জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে দুর্বাচটি খালের একাধিক বাঁশের সাঁকো। সেগুলির মেরামতির চেষ্টা চলছে। দাসপুরে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।
মেিদনীপুর: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব পড়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরে। বুধবার দিনভর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বয়েছে। হয়েছে বৃষ্টি। ঝড়বৃষ্টিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোথায়, কী ক্ষতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দফতর প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ করেছে। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, বুধবারের ঝড়-বৃষ্টিতে জেলায় বিভিন্ন ক্ষেত্র মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ব্লক থেকে জেলায় রিপোর্ট এসেছে। জেলা থেকে রাজ্যে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।
জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘ঝড়বৃষ্টিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোথায়, কী ক্ষতি হয়েছে দেখা হচ্ছে।’’ কৃষি ছাড়া আর কোন কোন ক্ষেত্রে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে? জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সুদীপ সরকার বলেন, ‘‘বিভিন্ন ক্ষেত্রের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার প্রক্রিয়া চলছে।’’ প্রশাসন সূত্রে খবর, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গতদের দরকার মতো সাহায্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ব্লক প্রশাসনকে। ত্রাণ সামগ্রী হিসেবে জেলা থেকে ত্রিপল, শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এখনও কিছু এলাকার রিপোর্ট আসা বাকি। সে সব এলে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি হবে। ক্ষতিপূরণের কি হবে? জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সরকার যেমন ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করবে, সেই মতো দেওয়া হবে।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘ব্লকে ত্রাণ সামগ্রী রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে ব্লক ও পঞ্চায়েতগুলিকে।’’
প্রশাসনের এক সূত্রের দাবি, বুধবারের ঝড়-বৃষ্টিতে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। তিল, আনাজ, পান চাষেরও ক্ষতি হয়েছে। জেলার এক কৃষি আধিকারিক শোনাচ্ছেন, ‘‘ঝড় আর বৃষ্টি একসঙ্গে হওয়ায় জমির ফসলের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুধু ঝড় কিংবা শুধু বৃষ্টি হলে হয়তো এতটা ক্ষতি হত না।’’ তিনি বলেন, ‘‘আগাম সতর্কতা ছিল। মাঠের পাকা বোরো ধান দ্রুত কেটে ফেলার কথা চাষিদের বলা হয়েছিল। একাংশ চাষি সব ধান কাটতে পারেননি। জমিতে জল থাকায় ফসল নষ্ট হচ্ছে। অনেক আনাজের মাচা, পান বরজ ভেঙে গিয়েছে। আনাজের জমিতে জমা জল দ্রুত বের করার কথা চাষিদের জানানো হয়েছে।’’ প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী, জেলায় ৬৪,০১২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আনুমানিক ২,১৩,৬৩৫ মেট্রিক টন ফসলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর্থিক মূল্য প্রায় ৪৫৫ কোটি টাকা। জেলার ৫,৫৯৩টি মৌজায় চাষ কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, প্রায় ৯০০ হেক্টর জমির ফুল, ফল চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় আড়াইশো বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। ৩৩৯টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৪,৭২৯টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪২৯টি গাছ উপড়ে গিয়েছে জেলা জুড়ে। একটি বাঁধ ভেঙেছে। কিছু রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সূত্রের দাবি, চাষে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই সূত্রের আরও দাবি, জেলার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার গ্রাম ঝড়-বৃষ্টিতে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির জন্য আপাতত ত্রিপলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলার অনেকেই অবশ্য মানছেন, আমপানের যে প্রভাব পড়েছিল, তুলনায় ইয়াসের প্রভাব তার চেয়ে অনেক কমই পড়েছে জেলায়। খড়্গপুরের (গ্রামীণ) বিধায়ক দীনেন রায়ও বলেন, ‘‘এ বার ঘূর্ণিঝড়ে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি জেলায়। কিছু এলাকায় পরিস্থিতির খানিক অবনতি হয়েছিল। বৃহস্পতিবার থেকে সে সব এলাকার উন্নতি হচ্ছে।’’ জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘তিন লক্ষাধিক মানুষকে আশ্রয় শিবিরে সরানো হয়েছিল। অনেকে গবাদি পশুও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়েছেন। অনেক ক্ষতি এড়ানো গিয়েছে।’’ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় বৃহস্পতিবার থেকে অনেকে শিবির ছেড়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy