সামনেই নববর্ষ। চলছে চৈত্র সেল। এই সময় যে কী ভাবে কেটে যেত, তা কার্যত টেরই পেতেন না ব্যবসায়ীরা। রকমারি সামগ্রী মজুত, বকেয়া টাকা আদায়, নববর্ষের প্রস্তুতি, ক্রেতাদের ঘরে ঘরে গিয়ে আমন্ত্রণের মতো নানা ব্যস্ততা থাকত ঘাটালের ব্যবসায়ীদের। এ বারও চৈত্র সেলের কেনাকাটি চলছে। নববর্ষের প্রস্তুতিও হচ্ছে। তবে সবটাই যেন করতে হয় বলে করা! কারণ মাস্টার প্ল্যান কার্যকর হওয়ার পরে ঘাটাল শহরে ব্যবসার জায়গা কতটা থাকবে সেই নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে।
শিলাবতী নদীর উপরে দেওয়াল এবং সার্কিট বাঁধের জন্য ঘাটাল শহরের পশ্চিম পাড়ের একটা অংশে দোকান, ঘর-বাড়ি ভাঙা পড়ার কথা। দু’দিন আগেই সেই তালিকা ঘাটালের ব্যবসায়ীদের হাতে এসেছে। সোমবার তাঁরা বৈঠক করেন। সেখানেই তালিকায় থাকা নাম ও জমির দাগ নম্বর পড়ে শোনানো হয়। এর আগে মাস্টার প্ল্যানে শিলাবতীর পশ্চিম পাড় কেন্দ্রিক প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য জমি নেওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই ব্যবসায়ীদের মধ্যে তোলপাড় পড়েছিল। সঠিক তথ্য জানতে প্রশাসন, পুরসভায় ছোটাছুটি করেন তাঁরা। এ বার হাতে তালিকা আসার পরে সেই উদ্বেগ আরও বাড়ল।
ঘাটালের নামের সঙ্গে ব্যবসার ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। এই শহর শতাধিক বছরের পুরনো বাণিজ্য শহর। একসময় জলপথে ব্যবসা চলত। ঘাটালের মতে এতবড় সংগঠিত ব্যবসা কেন্দ্র পশ্চিম মেদিনীপুরের অন্য কোথাও নেই বললেই চলে। এখানে একসঙ্গে মুদিখানা, মনোহারি, স্টেশনারি, পোশাক-সহ যাবতীয় পাইকারি বাজার রয়েছে। সেই সবের কী হবে, সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। কারণ ব্যবসায়ীদের হাতে যে তালিকা হাতে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, নদীর পশ্চিম অংশে ঘাটাল বাজারে রাস্তার মাঝের অংশ থেকে দু’দিকে কোথাও ৬০ ফুট, কোথাও ৭০ ফুট জমি নেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। ফলে কৃষ্ণনগর, আলামগঞ্জ, নিউমার্কেট, ভিমতলা, পোস্তবাজার, কালীবাজার, কুঠিবাজারের (একটা অংশ), কুমোরপাড়া হয়ে শ্রীরামপুর প্রভৃতি এলাকায় নদীর পাড় লাগোয়া কয়েক হাজার দোকান ও বসত বাড়ি ভাঙা পড়ার কথা।
এই কথা জানার পরে চৈত্র সেলের বাজারও যেন তেতো হয়ে গিয়েছে ঘাটালের ব্যবসায়ীদের কাছে। বাড়ছে উৎকন্ঠা। বংশ পরম্পরায় ধরে চলে আসা ব্যবসার ভবিষ্যৎ কী, বিকল্প রুটি রুজির কী হবে, সরকার কী ভেবেছে— তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। লেপ-তোষক ব্যবসায়ী তাপস দালাল বলছিলেন, “গোটা চৈত্র মাস ঘাটাল বাজার গমগম করে। নববর্ষে তো উৎসবের চেহারা নেয়। গ্রামগঞ্জ থেকে মানুষ আসেন এখানে। রাত পর্যন্ত ভিড় থাকে দোকানগুলিতে। এবারও সেই আয়োজন চলছে। তবে মনে সুখ নেই ব্যবসায়ীদের।”
ঘাটাল বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তা বরুণ দাস বলছিলেন, “ব্যবসার নিরিখে ঘাটাল অনেক এগিয়ে। কিন্তু দোকান ভাঙার খবরে বাজারের সব ব্যবসায়ীদের মনোবল ভেঙে গিয়েছে। ব্যবসার দিকে এখন আর কারও নজর নেই। চৈত্র সেলে কাপড়-সহ বিভিন্ন দোকানেই একটা বাড়তি বিক্রিবাটা হয়। এ বার সব ওলোটপালোট হয়ে গিয়েছে।” শহরের আর এক ব্যবসায়ী কৌশিক দত্ত বলছিলেন, “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান হোক, সেটা আমরাও চাই। কিন্তু যে জনপদ ব্যবসার উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেই ব্যবসা কেন্দ্রের একটা বড় অংশ বন্ধ হয়ে গেলে ব্যবসায়ীরা কোথায় যাবেন? বিকল্প ভাবনা কী, সেটা নিয়ে প্রশাসনের গঠনমূলক কোনও ভাবনা রয়েছে কি না জানালে ভাল হয়।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)