণ, জেলায় বিজেপির উত্থান। এই দুর্ভাবনায় ঘিরে থাকল বুধবারের বৈঠকও। দলীয় সূত্রে খবর, দাসপুরের নেতা সুকুমার পাত্র যেমন বৈঠকে ঘাটাল লোকসভার ফলাফলের পর্যালোচনা করতে গিয়ে বলেন, “ঘাটাল লোকসভার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের ছ’টিতেই তৃণমূলের লিড রয়েছে। সবথেকে বেশি লিড রয়েছে কেশপুরে। তবে অনেক চেষ্টা করেও সবংয়ে লিড মেলেনি।” সুকুমারবাবু দলের দাসপুর- ১ ব্লকের সভাপতি। তিনি বলেন, “আমার ব্লকে ইতিমধ্যে অঞ্চলস্তরে ফলাফলের একদফা পর্যালোচনা হয়েছে। এটা ঠিক, দলের সকলে এই নির্বাচনে অংশগ্রহন করেননি। কেউ কেউ কংগ্রেস- বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। আগামী দিনে আমাদের সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখতে হবে।” দলের একাংশ জেলা নেতা মনে করেন, কিছু কিছু এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের সুযোগ নিয়েছে বিজেপি। সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্যও কিছু এলাকায় দলের ভোট প্রাপ্তি প্রত্যাশা মতো হয়নি। বস্তুত, গতবারের থেকে এ বার বিজেপির ভোট অনেকটাই বেড়েছে। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এ জেলার তিনটি আসনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল এই রকম, মেদিনীপুরে ৫ শতাংশ। ঝাড়গ্রামে ৫ শতাংশ এবং ঘাটালে ৩ শতাংশ। ০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের হার বেড়ে হয়েছে এই রকম, মেদিনীপুরে ১৪ শতাংশ। ঝাড়গ্রামে ১০ শতাংশ। এবং ঘাটালে ৭ শতাংশ।
পরিস্থিতি দেখে দলের পর্যালোচনা বৈঠকে সংগঠনের উপরই বেশি জোর দেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। দলীয় সূত্রে খবর, জেলায় লোকসভা ভোটে দল অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে দাবি করেও বৈঠকে তিনি বলেন, “এই সাফল্য তাৎক্ষনিক কোনও ব্যাপার নয়, ধারাবাহিক সাংগঠনিক কাজকর্মেরই ফসল। নানা ঘাত- প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমাদের এগোতে হয়েছে। আমাদের কর্মীরা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন। লোকসভায় আমরা যে সমর্থন পেয়েছি, তাকে ধরে রাখতে হবে। আগামী দিনে সমর্থন আরও বাড়াতে হবে। কোথাও কোন ভুলত্রুটি থাকলে চিহ্ণিত করে তা সংশোধন করতে হবে।” সংগঠনকে শৃঙ্খলায় বাঁধার বার্তাও দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “সিপিএম অন্যায়- অবিচার করেছিল। তাই মানুষ ওদের প্রত্যাখান করেছেন। আমরা সিপিএমের মতো নই। আমাদের সকলেরই কর্তব্য শৃঙ্খলাপরায়ণ, দায়িত্বশীল-স্বচ্ছ-সৎ মানসিকতা নিয়ে শান্তি বজায় রেখে উন্নয়ন ও সংগঠনকে মজবুত করে তোলা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ- শান্তি- উন্নয়নবার্তাকে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।” বস্তুত, পাঁচ বছর আগে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর আসনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫২ হাজার। এ বার সেখানে প্রাপ্ত ভোট বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৮০ হাজার। জেলায় বিজেপির ভোট বাড়া নিয়ে কী তৃণমূল উদ্বিগ্ন? তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ বলেন, “আমরা উদ্বিগ্ন নই। সিপিএমের অনেকে এ বার বিজেপিকে সমর্থন করেছেন।” তাহলে তড়িঘড়ি এই বৈঠক কেন? প্রদ্যোৎবাবুর কথায়, “এটা সাংগঠনিক ব্যাপার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy