যন্ত্রণা ভুলতে সঙ্গী যখন হারমোনিয়াম। নিজস্ব চিত্র
পুজোর একটা রাত। সেই রাতকে আলোর রোশনাইয়ে ভরিয়ে তুলতে আতসবাজি বানান পটাশপুর-১ ব্লকের প্রসূন পড়্যা (নাম পরিবর্তিত)। বানান বেআইনি শব্দবাজিও। এই বাজি বানাতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন কয়েকদিন আগে। বাজি পোড়াতে গিয়ে ষোলো বছর আগে উড়ে গিয়েছে ডান হাতের একটি অংশও। কিন্তু থামতে পারেননি প্রসূন। কারণ, বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, সন্তানের মুখে অন্ন তুলে দিতে এই পেশা ছাড়া আর অন্য কোনও পথ খোলা নেই প্রতিবন্ধী ওই যুবকের। তাঁর অভিযোগ, প্রতিবন্ধী হওয়ার পরেও কোনও প্রতিবন্ধী ভাতা পাননি তিনি।
বছর ছত্রিশের প্রসূনের আর্থিক টানাটানির সংসার। ছোটবেলা থেকে গানবাজনা ভাল লাগত। একটু বড় হওয়ার পরে পাশের গ্রামের এক বাজি প্রস্তুতকারীর কাছে রংমশাল তৈরি করতে শিখেছিলেন। তাতেই বাজির জগতে হাতেখড়ি। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গানবাজনা করার পাশাপাশি বাজি তৈরিতে তাঁর ক্রমেই ঝোঁক বাড়ে। পরিবার সূত্রে খবর, ২০০৩ সালে মার্চ মাসে গ্রামের এক অনুষ্ঠান বাড়িতে বাজি পোড়াতে গিয়ে কব্জীর নীচ থেকে হাত উড়ে যায়। কিন্তু তাতেও বন্ধ হয়নি বাজি তৈরির কাজ।
প্রসূনের অভিযোগ, প্রতিবন্ধী শংসাপত্র থাকা সত্ত্বেও তিনি ভাতা পাননি। ফলে কম পরিশ্রমে অর্থ উপার্জনের জন্য তিনি বাজি তৈরি করেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিবন্ধী হওয়ায় কঠিন পরিশ্রম করার ক্ষমতা হারিয়েছি। বাড়িতে আশির্ধ্বো মা, স্ত্রী এবং সন্তান রয়েছে। ওদের মুখে খাবার তুলে দিতে বাজি বানাই।’’
কয়েকদিন আগে ভগবানপুরে চড়াবাড় গ্রামে বেআইনি বাজি তৈরি করতে গিয়ে পুড়ে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। ওই ঘটনার পরে এগরা মহকুমা জুড়ে বেআইনি বাজি কারবারের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে। তাতে গত মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন প্রসূন। বর্তমানে জামিনে মুক্ত। কিন্তু এর পরেও যে বাজি বানানো ছাড়া তাঁরা আর অন্য কোনও গতি নেই, সেই কথা জানাচ্ছেন তিনি। প্রসূন জানান, দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করলেও রেশন কার্ড ছাড়া আজ পর্যন্ত জোটেনি অন্য সরকারি সুযোগ সুবিধা। বদ্ধা মা বার্ধক্য ভাতা পান না। বাড়িতে নেই সরকারি শৌচাগার। তাই বিপদ এবং প্রাণের ঝুঁকি জেনেও বেআইনি বাজি বানাচ্ছেন বলে দাবি। প্রসূন বলেন, ‘‘ষোলো বছর আগে প্রতিবন্ধী শংসাপত্র পেলেও সরকারী ভাতা জোটেনি। বৃদ্ধা মায়ের বার্ধক্য ভাতা হয়নি। বাজি তৈরি করতে হচ্ছে তাই। সরকারি ভাবে সহযোগিতা পেলে আমদের সুবিধা হয়।’’
পটাশপুর-১ এর বিডিও সুভাষকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধী যুবক সংসার চালাতে বেআইনি বাজি তৈরি করছেন, সরকারি ভাতা পাননি— এমন খবর নেই। বিষয়টি দেখে সহযোগিতা করা হবে।’’
দুঃখে প্রসূনের সঙ্গী হারমোনিয়াম। কাটা হাতেই রিডে সুর তোলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy