—নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা ভোটের আগে উপুড়হুস্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার রাজ্য বাজেটে সিভিক ভলান্টিয়ার, গ্রিন ও ভিলেজ পুলিশ থেকে শুরু করে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ভাতা বৃদ্ধি হয়েছে। বেড়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা, চুক্তিভিত্তিক গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের ভাতাও। যা দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, এত বাড়তি বরাদ্দ সরকারের ভাঁড়াতে কুলোবে তো!
সিভিক, গ্রিন ও ভিলেজ পুলিশের ভাতা এক হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা মুখপাত্র অরূপ দাসের কটাক্ষ, "কর্মসংস্থানের দিশা নেই। এই বাজেট লোকসভা ভোটের জন্য। সমকাজে সমবেতন হওয়া উচিত। আমরা মনে করি, সিভিকদের বেতন কুড়ি হাজার টাকা হওয়া উচিত।’’ ভিলেজ পুলিশের এক সময় ভাতা ছিল প্রায় ১৪ হাজার টাকা। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের পর তা কমিয়ে ১০ হাজার টাকা হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ ছিল। এ দিন ভাতা বৃদ্ধির পরেও তাদের বক্তব্য, হাজার টাকায় কিছু হবে না। বেলদা থানার ভিলেজ পুলিশ স্বরূপ পাত্রের কথায়, ‘‘ভাতা ৩-৪ হাজার টাকা বাড়ালে ভাল হত।’’ তবে ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ঘাটালের লছিপুর হাইস্কুলের শিক্ষক সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এটা সরকারের দয়ার দান নয়। কর্মীদের ন্যায্য পাওনাই উনি দিচ্ছেন।’’
চুক্তিভিত্তিক গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি- কর্মীদের ভাতা যথাক্রমে ৩,০০০ টাকা এবং ৩,৫০০ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা হয়েছে। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোত ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্য বাজেটে আমজনতা খুব খুশি।’’ লক্ষ্মীর ভান্ডারে বরাদ্দ বৃদ্ধির পরে এ দিন বিকেলে মেদিনীপুরে মিছিল করেন তৃণমূলের পুর-প্রতিনিধিরা। ছিলেন দলের কর্মীরা। মেদিনীপুরের পুরপ্রধান সৌমেন খানের দাবি, ‘‘প্রকল্পের উপভোক্তারা মিছিল করেছেন খুশিতে।’’ এই প্রকল্পে জনজাতি, তফসিলি মহিলাদের জন্য মাসিক ১২০০ টাকা ও অন্যদের ১০০০ টাকা ভাতা করা হয়েছে। মেদিনীপুর শহরের মিরবাজারের অন্তরা মণ্ডল বলেন, ‘‘এতদিন প্রতি মাসে পাঁচশো টাকা পেতাম। সেটা হাজার টাকা হওয়ায় আমার মতো গৃহিণীদের হাতখরচে সুবিধা হবে।’’ গত বিধানসভা ভোটে লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুফল পেয়েছে তৃণমূল। গত পঞ্চায়েত ভোটেও জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে মহিলাদের ভোট সবচেয়ে বেশি পড়েছিল।
একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ২১ লক্ষ জবকর্ড হোল্ডারকে চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাই দেওয়ার ঘোষণা করেছে রাজ্য। এ ছাড়াও ‘কর্মশ্রী’ নামে এক প্রকল্পে জব কার্ড হোল্ডারদের বছরে কমপক্ষে ৫০ দিন কাজের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ডেবরার মাড়োতলার বাসিন্দা একশো দিনের কাজের শ্রমিক গোপাল মাইতি বলেন, “লোকসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী যে টাকা দেবেন বলেছেন তা সত্যিই পেলে খুব ভাল লাগবে। তবে আমাদের কর্মসংস্থানের দিকটিও দেখা উচিত।’’
বেলপাহাড়ি, ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর, সাঁকরাইল-সহ বিভিন্ন ব্লকে বিভিন্ন গ্রামীণ হোম স্টে-র সংখ্যা দিন-দিন বাড়ছে। বেলপাহাড়ি টুরিজ়ম অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র বিধান দেবনাথ বলছেন, ‘‘পর্যটন খাতে আরও বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে তাতে জেলা পিছু গড়ে ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ। ঝাড়গ্রাম জেলার পর্যটন পরিকাঠামো ঢেলে সাজতেই অন্তত ২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। পর্যটনে বরাদ্দ বাড়লে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে।’’
রাজ্য বাজেটে পর্যটন শিল্পে গুরুত্ব দেওয়ায় খুশি গনগনি পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত গড়বেতা ১ পঞ্চায়েত সমিতি। গত ডিসেম্বরেই গনগনিকে চার বছরের জন্য লিজে দিয়ে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে পঞ্চায়েত সমিতি। সমিতির সহ সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ বলেন, "এ বার রাজ্য বাজেটে পর্যটন কেন্দ্রে হোম স্টে'র উপর গুরুত্ব আরোপ করে এই শিল্পে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। গনগনি পর্যটন কেন্দ্রেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে গনগনি।"
পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসাথীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে রাজ্য বাজেটে। দাসপুরের জোতঘনশ্যামের বাসিন্দা সোনার কারিগর গৌতম কুইলার মতে, “ঘোষণা মাফিক দ্রুত কাযর্কর হলে আমাদের মত হাজার হাজার সোনার কাজের সঙ্গে যুক্ত কারিগর, ছোট ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।’’ অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে সন্দীপ মল্লিক অবশ্য বললেন, “পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আগেও নানা ঘোষণা সরকারি ভাবে হয়েছে। সব যে কাযর্কর হয়েছে, এমনটা নয়। তবে স্বাস্থ্যসাথীতে আমাদের নথিভুক্ত হলে চিকিৎসার সমস্যা অনেকটা মিটবে।’’
(তথ্য সহায়তা: রঞ্জন পাল, বরুণ দে, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য, কিংশুক গুপ্ত, বিশ্বসিন্ধু দে, অভিজিৎ চক্রবর্তী, দেবমাল্য বাগচী)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy