Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Yaas

বাঁধ পাহারায় রাত জাগছেন গ্রামবাসী

বিভিন্ন এলাকায় নদী বাঁধ রক্ষা করতে এ দিন বালি এবং মাটির বস্তা দিয়ে বাঁধ উঁচু করার কাজ চালানো হয়।

বৃহস্পতিবার সকালেও হল জলোচ্ছ্বাস। শঙ্করপুরের কাছে জামড়া, চাঁদপুর এলাকায় ভাঙল গার্ডওয়াল।

বৃহস্পতিবার সকালেও হল জলোচ্ছ্বাস। শঙ্করপুরের কাছে জামড়া, চাঁদপুর এলাকায় ভাঙল গার্ডওয়াল। ছবি: কিংশুক আইচ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক এবং ভগবানপুর শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২১ ০৬:২৬
Share: Save:

সকালের জোয়ারের সময় প্লাবিত হয়েছে এলাকা। কোথাও বাঁধ ভেঙে তো কোথাও বাঁধ টপকে জল প্রবেশ করেছে গ্রামে। সন্ধ্যার জোয়ারের সময় সেই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রুখতে এবং বাঁধ যাতে না ভাঙে, সে জন্য বুধবার রাতে বাঁধ পাহারা দিলেন মহিষাদলের বিভিন্ন এলাকার বহু বাসিন্দা। আর বৃহস্পতিবারই নবান্নে ইয়াসে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পর্যালোচনা করতে গিয়ে সেচ দফতরের সচিব নবীন প্রকাশকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন করলেন, ‘‘দিঘায় পুরো বাঁধ কী ভাবে ভাঙল? বাঁধ তৈরি করতে এত সময় কেন লাগছে? টাকা তো কম নিচ্ছে না। সব টাকা কি জলে ঢালছি? এই ঘটনার তদন্ত করে দেখা হবে।’’

মহিষাদলের দনিপুর, অমৃতবেড়িয়া, বাড়-অমৃতবেড়িয়া, ভোলসরা প্রভৃতি গ্রামে বুধবার রাতে জেনারেটর চালিয়ে, আলো জ্বালিয়ে রাত জেগে নদীর বাঁধে পাহারা দিয়েছেন স্থানীয়েরা। রাতে জোয়ারের জলোচ্ছ্বাস কমায় উদ্বেগ কিছুটা কমলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের ঝোড়ো বাতাস এবং বৃষ্টি শুরু হওয়ায় চিন্তা বেড়েছে ওই বাসিন্দাদের। মহিষাদলের অমৃতবেড়িয়া, বাড় অমৃতবেড়িয়া, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের সোয়াদিঘি, জামিত্যা, খারুই-সহ বিভিন্ন এলাকায় নদী বাঁধ রক্ষা করতে এ দিন বালি এবং মাটির বস্তা দিয়ে বাঁধ উঁচু করার কাজ চালানো হয়।

এদিন সকালে জোয়ার আসার আগে অমৃতবেড়িয়ার বাসিন্দারা মেশিন ভ্যানে করে অন্য জায়গা থেকে বালি-মাটি ভরা বস্তা এনে রূপনারায়ণ বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতি করছেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা প্রশান্ত জানা, সৌম্যদীপ বেরাদের সঙ্গে বিষ্ণুপ্রিয়া মান্না, সাইমা বিবি, কোহিনুর বিবি-সহ শতাধিক বাসিন্দা সেই কাজ হাত লাগিয়েছিলেন। প্রশান্ত বলেন, ‘‘গতকাল জোয়ারের ধাক্কায় বাঁধের অবস্থা খারাপ হওয়ায় পঞ্চায়েতকে জানানো হয়েছিল। বাঁধ মেরামতির জন্য পঞ্চায়েত থেকে বস্তা দেওয়ার পরে আমরা সবাই মিলে সকাল থেকেই বাঁধ মেরামতি ও উঁচু করার কাজ করছি।’’ একই ভাবে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের সোয়াদিঘি গ্রামের কাছে স্থানীয় বাসিন্দারা মাটির বস্তা দিয়ে বাঁধ উঁচু করার কাজ চালান। সেচ দফতরের পাশাপাশি স্থানীয় পঞ্চায়েতের উদ্যোগে গ্রামবাসীরা নদী বাঁধ মেরামতি ও উঁচু করার কাজ চালিয়েছেন এ দিন।

বুধবার সকালে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ও পূর্ণিমার ভরা কোটালের জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে জেলার সমুদ্র উপকূল ও নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রূপনারায়ণ, হলদি, হুগলি নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের অবস্থা দুর্বিসহ হয়ে গিয়েছে। বুধবার রাতে ভরা জোয়ারের জলোচ্ছ্বাস কমলেও রাত ভর জেলাজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। কৃষি দফতরের হিসাব অনুযায়ী, বুধবার সকাল ৮ টা থেকে বৃস্পতিবার সকাল ৮ টা পর্যন্তজেলায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪৫ মিলিমিটার। এর মধ্যে এগরায় সবচেয়ে বেশি ৮৬.৮ মিলিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর পরে নন্দীগ্রামে হয়েছে ৮২.২ মিমি, পাঁশকুড়ায় ৪৫ মিমি, কাঁথিতে ৪৪.১ মিমি, ভগবানপুরে ৪০.৪ মিমি, কাজলাগড়ে ৩৬.২ মিমি, পটাশপুরে ১৯.১ মিমি এবং দিঘায় ৬ মিমি বৃষ্টিপাত। ‘ইয়াস’এর প্রভাবে গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত জেলায় গড়ে মোট ১৪১.৭ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এগরা মহকুমায় কেলেঘাই নদীর জল উপচে এখনও প্লাবিত ভগবানপুরে একাধিক গ্রাম। বাড়ি ছেড়ে প্রায় ছ’হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে স্কুলের ত্রাণ শিবিরে। এ দিন বানভাসি এলাকায় জলের স্তর কিছুটা নামলেও পূর্ণিমার ‌ভরা কোটালে ভাঙা নদী বাঁধ উপচে আবারও গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগে জেসিবি মেশিন দিয়ে ভাঙা নদী বাঁধ সারানোর চেষ্টা করা হলেও জলের তোড়ে বাঁধ স্থায়ী করা যায়নি। প্রশাসনের উদ্যোগে ওই এলাকার ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয় মানুষদের খিচুড়ি ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলাকায় পানীয় জলের ১৫ হাজার পাউচ, ব্লিচিং ও ওষুধ-সহ অন্য জীবাণুনাশক এলাকায় পাঠানো হয়েছে। ঘরছাড়া মানুষের দেওয়া হচ্ছে ত্রিপল।

ভগবানপুর-১ ব্লকের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে এ দিন বিডিও বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলন, ‘‘ছ’হাজার মানুষকে ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে। ত্রিপল, শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। কোটালে ফের গ্রামে জল ঢোকার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ভাঙা বাঁধ মেরামতি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Yaas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy