মিছিলে অবরুদ্ধ সদাব্যস্ত কালেক্টরেট মোড়।—নিজস্ব চিত্র।
এক-একদিন তৃণমূলের এক-একটি সংগঠনের মিছিল। আর তার ঠেলায় যানজটে নাকাল পথচলতি মানুষ। গত রবিবার তৃণমূলের মহিলা সংগঠন মেদিনীপুরে মিছিল করেছিল। মঙ্গলবার মিছিল করে তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনগুলো। আর বুধবার তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনএনটিটিইউসি-মিছিলের জেরে বেশ কিছুক্ষণের জন্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকা।
কেন এই মিছিল? তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “মাত্র ১২ ঘন্টার নোটিসে আজ আমাদের শ্রমিক সংগঠন পথে নেমেছে। বিজেপি সিবিআইকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করছে। আমরা পথে নামতে বাধ্য হয়েছি।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা পথচলতি মানুষকে সমস্যায় ফেলতে চাইনি। যাঁরা সমস্যায় পড়েছেন, তাঁদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।” বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য কটাক্ষ, “যারা চুরি করল, ওরা (তৃণমূল) তাদের শাস্তি চাইছে না। বদলে চোরদের হয়ে পথে নেমে মানুষকেই শাস্তি দিচ্ছে!”
বুধবার সকাল এগারোটা নাগাদ শহরের বিদ্যাসাগর হলের সামনে থেকে আইএনটিটিইউসি-র মিছিল শুরু হয়। দীনেনবাবু ছাড়াও ছিলেন দলের জেলা নেতা আশিস চক্রবর্তী, অজিত মাইতি, জহরলাল পাল প্রমুখ। মিছিল শহরের রিং-রোড পরিক্রমা করে। পরে গাঁধীমূর্তির পাদদেশে সভা হয়। ছিলেন দলের জেলা চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক মৃগেন মাইতি। সভায় পাকিস্তানে জঙ্গিহানায় নিহতদের স্মরণে নীরবতা পালনের পাশাপাশি শোকপ্রস্তাব পাঠ করা হয়। জ্বালানো হয় মোমবাতি। এই সভার জন্য অবশ্য কোনও মঞ্চ বাঁধা হয়নি। রাস্তার উপরই সভা হয়। ত্রিপল পেতে কর্মী- সমর্থকদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। ফলে, এক সময় যানজটে হাঁসফাঁস হয়ে ওঠে শহরের এই এলাকা। গাঁধীমূর্তির পাদদেশে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর একটি। কিছু দূরেই জেলা পরিষদ, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, একের পর এক নার্সিং হোম। এমন এলাকারা রাস্তার উপর সভা চলায় স্বাভাবিক ভাবে যান চলাচল ব্যাহত হয়। অবশ্য যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
মিছিলের রাস্তায় যানজট এড়াতে পুলিশও ছিল তৎপর। কেমন? কালেক্টরেট মোড়ের সামনে একটি রিক্সা দাঁড়িয়েছিল। মিছিল তখন কাছাকাছি চলে এসেছে। এক পুলিশ- কর্তার কথাতেও চালক রিক্সা সরাচ্ছিলেন না। আচমকাই এক পুলিশ কর্মী এসে রিক্সার চাকার হাওয়া খুলে দেন। অন্যদিকে, মিছিল যখন কেরানিতলার কাছে, তখন থেকেই অবশ্য গাঁধীমূর্তির পাদদেশের সামনে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ শুরু করে দেন পুলিশ কর্মীরা। আচমকা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ শুরু হওয়ায় অনেকেই সমস্যায় পড়েন। শহরের বাসিন্দা পলাশ মিত্র, সৌগত দাসদের কথায়, “এক- একদিন এক- এক দলের মিছিল হয়েই চলেছে। আজ এই দল তো কাল ওই দল! মাঝেমধ্যেই ওয়ান- ওয়ে রাস্তার দু’দিকেই গাড়ি চলাচল করছে দেখছি। ফলে সমস্যা তো হবেই।” কেন রাস্তার উপরই সভার আয়োজন? তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেনবাবুর দাবি, “গাঁধীমূর্তির পাদদেশ শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে এ ভাবে সভা করা উচিত নয়। এটা আমরাও বুঝি। এদিন আমাদেরও সভা ছিল না! ওখানে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানে জঙ্গিহানায় নিহতদের আমরা স্মরণ করেছি। এই এলাকা আমরা বেশিক্ষণ আটকেও রাখিনি!” রাস্তা আটকে সভা- মিছিল। এই ভোগান্তির শেষ কবে, প্রশ্ন তুলছেন শহরবাসীই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy