Advertisement
E-Paper

রংবাহারি ছাতায় হার মেনেছে পাখিয়া, পেশা পাল্টাচ্ছেন শিল্পীরা

পাঁচ দশক আগেও গ্রাম বাংলার প্রতিটি বাড়িতে বর্ষাকালে দেখা যেত তালপাতার তৈরি বর্ষাতি বা পাখিয়া। তখনও আধুনিকতার ছোঁয়া গ্রামে সেভাবে কড়া নাড়েনি।

টেপরপাড়া রথের মেলায় বিক্রি হচ্ছে পাখিয়া।

টেপরপাড়া রথের মেলায় বিক্রি হচ্ছে পাখিয়া। নিজস্ব চিত্র।

গোপাল পাত্র

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪ ০৯:৪৭
Share
Save

আধুনিক সমাজে এই ‘পোশাক’ বেমানান। রংবাহারি ছাতা, প্লাস্টিকের বার্ষাতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়তে তেমন পারছে না তালপাতার তৈরি বর্ষাতি বা পাখিয়া। চাহিদা কমে যাওয়া এই বর্ষাতি তৈরির শিল্পীরা অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। তবে বয়স্ক ও কৃষকেরা বর্ষাকালে মাঠে চাষের কাজের জন্য এখনও অল্প বিস্তর এই বর্ষাতি ব্যবহার করেন। তাঁদের মুখ চেয়েই রথ মেলায় সামান্য কিছু ‘পাখিয়া’ বিক্রির দোকানের দেখা মিলছে। স্বল্প মূল্যেই তা বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতার।

পাঁচ দশক আগেও গ্রাম বাংলার প্রতিটি বাড়িতে বর্ষাকালে দেখা যেত তালপাতার তৈরি বর্ষাতি বা পাখিয়া। তখনও আধুনিকতার ছোঁয়া গ্রামে সেভাবে কড়া নাড়েনি। গ্রামের কমবেশি সকলেই পাখিয়া ব্যবহার করতেন, তৈরিও করতেন। এর চাহিদাও ছিল ভাল। যত বেশি লম্বা তালপাতা হবে, বাজারে সেই পাখিয়া দাম তত বেশি হতো। লাভের আশায় গ্রামে তাল গাছ থেকে পাতা কেটে আগাম সংগ্রহ করে, তা রোদে শুকিয়ে রাখতেন এই শিল্পীরা। বর্ষা নামার আগে সেই শুকনো তালপাতা কাটারি দিয়ে আকার মতো কেটে সূচ ও পাটের দড়ি দিয়ে ছাউনির মতো বাঁকিয়ে তা সেলাই করে দেওয়া হতো। যা মাথা নিয়ে অনেকটা উল্টো নৌকার মতো দেখতে লাগে।

একজন দক্ষ শিল্পী এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই তালপাতার এই বর্ষাতি তৈরি করতে পারে। কাঁচামাল তালপাতা সহজলভ্য বলে দামও বেশ সস্তা। একটি তালপাতার বর্ষাতির বর্তমান বাজারদর ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আগে বর্ষার মরসুমে এই বর্ষাতি রথের মেলায় কেনার হিড়িক পড়ত। রথের মেলায় গাড়ি ভর্তি করে আগের দিন থেকে তালপাতার বর্ষাতি মজুত করা শুরু হত। সেই বর্ষাতি বেচা কেনা ও চলত।

বর্তমানে শৌখিনতার যুগে পাখিয়ার জায়গা দখল করেছে রংবাহারি ছাতা আর প্লাস্টিতের বর্ষাতি। তেমন আর চাহিদা নেই পাখিয়ার। হাতে গোনা বয়স্ক কৃষকেরা মাঠে চাষাবাদের সময় পাখিয়া ব্যবহার করেন। চাহিদা না থাকায় তাই এবারে টেপরপাড়া রথের মেলায় সেভাবে আমদানি হয়নি তালপাতার পাখিয়ার। দু-একজন সামান্য কিছু পাখিয়া নিয়ে বসেছেন। গোকুলপুর থেকে আসা লক্ষ্মীরানি এবং তাঁর স্বামী পাখিয়া ও খড়ের তৈরি ‘হেস’ (একপ্রকার চাটাই) বিক্রি করতে এসেছেন। বংশানুক্রমিক এই পেশা তাঁদের। এবারও পাখিয়া তৈরি করেছেন বিক্রির আশায়। তবে সেভাবে কেউই কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বলে দাবি। লক্ষ্মীরানি বলেন, ‘‘আগের মতো সেই বাজার না থাকায় পাখিয়া কেউ তৈরি করতে চান না। হাতে গোনা কিছু প্রবীণ রথের সময় এই কাজ করেন। তবে যে পাখিয়া রথের মেলা আনা হয়, তার সবটা বিক্রিও হয় না। লোকসানের কারণে এই কাজ বন্ধ হতে বসেছে।’’

পাখিয়া শিল্পীর পরবর্তী পরবর্তী এই কাজ ছাড়ছেন। কেউ ভিন্‌ রাজ্যে শ্রমিকের কাজে গিয়েছেন। কেউ রাজমিস্ত্রির কাজে ঝুঁকছেন। ‘বুড়ো’ পাখিয়াও তাই পড়ে থাকছে অবহেলার অন্ধকারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Patashpur

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}