বিক্ষোভের মুখে সৌমেন । নিজস্ব চিত্র
মাতঙ্গিনী হাজরার শহিদ দিবস স্মরণ করতে ঘটা করে বর্ণাঢ্য মিছিলের আয়োজন করেছিল শাসকদল তৃণমূল, বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেস-সহ একাধিক সংগঠন। বৃহস্পতিবার সকালে তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের কাঁকটিয়া বাজার থেকে মাতঙ্গিনী হাজরার জন্মস্থান হোগলা গ্রাম পর্যন্ত তৃণমূলের মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা তমলুকের বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্র। কিন্তু মিছিলের তাল কাটে হোগলা গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের বিক্ষোভে। মাতঙ্গিনী হাজরার জন্মস্থানে যাওয়ার গ্রামীণ রাস্তা জল-কাদায় বেহাল হয়ে থাকায় এলাকাবাসীর ক্ষোভের মুখে পড়েন সৌমেন।
মাতঙ্গিনীর জন্মভিটে যাওয়ার পথে গ্রামের রাস্তার প্রায় ৫০০ মিটার এখনও মোরাম-ইটের। ফি বছর বর্ষায় রাস্তা জল কাদায় যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার ওই রাস্তা পেরিয়ে সৌমেন-সহ ব্লক তৃণমূলের নেতা, কর্মী-সমর্থকরা যাওয়ার সময়েই মহিলারা বিক্ষোভ দেখান। রাস্তা পাকা করার দাবি তোলেন। মিছিলের সামনে থাকা সৌমেনকে ঘিরে গ্রামের মহিলাদের বিক্ষোভে অসস্তিতে পড়েন ব্লক তৃণমূল নেতারা।পরিস্থিতি সামাল দিতে সৌমেন বাসিন্দাদের ওই রাস্তা দ্রুত পাকা করার আশ্বাস দেন। বিক্ষোভে সামিল শেফালি ঘড়া ও লক্ষ্মী ঘড়া বলেন, ‘‘মাতঙ্গিনীর জন্মভিটেয় যাওয়ার এই রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে বেহাল। এলাকার ছাত্রছাত্রী ও বাসিন্দারা প্রতিদিন যাতায়াত করেন। কিন্তু বড় বড় গর্ত হয়ে বেহাল অবস্থা। যাতায়াতে খুবই সমস্যায় পড়তে হয়।’’ গ্রামবাসীর অভিযোগ, রাস্তা চওড়া হবে বলে রাস্তার ধারে গাছ কাটা হয়েছিল।কিন্তু রাস্তা পাকা বা চওড়া হয়নি। তাই আজ বিধায়কের কাছে রাস্তা পাকার দাবি জানানো হয়েছে।
মিছিলে থাকা ‘শহিদ মাতঙ্গিনী হাজরা স্মৃতি রক্ষা কমিটি’র সম্পাদক তথা হোগলা গ্রামের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য রবীন্দ্রনাথ সামন্ত বলেন, ‘‘রাস্তার বেশিরভাগ অংশই পাকা হয়ে গিয়েছে। মাঝে মাত্র ৫০০ মিটার হয়নি। এটা দুঃখের। তবে রাস্তার ওই অংশ পাকা করার জন্য বরাদ্দ অর্থ ফেরত গিয়েছে। আমরা জেলাপরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতিকে বলেছি। চেষ্টা চলছে যাতে রাস্তা পাকা হয়।’’ বাসিন্দাদের বিক্ষোভ নিয়ে সৌমেন বলেন, ‘‘বাংলার রাস্তা আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরি করে চলেছেন। আমি দেখলাম সামান্য ৫০০ মিটার এখনও পাকা হয়নি। এখানে আমাদের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, এলাকার প্রধান, উপপ্রধান আছেন। আমি তাঁদের সাথে কথা বলে অতি সত্বর এই রাস্তা পাকা করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’
বিজেপি’র তরফে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে কাঁকটিয়া বাজারের বিদ্যাসাগরের মূর্তির পাদদেশ থেকে হোগলা এবং আলিনান গ্রাম পর্যন্ত মোটর সাইকেল র্যালি হয়। র্যালিতে ছিলেন পুরুলিয়ার সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো, আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক দীপক বর্মন, দলের রাজ্য সম্পাদক নবারুণ নায়েক, তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় সহ স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। বেহাল রাস্তা নিয়ে সৌমেনকে ঘিরে গ্রামবাসীর বিক্ষোভ প্রসঙ্গে সুকান্ত বলেন, ‘‘তিনি (সৌমেন মহাপাত্র) এখানকার বিধায়ক। আগে তো মন্ত্রী ছিলেন। এটুকু রাস্তার ব্যবস্থা তো করতেই পারতেন। আড়াই কিলোমিটার করতে কত টাকা লাগবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘মাতঙ্গিনী হাজরার বাপেরবাড়ি হোগলা থেকে শ্বশুরবাড়ি আলিনান গ্রামে যাওয়ার রাস্তার এমন অবস্থা, যে কোনও সময় মানুষ পড়ে যেতে পারে। এটা আমাদের লজ্জা।’’ তিনি আরও জানান, এদিন মাতঙ্গিনী হাজরা যেখানে জন্ম নিয়েছিলেন সেই জন্মভিটেতে ‘হুকিং’ করে আলো জ্বালানো হচ্ছে দেখে তিনি দুঃখ পেয়েছেন। যিনি দেশের জন্য জীবন দিয়ে গেলেন। তাঁর স্মৃতি বিজড়িত ঘরে ‘হুকিং’ করে আলো জ্বালাতে হচ্ছে। বাঙালি হিসেবে আমাদের সকলের লজ্জা। এই অবস্থা বদলাতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy