Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষায় প্রশ্নে নারী সুরক্ষা

চেনা শহরেই ভয়

মেদিনীপুরের রাস্তা কি নিরাপদ? এই ঘটনা সেই প্রশ্নও তুলে দিয়েছে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষা দেখাচ্ছে, জেলার সদর শহরের রাস্তাঘাটও খুব একটা নিরাপদ নয়।

আলো-আঁধারি: কুইকোটায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

আলো-আঁধারি: কুইকোটায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৪০
Share: Save:

হায়দরাবাদের অদূরে এক তরুণী পশু চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে পুড়িয়ে খুনে তোলপাড় গোটা দেশ। তদন্তে উঠে এসেছে, প্রথমে ওই তরুণীর স্কুটারের চাকা প্রথমে ফাটিয়ে দেওয়া হয়। তারপর স্কুটার সারানোর নাম করে তাকে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের পরে খুন করে চারজন। অভিযুক্ত ওই চারজনেরই পরে মৃত্যু হয়েছে পুলিশের এনকাউন্টারে।

মেদিনীপুরের রাস্তা কি নিরাপদ? এই ঘটনা সেই প্রশ্নও তুলে দিয়েছে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষা দেখাচ্ছে, জেলার সদর শহরের রাস্তাঘাটও খুব একটা নিরাপদ নয়। ইতিউতি ইভটিজিংয়ের শিকার হন মহিলারা, বিশেষ করে কিশোরী-তরুণীরা। শুক্রবার ওই সমীক্ষা রিপোর্ট জেলা পুলিশকে দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী মানছেন, ‘‘ইভটিজিং সংক্রান্ত সমীক্ষার রিপোর্ট আশা করি পুলিশের কাজে লাগবে।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে সমীক্ষা রিপোর্ট পেয়েছি। রিপোর্টটি আমাদের কাজে দেবে।’’

মেদিনীপুরের কোন কোন এলাকা ইভটিজিংপ্রবণ সেটা রিপোর্টে জানানো হয়েছে। সমীক্ষক দলের নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপিকা নীলাঞ্জনা দাস চট্টোপাধ্যায়। নীলাঞ্জনা বলেন, ‘‘সমীক্ষায় সঠিক তথ্য তুলে আনার চেষ্টা হয়েছে। এক-একটি এলাকায় একাধিকবার যাওয়া হয়েছে।’’

নীলাঞ্জনা জানালেন, সন্ধ্যাবেলায় সমীক্ষায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, শহরের কয়েকটি এলাকায় পুলিশ পেট্রোলিং একেবারেই থাকে না।’’ জেলার পুলিশ সুপার অবশ্য বলেন, ‘‘নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। মেদিনীপুরে পুলিশ পেট্রোলিং থাকে।’’ ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মহিলাদের উপর অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়ে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ’ (আইসিএসএসআর)-এর এক প্রজেক্টের অধীনে এই সমীক্ষা চলেছে প্রায় চার মাস ধরে। পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, মেদিনীপুরের ৩০টি এলাকায় কমবেশি ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১০-১২টি এলাকা বেশি বিপদ-প্রবণ। সমীক্ষক দলের এক সদস্যের কথায়, ‘‘আমরা দেখেছি, শহরের কিছু এলাকায় কিশোরী-তরুণী ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। অশালীন মন্তব্য, অশ্লীল ইঙ্গিত করা হয়।’’ সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েও অনেকেই পুলিশে জানান না। তাঁতিগেড়িয়ার এক ছাত্রী মানছে, ‘‘মাঝেমধ্যে একা পেলে ছেলের দল কটূক্তি করে। ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারি না।’’ জানা যাচ্ছে, স্কুল, কলেজ বা টিউশনে যাওয়ার পথে, অটো-টোটোয় বা বাজারে এ রকম অভিজ্ঞতা হয় অনেকেরই। কুইকোটার বাসিন্দা এক অভিভাবকের উদ্বেগ, ‘‘কোন সাহসে সন্ধ্যার পরে মেয়েকে টিউশনে পাঠাব বুঝতে পারছি না।’’

পুলিশের অবশ্য দাবি, ইভটিজিং মোকাবিলায় শহরের পথে সাদা পোশাকের পুলিশ ঘোরে। অভিযোগ পেলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে থানায় আনা হয়। তারপরে আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের আশ্বাস, ‘‘ওই সমীক্ষা রিপোর্টটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Paschim Medinipur Eveteasing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE