Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
TMC

কেশপুরে কোন্দল অন্তহীন

কেশপুরে তৃণমূল দ্বন্দ্বে জীর্ণ। পরিস্থিতি এমনই যে, পালাবদলের পরে গত ১২ বছরে এখানে সাত- সাতবার ব্লক সভাপতি পরিবর্তন করতে হয়েছে তৃণমূলকে।

Representational image of TMC.

তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। প্রতীকী ছবি।

বরুণ দে
কেশপুর শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৩৬
Share: Save:

নেতার ‘মুখ’ বদলায়। তবু তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল থামে না এ তল্লাটে! কখন, কী থেকে তৃণমূলের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধবে, কেউ জানে না!

গত নভেম্বরের ঘটনা। সেদিন বিকেলে কেশপুরে তৃণমূলের মিছিল ছিল। বিকেলের মিছিলের প্রস্তুতি ঘিরে সকালে চরকায় তৃণমূলের দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। মিছিলে যাওয়ার প্রস্তুতি সারতে দু’পক্ষ গ্রামের দু’দিকে জমায়েত হচ্ছিল। আচমকাই গোলমাল বাধে। বোমাবাজি হয়। পরিণতি? বোমায় রফিক আলি নামে এক তৃণমূলকর্মী মারাত্মক জখম হন। তাঁর ডান হাতের একটি আঙুল উড়ে ঘটনাস্থলেই পড়ে যায়।

কেশপুরে তৃণমূল দ্বন্দ্বে জীর্ণ। পরিস্থিতি এমনই যে, পালাবদলের পরে গত ১২ বছরে এখানে সাত- সাতবার ব্লক সভাপতি পরিবর্তন করতে হয়েছে তৃণমূলকে। গত কয়েক মাসেও নানা ঘটনায় কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি কেশপুরের আনন্দপুরে জনসভা করতে আসছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের সভার আগে দলীয় কোন্দলই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের কাছে। কোন্দলে রাশ টানতে অবশ্য তৎপর জেলা তৃণমূল। কয়েক দিন আগেই কেশপুরের যুযুধান পক্ষকে নিয়ে মেদিনীপুরে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ছিলেন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। বৈঠক শেষে মানস শুনিয়েছেন, ‘‘কেশপুর হচ্ছে আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন, আমাদের ভালবাসা, সংগ্রাম, এগিয়ে চলা, শক্তি, আমাদের ঘাঁটিও। আমরা কোনও দিন কেশপুরের এতটুকু ক্ষতি করতে দেবো না।’’ তৃণমূলের এই প্রবীণ নেতা জুড়েছেন, ‘‘এনাফ ইজ এনাফ। আমরা এক পরিবারের সদস্য হয়ে খুনসুটি করতে পারি। কিন্তু আঁচড়াআঁচড়ি করব না। এরপরেও যদি কেউ তার কোনও আচরণে দলকে খাটো করার চেষ্টা করে থাকে, সেটা কিন্তু বরদাস্ত করা হবে না।’’

কেশপুরে তৃণমূলে দুই গোষ্ঠী সক্রিয়। একদিকে দলের ব্লক সভাপতি প্রদ্যোত পাঁজার অনুগামীরা। অন্যদিকে, দলের তিন ব্লক সহ- সভাপতির অনুগামীরা। তিন ব্লক সহ- সভাপতি হলেন শ্যামল আচার্য, জাহাঙ্গীর খান এবং বিশ্বজিৎ বরদোলুই। প্রাক্তন ব্লক সভাপতি উত্তম ত্রিপাঠী, যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আশিক ইকবাল প্রমুখ এঁদের দিকেই বলে দলীয় সূত্রে খবর। ব্লক সভাপতি প্রদ্যোত মন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক শিউলি সাহার অনুগামী বলেই পরিচিত। ব্লকে দলের কোন্দল রয়েছে। প্রায় সব অঞ্চলেও কোন্দল রয়েছে। দীর্ঘদিন ব্লক সভাপতি ছিলেন সঞ্জয় পান। শিউলির সঙ্গে তাঁর ‘বিরোধ’ ছিল। অনেকে মনে করেছিলেন, ব্লক সভাপতি পদে পরিবর্তন হলেই দলে স্থিতাবস্থা আসবে। পরে সঞ্জয়কে সরিয়ে ব্লক সভাপতি করা হয়েছিল উত্তম ত্রিপাঠীকে। তখন উত্তমের সঙ্গে বিধায়কের ‘সুসম্পর্ক’ ছিল। অনেকের দাবি ছিল, বিধায়ক চেয়েছেন বলেই উত্তম ব্লক সভাপতি হয়েছেন। কয়েক মাস যেতে না- যেতেই ‘সম্পর্কে’ ফাটল ধরে। শিউলির সঙ্গে ‘বিরোধ’ বাধে উত্তমের। এরপর উত্তমকে সরিয়ে ব্লক সভাপতি করা হয়েছে প্রদ্যোতকে। সঙ্গে তিন ব্লক সহ- সভাপতিও রাখা হয়েছে। অনুমান, ব্লকে দলের মধ্যে ভারসাম্য রাখতেই এই পদক্ষেপ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে এতে ভারসাম্য ফেরেনি। বরং কোন্দল আরও বেড়েছে। কেশপুরের তৃণমূল নেতা মহম্মদ রফিকও সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার বিধায়কের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। রফিকের অনুযোগ, পুরনো কর্মীরা সম্মান পাচ্ছেন না।

কেন তাঁর বিরুদ্ধে দলেরই একাংশের এত ক্ষোভ? বিধায়ক শিউলি শুনিয়েছেন, ‘‘কয়েকটা লোককে দেখে বিচার করতে পারেন না! সাড়ে তিন লাখ লোকের বসবাস কেশপুরে। সেখানে যদি পঞ্চাশটা লোক আমার বিরুদ্ধে কথা বলে, আমি মনে করি না তাতে কিছু এসে যায় বলে! সবার প্রিয় তো কেউই হতে পারে না।’’ বিধায়ক জুড়েছেন, ‘‘গোষ্ঠী কোন্দল নয়। কোথাও ভুল বোঝাবুঝি, কোথাও অভিমান, কোথাও দু:খ- এ সবই ছিল! তাও দু’- চারটি অঞ্চলে। সব মিটে গিয়েছে।’’ দলের মধ্যে কেন এত কোন্দল? তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো- অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, ‘‘সিপিএম, বিজেপি তলে তলে আমাদেরই কিছু লোককে উস্কে বিভেদটা তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। বিভেদটা মিটিয়ে দিয়েছি।’’ অজিতের মন্তব্য, ‘‘কেশপুরে দীর্ঘদিন ধরে রক্তপাত হয়নি, মৃত্যু হয়নি, আগুন জ্বলেনি, কিচ্ছু হয়নি। শুধু কোথাও কোথাও খুনসুটি হয়েছে!’’ মন্ত্রী মানস শোনাচ্ছেন, ‘‘এ বার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কাজ হবে। আমরা কেশপুরে লড়াই করব বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।’’

তৃণমূল শিবিরের নালিশ, যত গোলমাল হয়েছে, সবের পিছনেই রয়েছে সিপিএম, বিজেপির উস্কানি। শুনে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূল তো সবেতেই এখন সিপিএমের ভূত দেখতে শুরু করেছে। এমন ভূত ওরা দেখতেই থাকবে!’’ বিজেপির রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘তোলাবাজি এবং এলাকা দখল ঘিরেই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে এই গন্ডগোল হচ্ছে। শাক দিয়ে কী মাছ ঢাকা যায়!’’ অভিষেক আসছেন।

দিন কয়েক হল, গোলমাল নেই কেশপুরে। আপাতত তাহলে সন্ধি? কেশপুরের এক তৃণমূল নেতা শোনাচ্ছেন, ‘‘ছাইচাপা আগুন! দিন কয়েক হয়তো ধিকিধিকি জ্বলবে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Keshpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy