পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই জঙ্গলমহলে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের সভার পাল্টা সভা করার ক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো নীতি’ নিয়েছে শাসকদল।
গত ২২ জানুয়ারি ঝাড়গ্রাম শহরের রবীন্দ্রপার্ক সংলগ্ন মাঠে রাহুলবাবুর জনসভা হয়েছিল। আর তৃণমূলের পাল্টা সভাটি হবে ঠিক দু’সপ্তাহ পরে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি একই জায়গায়। সাধারণত, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বিজেপি কোনও সভা-মিছিল করলে সঙ্গে সঙ্গেই শাসকদলের তরফে পাল্টা রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়া হয়। গত বছর অগস্টে মেদিনীপুর শহরে বিজেপি-র মহামিছিলে হাজির ছিলেন দলের রাজ্য নেতা অসীম সরকার। পর দিনই মেদিনীপুর শহরে মুকুল রায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের পাল্টা মিছিল হয়েছিল। গত অগস্টে বেলিয়াবেড়ার বাহারুনায় বিজেপি-র মহামিছিল ও সভার কয়েক দিনের মধ্যেই সেখানে পাল্টা মিছিল করেছিলেন স্থানীয় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। আবার গত ডিসেম্বরে মেদিনীপুর শহরে রাহুল সিংহের সভার কয়েকদিন পরেই খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুরে প্রশাসনিক জনসভা করেছিলেন।
তা হলে অরণ্যশহরে বিজেপি-র সভার পাল্টা সভার ক্ষেত্রে শাসক দলের বিলম্ব কেন?
তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রামে বিজেপি-র সভার ভিড় দেখে শাসকদলের মধ্যে অস্বস্তি শুরু হয়েছে। জেলা তৃণমূলের একাংশ চেয়েছিলেন, তড়িঘড়ি বিজেপি-কে পাল্টা জবাব দেওয়া হোক। কিন্তু দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় সে পথে হাঁটতে চাইছেন না বলে দলেরই একটি সূত্রে খবর। কারণ, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি পাল্টা সভা ডেকে আশানুরূপ লোক না হলে তাতে শাসকদলের মুখ পুড়বে। সে জন্য রীতিমতো ছক কষেই পাল্টা সভার পথে হাঁটছেন দীনেনবাবুরা। পাল্টা সভায় রাজ্য নেতৃত্বের কাউকে না পেলে তৃণমূলের জেলা ও মহকুমার নেতা-জনপ্রতিনিধিরাই পাল্টা সভায় বিজেপি-র ‘কুৎসা ও অপপ্রচারের’ জবাব দেওয়ার পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের উন্নয়নের জয়গান করবেন।
তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “বিজেপি তো বাইরে থেকে লোক এনে মাঠ ভরিয়েছিল। আমরা ঝাড়গ্রাম ও আশেপাশের এলাকা থেকে পাঁচ গুণ বেশি জমায়েত করে দেখিয়ে দেব।” এই জন্যই কী দেরি করে পাল্টা সভা হচ্ছে? দীনেনবাবুর কৌশলী জবাব, “আমরা দেখাতে চাই মানুষ কুৎসাকারীদের পক্ষে নেই। জনগণ আমাদের পক্ষেই রয়েছেন।”
শাসকদলের রাজনৈতিক রণকৌশল কী হবে তা নির্ধারণ করতে গত শনিবার ঝাড়গ্রাম ব্লকের গজাশিমূলে তৃণমূলের এক কর্মিসভা হয়। সেখানে ঝাড়গ্রাম মহকুমার বিভিন্ন ব্লকের প্রায় তিনশো কর্মী হাজির ছিলেন। ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, দুই কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, প্রদ্যোৎ ঘোষ, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক দুর্গেশ মল্লদেব, ঝাড়গ্রাম শহর তৃণমূলের সভাপতি প্রশান্ত রায়, গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো প্রমুখ। সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিজেপি-র সভায় যত লোক হয়েছিল, তার পাঁচ গুণ বেশি লোক জমায়েত করা হবে। এ জন্য মহকুমার প্রতিটি ব্লক নেতৃত্বকে উপযুক্ত দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে।
কিন্তু সভাস্থল হিসেবে রবীন্দ্রপার্ক সংলগ্ন ছোট মাঠটিতে অত লোক ধরার জায়গা নেই। তৃণমূলের এক জেলা নেতার কথায়, “ওই দিন অরণ্যশহর লোকে লোকারণ্য করে দেওয়াটাই আমাদের উদ্দেশ্য। যত বেশি লোক, তত বেশি জনসমর্থন প্রমাণ করা যাবে।” কিন্তু লোকজড়ো করলেই তো হল না। লোকজনকে আটকে রাখারও বন্দোবস্ত হচ্ছে। ওই দিন সভা মঞ্চ থেকে বেশ কিছুটা দূরে সাংস্কৃতিক মঞ্চ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সাংস্কৃতিক মঞ্চে দলীয় সমর্থক লোক-শিল্পীরা নাচ-গানের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নের প্রকল্পগুলির কথা প্রচার করবেন।
এ ছাড়া সভাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত বিভিন্ন দিকে রাস্তায় মাইক্রোফোন লাগানো হবে। যাতে সভার বক্তব্য দূরের লোকজনও স্পষ্ট শুনতে পান। বিজেপি-র সভায় ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত এসপি ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে তোপ দেগেছিলেন অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রের খবর, পাল্টা সভায় জঙ্গলমহলে শান্তি রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা ও পুলিশ সুপারের ‘নিরপেক্ষতার’ কথাও বলা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy