Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

খোকাবাবু বলছেন, দায়িত্ব বাড়ল

মধ্যাহ্নের গনগনে সূর্য মাথায় নিয়েই তাঁর সাদা গাড়ি ঢুকল ঘাটালে। গাড়ি থেকে নেমে তিনি সোজা সেঁধিয়ে গেলেন ‘দেবালয়’-এ নিজের ঘরে। ভোট-যুদ্ধে এগিয়ে থাকার খবর আগেই পেয়েছেন। তবু লিড ঠিক কতটা হল জানতে টিভি চ্যানেলে মন দিলেন। রিমোট হাতে চ্যানেল পাল্টানোর ফাঁকে টলিউডের খোকাবাবু বলে উঠলেন, “আমি যে জিতছি টিভিতে তো দেখাচ্ছে না!”

গণনাকেন্দ্রে ফের দেখা বিরোধী প্রার্থীর সঙ্গে। বজায় রইল সৌজন্য। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

গণনাকেন্দ্রে ফের দেখা বিরোধী প্রার্থীর সঙ্গে। বজায় রইল সৌজন্য। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০২:০৪
Share: Save:

মধ্যাহ্নের গনগনে সূর্য মাথায় নিয়েই তাঁর সাদা গাড়ি ঢুকল ঘাটালে। গাড়ি থেকে নেমে তিনি সোজা সেঁধিয়ে গেলেন ‘দেবালয়’-এ নিজের ঘরে। ভোট-যুদ্ধে এগিয়ে থাকার খবর আগেই পেয়েছেন। তবু লিড ঠিক কতটা হল জানতে টিভি চ্যানেলে মন দিলেন। রিমোট হাতে চ্যানেল পাল্টানোর ফাঁকে টলিউডের খোকাবাবু বলে উঠলেন, “আমি যে জিতছি টিভিতে তো দেখাচ্ছে না!”

গণনাকেন্দ্রে বসে প্রতিপক্ষ মানস ভুঁইয়া, সন্তোষ রাণা তখন জেতা-হারার হিসেব কষতে ব্যস্ত। ঘাটালের তারকা প্রার্থী তৃণমূলের দীপক অধিকারী ওরফে দেব অবশ্য দিনভরই ছিলেন টেনশনমুক্ত।

গত ১২ মে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের ভোট মিটতেই এলাকা ছেড়েছিলেন দেব। আর শুক্রবার এলাকায় ঢুকতে ঢুকতে প্রায় দুপুর। পরনে নীল শার্ট ও ব্লু ফেডেড জিনস্। দোতলায় নিজের ঘরে গিয়ে কারও সঙ্গে আর কোনও কথা বলেননি তিনি। শুধু পাশের মানুষটিকে তাঁর প্রশ্ন, “বস্, রেজাল্ট কী হল?” টিভিতে তখন তাপস পাল, সন্ধ্যা রায়, মুনমুন সেনের এগিয়ে যাওয়ার খবর। “আরেব্বাস, এটাও তো দারুণ খবর”- মন্তব্য আশ্বস্ত দেবের। এরপরই ডাক দিলেন ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই-সহ দলের কয়েকজন নেতাকে। “২-৩ লক্ষ ভোটে জিতবেন”, ভরসা জোগালেন নেতারা। টেনশনের ছাপ না থাকলেও একটা চোরা-উত্তেজনা কাজ করছে তা বোঝা গেল দেবের কথাতেই। হেসে বললেন, “এত ভোটে জিততে পারব? কী যে বলেন!”

সবিস্তারে দেখতে
ক্লিক করুন....

আর সময় নষ্ট করলে হবে না। তাই চারটি রুটি, রুই পোস্ত, খাসির মাংস, ডাল, টক দই খেয়েই রওনা দিলেন ঘাটাল কলেজের দিকে, যেখানে চলছে ভোটের গণনা। এ বার পরনে সবুজ টি শার্ট আর জিনস্। মিনিট কুড়ির মধ্যেই গণনাকেন্দ্রে পৌঁছে যান তিনি। তাঁকে দেখে এত কাজের মধ্যেও সকলের মুখে হাসি। আর দেব সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের গণনা যে সাতটি ঘরে চলছে সেখানেও ঢুঁ মারেন।

গণনার শুরু থেকে দেব কেন্দ্রে না থাকলেও এ দিন সকাল থেকেই গণনাকেন্দ্রে হাজির ছিলেন বিরোধী প্রার্থীরা। হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে চাপিয়ে কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া খাতা-কলম নিয়ে শুরু থেকেই হিসেব কষছিলেন। তাঁর পাশেই বসে ছিলেন সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রাণা। তখন দু’জনেই জেনে গিয়েছেন ফলাফলের অনেকটাই। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মানসবাবু বলেন, “অশান্তি আর সন্ত্রাসের পরিবশে ভোট হয়েছে। অবাধ ভোট হলে এই ফল অন্য রকম হত।” তাহলে অন্য যে জায়গায় কংগ্রেস জিতেছে সেটা? তাঁর উত্তর, “ওখানে আমাদের দলের সংগঠন ভাল। তাই কেউ দাঁত ফোটাতে পারেনি।” সন্তোষবাবুর গলাতেও একই সুর। তাঁর বক্তব্য, “নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু আমাদের কথায় আমল দেওয়া হয়নি।” আর বিজেপি প্রার্থী মহম্মদ আলম গণনাকেন্দ্রের একটি ঘরের কোণে চুপচাপ বসে ছিলেন। কেন্দ্রে ক্ষমতা আসছেন মোদী, এই খবরেই নজর রাখতে বলে তাঁর বক্তব্য, “আমার কেন্দ্রে বিজেপির ফল গতবারের তুলনায় প্রায় দশ গুণ বেড়েছে। এতেই আমি খুশি। এর থেকে বেশি আর কী চাইতে পারি?” নির্বাচনের আগে সন্তোষ রাণার বাড়িতে চায়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিলেন দেব। আর এ দিন ফলাফল ঘোষণার পর ফের তাঁরা মুখোমুখি হন। হাত মেলানও দু’জনে। তবে সেরকম কিছু কথা হয়নি।

ফলাফল নিয়ে এমন চুল চেরা হিসেব নিকেশে মন ছিল না দেবের। ফলাফল জানতে পেরে নিশ্চিন্ত দেবের উত্তর, “আমি এ সব নিয়ে কিছু ভাবি নি। প্রচারে যখন বেরিয়ে ছিলাম, তখনই মানুষের ভালবাসা টের পেয়েছি। তখন থেকেই জানতাম আমার দলই জিতবে।” তবে নিজের গ্রাম মহিষদায় ভাল ফল করতে পারেননি তিনি। মহিষদার ১৭৩ নম্বর বুথে আড়াইশোরও বেশি ভোটে তাঁকে ছাপিয়ে গিয়েছেন সন্তোষ রাণা। মহিষদা বরাবরই বাম সমর্থিতদের গ্রাম বলে পরিচিত। নির্বাচনে দাঁড়ানোর পর থেকে বারবার গ্রামে এসে সমর্থন চেয়েছেন দেব। প্রথমের সেই জন সমর্থনে অবশ্য ভাটা পড়েছিল শেষের দিকে। এ দিনের ফলও তো সেই একই কথা বলল। সন্তোষবাবু বলেন, “আমি জানতাম ওই বুথে দেব হারবেই।” আর দেব বলেন, “মানুষ যাকে চেয়েছেন শান্তিপূর্ণভাবে তাঁকেই ভোট দিয়েছেন। বলার কিছুই নেই।” পরে সাংবাদিক বৈঠকে অবশ্য দেবের দাবি, তাঁর দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য মাস্টার প্ল্যানের বিষয়টি মাথায় রয়েছে। এছাড়া এলাকার রাস্তা, স্কুল, সেতু-এরকম অনেক কাজই করতে হবে।”

তবে মহিষদার দু’টি বুথই ভরসা বামেদের। দেবের জনপ্রিয়তায় যে এক ফোঁটাও ভাটা পড়েনি তা টের পাওয়া গেল যখন গণনা কেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে গেল দেবের গাড়ি। পিছনে ছুটল খুদেরা। দেবকে ছোঁয়ার জন্য কিশোরীদের সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে এল শাঁখা-পলা পরা হাতও। আর দিনের শেষে জানা গেল পোড় খাওয়া রাজনীতিকদের ২ লক্ষ ৬০ হাজার ৮৯১ ভোটে হারিয়ে শেষ হাসি হেসেছেন তিনিই। দেব ম্যাজিক হয়তো একেই বলে!

অন্য বিষয়গুলি:

abhijit chakraborty ghatal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy