প্রতীকী ছবি।
অরণ্যশহর কি হয়ে উঠছে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য! সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় ঘুরপাক খাচ্ছে এই প্রশ্ন। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
বৃহস্পতিবার সকালে ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে জয়নগরের রাস্তায় উদ্ধার হয় সম্রাট নাগ নামে বছর বাইশের এক তরুণের রক্তাক্ত দেহ। ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা সম্রাট বেঙ্গালুরুর বেসরকারি কলেজের বি টেক পড়ুয়া ছিলেন। পরিজনেরা এ ক্ষেত্রে খুনের অভিযোগ তুলেছেন। এর আগে গত ১৮ মার্চ, দোলের দিন শহরেরই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বছর ষোলোর দীপ সাহার অপমৃত্যুর পরেও খুনের অভিযোগ করেছিল মৃতের পরিবার। অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারায় মামলা রুজু করেছিল পুলিশ। তবে এফআইআর-এ নাম থাকা মূল তিন অভিযুক্ত এখনও অধরা। সন্দেহভাজন অন্য তিনজন গ্রেফতার হয়েছে।
গত বছর থেকেই শহরে চুরি, ছিনতাই, খুনের মতো অপরাধ বাড়ছে। একাংশ শহরবাসীর অভিযোগ, ব্রাউন সুগার-সহ মাদকের জালে জড়িয়ে পড়ছে যুব সমাজের একটা অংশ। নেশার খরচ জোগাড়ে অপরাধমূলক কাজকর্ম বাড়ছে। গত বছর ৫ নভেম্বর দিনেদুপুরে বাছুরডোবায় মহিলার সোনার হার ছিনতাই করে পালায় বাইক আরোহী দুই দুষ্কৃতী। গত বছর ২৮ নভেম্বর বাছুরডোবাতেই এক শিক্ষিকা ও এক ব্যবসায়ীর বাগান থেকে দু’টি চন্দন গাছ কেটে চুরি করা হয়। তারপর ৫ ডিসেম্বর রাতে একেবারে ঝাড়গ্রাম রাজপ্রাসাদ চত্বর থেকে দু’টি পুরনো চন্দন গাছ চুরি হয়ে যায়। কোনও ঘটনারই কিনারা হয়নি। গত বছর ৬ মে বাছুরডোবায় নিজের গুদামে বৃদ্ধ ব্যবসায়ী খুনে অবশ্য এক অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। পুলিশের দাবি ছিল, বাতিল জিনিসপত্র চুরি করতে গিয়ে হাতানাতে ধরা পড়ে ওই ব্যবসায়ীকে খুন করেছিল সে। তবে এলাবাসীর একাংশের ব্যাখ্যা, নেশাড়ুরা টাকা না পেয়েই খুন পর্যন্ত করছে।
ঝাড়গ্রাম শহরে মাদক-জাল যে ছড়াচ্ছে, তা অবশ্য স্পষ্ট। গত বছর ৯ জুলাই ব্রাউন সুগার বিক্রির অভিযোগে বিবেকানন্দপল্লি থেকে এক মহিলাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সে পরে জামিনও পেয়ে যায়। সূত্রের খবর, শহরে অবাধে ব্রাউন সুগার কেনাবেচা চলছে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের নিশানা করছে কারবারিরা। ঝাড়গ্রাম আদালতের আইনজীবী কৌশিক সিংহ বলছেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জন্যই শহরে অপরাধ বাড়ছে। ছড়াচ্ছে মাদকের জালও। পুলিশ ইচ্ছা করলে এ সব বন্ধ করতে পারে। কিন্তু সেই সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না।’’ কৌশিক আরও মনে করালেন, পুরভোটের পরদিন ২৮ ফেব্রুয়ারি শ্রীরামপুরে বৃদ্ধ খুনেও কেউ ধরা পড়েনি। শহরে একের পর এক বাড়িতে চুরিও মূলত মাদকের নেশার টাকা জোগাড়ের জন্যই হচ্ছে বলে মত এই আইনজীবীর।
গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির ঝাড়গ্রাম শাখার সম্পাদক অঙ্কুর মণ্ডলেরও অভিযোগ, ‘‘মাদকের নেশায় কম বয়সীদের ভবিষ্যৎটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসন এ ক্ষেত্রে দায় এড়াতে পারে না।’’ অঙ্কুরের দাবি, করোনা কালে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবং সামাজিক অনিশ্চয়তায় কিশোর-যুবদের একাংশ নেশার জালে জড়িয়েছে। মাদক কারবারিরাও সেই সুযোগ নিচ্ছে। ‘ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগে’র আহ্বায়ক শ্রীমন্ত রাউতের অভিযোগ, ‘‘পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কারণেই শহরে মাদকাসক্ত বাড়ছে।’’ এ ক্ষেত্রে একসুর যুযুধান দলও। জেলার সিপিআই নেতা প্রতীক মৈত্র বলছেন, ‘‘শহরে ব্রাউন সুগার দেদার বেচাকেনা হচ্ছে।’’ জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাহাতোর কথায়, ‘‘মাদক কারবারি ধরা পড়লে তাদের ছাড়াতে কেউ কেউ সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একযোগে মাদক ঠেকাতে পুলিশ-প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে। অভিভাবকদেরও সচেতন থাকতে হবে।’’ জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষের অবশ্য দাবি, ‘‘ব্রাউন সুগারের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। গ্রেফতারও হয়েছে। পুলিশ সতর্ক রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy