
দিঘার জগন্নাথধামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে সোনার ঝাঁটা উপহার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রথযাত্রার সময় সোনার ঝাঁটা দিয়ে জগন্নাথদেবের যাওয়ার পথ ঝাঁট দেওয়া হয়। এই রীতি বহু প্রাচীন। সেই রীতি মেনেই সোনার ঝাঁটা উপহার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। আগাগোড়া সোনার ওই ঝাঁটাটি তৈরির জন্য নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আগেই ৫,০০,০০১ টাকা দিয়েছিলেন তিনি।
দিঘার জগন্নাথধামের স্থাপত্যশৈলীও চোখ ধাঁধানো। নাটমন্দিরটি দাঁড়িয়ে রয়েছে ১৬টি স্তম্ভের উপরে। মূল মন্দিরে রয়েছে ভোগমণ্ডপ, নাটমন্দির, জগমোহন এবং গর্ভগৃহ। ভিতরে সিংহাসনে রয়েছে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি। নিমকাঠের তৈরি মূল বিগ্রহের পাশাপাশি পাথরের মূর্তিও রয়েছে। এ ছাড়া, রয়েছে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহও।
প্রায় ২০ একর এলাকা জুড়ে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে দিঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরি করা হয়েছে। নবনির্মিত এই মন্দিরের পরিচালনার দায়িত্ব গিয়েছে ইসকনের হাতে।
শুভ ক্ষণে মন্দিরের দ্বার উন্মোচন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। দরজা ঠেলে ঢুকলেন মন্দিরের ভিতরে। ভিতরে একঝলক দেখা গেল জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার বিগ্রহ। বিগ্রহের সামনে আরতিও করলেন মমতা।
অক্ষয়তৃতীয়ার মাহেন্দ্রক্ষণ দুপুর ৩টে থেকে ৩টে ১৫ মিনিট পর্যন্ত। তাই ওই সময়ের মধ্যে মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন হবে। দ্বারোদ্ঘাটন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা নিজে। তার পর পাঁচ মিনিটের জন্য মন্দিরের দরজা সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন হবে। তার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। প্রথমেই মমতা উপস্থিত শিল্পী, পুরোহিতবৃন্দ, সন্ন্যাসী, তারকা এবং স্থানীয় মানুষকে ধন্যবাদ জানান। যাঁরা এই মন্দির তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, সেই সব স্থপতি এবং শ্রমিকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান। মমতা বলেন, ‘‘আমি মনে করি, এই মন্দির আগামী হাজার হাজার বছর ধরে তীর্থস্থান এবং পর্যটনস্থল হিসাবে উন্মাদনার প্লাবন তৈরি করবে। এই মন্দির সকলের জন্য। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, সবারে করি আহ্বান।’’
শ্রীরাধার পর একে একে মঞ্চে গান গাইতে ওঠেন রূপঙ্কর বাগচী এবং ইমন চক্রবর্তী। গান শেষে শুরু হয়েছে নৃত্যানুষ্ঠান। ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করছে নাচের দল।
নৃত্য পরিবেশন করছে ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের দল। ছবি: ফেসবুক।
জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে এসেছেন ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেব, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, রূপঙ্কর বাগচী, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, জুন মালিয়া, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত মোহতা, অরিন্দম শীল, লাভলি মৈত্র, দিগন্ত বাগচী-সহ বাংলা বিনোদন দুনিয়ার নানা পরিচিত মুখ। এসেছেন দেবলীনা কুমার, ভিভান ঘোষেরাও।
জিতের পরে মঞ্চে ওঠেন সঙ্গীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। প্রথম গানটি গাওয়ার পর মমতার অনুরোধে আরও একটি গান গেয়েছেন তিনি। এর পর গান গাইতে মঞ্চে উঠলেন শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও মুখ্যমন্ত্রীর লেখা দু’টি গান পরিবেশন করবেন।
অদিতির পরে সঙ্গীত পরিবেশন করছেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। দু’টি গান গাইবেন তিনি। দু’টি গানেরই গীতিকার, সুরকার মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং।
দর্শকাসনে গিয়ে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে রয়েছেন সাংসদ অভিনেতা দেব, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সঙ্গীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী।
দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে পৌঁছোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বসলেন নির্দিষ্ট আসনে। মন্দিরের বাইরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। সঙ্গীত পরিবেশন করছেন রাজারহাট গোপালপুরের বিধায়ক অদিতি মুন্সি। আর কিছু ক্ষণ পরেই মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন হবে।
নিমকাঠের তৈরি জগন্নাথ মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা সম্পন্ন হয়েছে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অন্যতম প্রধান সেবায়েত রাজেশ দয়িতাপতির নেতৃত্বে পুরোহিতেরা প্রাণপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। এর পর বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ পাথরের জগন্নাথে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন ইসকনের সেবায়েতরা। একই সঙ্গে রাধাকৃষ্ণের পাথরের মূর্তিতেও প্রাণপ্রতিষ্ঠা সম্পন্ন হবে।
শুরু হল বিগ্রহে প্রাণপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া। রুদ্ধ দরজার ভিতরে চলছে প্রাণপ্রতিষ্ঠা। জগন্নাথের সঙ্গে রাধাকৃষ্ণের মূর্তিতেও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রাণপ্রতিষ্ঠার মাহেন্দ্রক্ষণ বুধবার সকাল ১১টা ১০ থেকে ১১টা ৩০ মিনিট। ওই ২০ মিনিটের মধ্যেই দেবতার সর্বাঙ্গে কুশ স্পর্শ করানো হবে। পাথরের মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন ইসকনের সন্ন্যাসীরা। কাঠের জগন্নাথ মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন পুরীর মন্দিরের রাজেশ দয়িতাপতির নেতৃত্বাধীন পুরোহিতেরা। প্রাণপ্রতিষ্ঠার পর জগন্নাথের স্নান এবং বস্ত্র পরিধানের প্রক্রিয়া সারা হবে। তার পরে ৫৬ ভোগ অর্পণ করা হবে জগন্নাথের উদ্দেশে।
বুধবার প্রথম যে মহাযজ্ঞ হবে, সেই যজ্ঞের সময় বিগ্রহকে চার দিক দিয়ে ঘেরা হবে সোনা, রূপা এবং তামার তার দিয়ে। সেই তিন ধাতুর ‘কার’ বাঁধা রয়েছে প্রধান পুরোহিতের কোমরে। এর পর বিগ্রহের সামনেই মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হবে যজ্ঞকুণ্ড এবং কুম্ভকুণ্ড (ঘটে জল রেখে তৈরি হয় কুম্ভকুণ্ড)।
যজ্ঞ চলছে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে। ছবি: পিটিআই।
মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছেন তৃণমূলের একঝাঁক নেতা, সাংসদ, বিধায়ক। মঙ্গলবারও উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের তারকা সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে জুন মালিয়া, বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। মূল যজ্ঞমঞ্চের অদূরে মঞ্চে দেখা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। টলিউডের নামী প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা, গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তী, অভিনেতা ও চিত্রপরিচালক অরিন্দম শীল, দেবলীনা কুমার, শিল্পপতি রুদ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখকেও দেখা গিয়েছিল মন্দিরের কাছে তৈরি মঞ্চে। মমতা বলেন ‘‘বুধবার অনুষ্ঠান আছে। সে জন্য অদিতি (মুন্সি, গায়িকা, বিধায়ক) এসেছে। ডোনা গাঙ্গুলি, জিৎ গাঙ্গুলি এসেছে। দেব, রচনা, দেবলীনা, সকলেই এসেছে।’’ যজ্ঞের সময় মুখ্যমন্ত্রীর পাশে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা তথা মমতার ভ্রাতৃবধূ লতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা দিঘায় পৌঁছোনোর আগে থেকেই মন্দিরের প্রাক্-দ্বারোদ্ঘাটন পর্বের ক্রিয়াদি শুরু হয়ে গিয়েছিল। গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে যাগযজ্ঞ। প্রথমে বাস্তুপুরুষের উদ্দেশে যজ্ঞ হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল নবনির্মিত কাঠামোকে অপদেবতা বা অপশক্তির কবল থেকে মুক্ত করা। যজ্ঞের পরে দেবতার প্রসাদ অর্পিত হয়েছে অপদেবতার উদ্দেশে। তার পর থেকে বিবিধ উপচার এবং যজ্ঞাদি হয়েছে গত কয়েক দিন ধরে। সোমবার থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতাও সপার্ষদ দিঘাতেই রয়েছেন। মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটনের পরের দিন, বৃহস্পতিবার কলকাতায় ফেরার কথা তাঁর।
কলিঙ্গ শৈলীতে তৈরি জগন্নাথদেবের মন্দিরটি পুরীর মন্দিরের আদলে তৈরি। ২০১৮ সালে পূর্ব মেদিনীপুর সফরে গিয়ে দিঘায় ওই মন্দির তৈরির ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কোভিড পর্বে মন্দির তৈরির কাজ বন্ধ ছিল। তবে পরে দ্রুত গতিতে শেষ হয় মন্দিরের কাজ। ‘সম্পূরা’ আদলে এই মন্দির গড়তে রাজস্থান থেকে অন্তত ৮০০ কারিগর আনা হয়েছিল। এই কারিগরদের অনেকেই অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মূল মন্দিরে রয়েছে ভোগমণ্ডপ, নাটমন্দির, জগমোহন এবং গর্ভগৃহ। নাটমন্দিরটি দাঁড়িয়ে রয়েছে ১৬টি স্তম্ভের উপরে। সিংহাসনে থাকবে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি।
সকাল ১১টা ১০ থেকে ১১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে রুদ্ধ দরজার ভিতরে জগন্নাথের বিগ্রহে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হবে। তার পর শুরু হবে অন্যান্য আচার। মুখ্যমন্ত্রীই জানিয়েছেন, বুধবার বেলা আড়াইটে থেকে শুরু হবে অনুষ্ঠান। ৩টের সময় দ্বার উদ্ঘাটন রয়েছে। তার পর ৫ মিনিটের জন্য মন্দির খুলে দেওয়া হবে। সব শেষে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অক্ষয় তৃতীয়ার সকালেও যজ্ঞ চলছে দিঘার জগন্নাথধামে। রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জগন্নাথ মন্দিরের শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে সোমবার থেকে মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের সৈকতনগরীতে। মঙ্গলবার দুপুরেও তিনি মহাযজ্ঞে যোগ দেন। পূর্ণাহুতির পরে মমতা বলেন, ‘‘সমস্ত ধর্ম-বর্ণের মানুষ এসেছেন এখানে। প্রত্যেকেই আমাদের অতিথি। ধর্ম কখনও মুখে প্রচার করে হয় না। ধর্মে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার জিনিস।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy