একটি শিবমন্দির। অন্যটি জগন্নাথের। প্রথমটি অন্তত ৫০০ বছর আগে তৈরি। দ্বিতীয়টি সদ্য প্রতিষ্ঠিত। বুধবারই তার দ্বারোদ্ঘাটন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এত কাল দিঘায় বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ ছিল প্রথম মন্দিরটিই। কিন্তু দিঘায় ‘জগন্নাথধাম’ (সরকারি খাতায় তা-ই বলা হচ্ছে) এখন জনসাধারণের জন্য খুলে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, দিঘা-ওড়িশা সীমানায় অবস্থিত সেই পুরনো চন্দনেশ্বর মন্দিরে কি আগের মতোই ভক্তদের সমাগম ঘটবে?
হিন্দুদের কাছে ওড়িশার চন্দনেশ্বর মন্দিরের মাহাত্ম্য সুগভীর। এই মন্দিরে প্রাচীন শিবলিঙ্গের অধিষ্ঠান। মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করতে সেখানে যুগ যুগ ধরে ভিড় জমায় ভক্তকুল। শিশুর মস্তক মুণ্ডন করা হয় সেখানে। ঈশ্বরের চরণে প্রার্থনা জানাতে মন্দিরের চার পাশে দণ্ডিও কাটেন অনেকে। মন্দিরের পাশে একটি পুকুর রয়েছে। সেখানেও স্নান করেন ভক্তেরা। পুণ্যার্জনের এত সুযোগ যেখানে, সেই মন্দিরের গুরুত্ব কখনওই কমবে না বলে মনে করছেন চন্দনেশ্বরের সেবায়েত গোবিন্দপ্রসাদ দাস অধিকারী।
আরও পড়ুন:
প্রবীণ ওই সেবায়েত জানান, কথিত আছে, কোনও এক সময়ে ওড়িশার বালেশ্বরের ভোগরাই ব্লকের তালসারি থানা এলাকার হুগলি গ্রামে হোগলা খেতে গরু চরাতে যেতেন লক্ষ্মী নামে এক মহিলা। এক দিন তিনি নজর করেন, তাঁর গরু বাড়ি ফিরে আর দুধ দিচ্ছে না। এর পর হোগলা খেতে গিয়ে লক্ষ্মী দেখেন, একটি চন্দনগাছের কাছে তাঁর গরুটি দুধ দিচ্ছে। আর সেই দুধ গিয়ে পড়ছে শিবলিঙ্গের উপর। সেই কারণেই মন্দিরের নাম চন্দনেশ্বর।
চন্দনেশ্বর মন্দিরের সেবায়েতরা জানান, মূলত চৈত্র মাসে মন্দিরে ভক্তদের সমাগম সবচেয়ে বেশি হয়। চৈত্রের ১৭ তারিখ থেকে বহু ভক্ত পৈতে গ্রহণ করেন। তাঁরা গাজন পর্যন্ত প্রত্যেক দিন নির্জলা উপবাস আর রাতে হবিষ্যি করেন। বুধবার যখন জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, তখনও চন্দনেশ্বর মন্দিরে অনেক ভক্তই পুজো দিতে এসেছিলেন। তাঁদের এক জন হুগলির বলাগড়ের বাসিন্দা মঞ্জিরা ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের কাছে চন্দনেশ্বর মন্দিরের গুরুত্ব কখনও কমবে না। আমরা আগেও যেমন এসেছি, তেমনই আসব।’’ মেদিনীপুরের রেখা দাস বলেন, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এখানে আসি। আমাদের মতো আরও অনেকেই আসেন। আমাদের কাছে দিঘা ঘোরার থেকেও চন্দনেশ্বর মন্দিরে আসা বেশি জরুরি।’’ এখন থেকে তিনি দিঘার জগন্নাথ মন্দিরেও যাবেন? রেখার জবাব, ‘‘অবশ্যই। এত দিন পুরী যেতে হত। এখন আমাদের এখানেই জগন্নাথদেবের মন্দির। দিঘায় এসে চন্দনেশ্বরও ঘোরা হবে, জগন্নাথধামও যাওয়া হবে।’’
পৌরাণিক মাহাত্ম্য না থাকলেও তীর্থস্থান হিসাবে জগন্নাথ মন্দিরের গুরুত্ব কোনও অংশেই কম হবে না বলে মনে করছেন পুরীর মন্দিরের অন্যতম প্রধান সেবায়েত রাজেশ দয়িতাপতি। তিনি বলেন, ‘‘জগন্নাথদেবের ইচ্ছাতেই দিঘায় তাঁর প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়েছে। এই মন্দিরও শীঘ্রই মানুষের মনে জায়গা পাবে। আগামী দিনে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরও এক অনন্য স্থাপত্য হিসেবে পরিগণিত হবে।’’
রামনগরের বাসিন্দা পেশায় টোটোচালক মাধব দাসের মত, দিঘায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের একটা বড় অংশ ওড়িশার চন্দনেশ্বর মন্দির দর্শন করতে যান। এ ছাড়াও সেখানকার ভুষেণ্ডেশ্বর মন্দির (চন্দনেশ্বর পেরিয়ে আরও ১০-১২ কিলোমিটার দূরে), রাধাকৃষ্ণ মঠ দেখতে যান অনেকে। কিন্তু দিঘায় কোনও তীর্থস্থান না থাকায় ভক্তেরা সমুদ্রসৈকতে ঘুরতেন। এখন দিঘার জগন্নাথ মন্দির দেখার জন্যেও পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে বলেই জানাচ্ছেন মাধব।
- এ বার দিঘার মুকুটে নতুন পালক হিসাবে যোগ হচ্ছে জগন্নাথ মন্দির।
- বুধবার অক্ষয়তৃতীয়ার শুভ লগ্নে দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
- বুধবার সকাল থেকে শুরু হয় হোমযজ্ঞ। বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যে জগন্নাথের বিগ্রহে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়। তার পর নিজহাতে মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করেন মুখ্যমন্ত্রী। আরতিও করেন।
-
পুরীর মন্দিরের নিমকাঠ দিঘায় আসেনি, বিতর্কে ইতি টানল ওড়িশা সরকার! ‘বদনাম কেন রটালেন?’ প্রশ্ন তুললেন মমতা
-
মন্দিরের পাশে লেখা ‘জগন্নাথ ধাম’ উধাও হয়নি, দাবি করল পুলিশ! দায়ের করা হল গুজব ছড়ানোর অভিযোগে মামলা
-
মন্দিরের পাশে লেখা ‘জগন্নাথ ধাম’ উধাও! কৌতূহল দিঘায়, ছবি দিলেন শুভেন্দু, ব্যাখ্যা দিলেন অখিল এবং রাধারমণ
-
জগন্নাথধাম গায়ে লেগেছে, এত হিংসে কেন? আমরা তো পুরীতে যাই, ওড়িশা সরকারকে তোপ মমতার! আর কী বললেন?
-
দিঘায় জগন্নাথের মন্দিরে মাত্র সাড়ে ৩ দিনে ১০ লক্ষ পুণ্যার্থী! দাবি ইসকনের রাধারমণের, পুজো হচ্ছে বাংলার মডেলেই