ফাইল চিত্র।
আবারও ‘দুয়ারে সরকার’। এ বার শিবির হবে মূলত পিছিয়ে পড়া, আদিবাসী এলাকাগুলিতে। নবান্নের এমনই নির্দেশ জেলায় পৌঁছেছে। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে।
সম্প্রতি জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে ঘুরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন। বছর ঘুরলে পঞ্চায়েত ভোট। এই পরিস্থিতিতে আদিবাসী ও অনগ্রসর এলাকায় ‘দুয়ারে সরকার’র শিবির আয়োজনের সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল। সম্প্রতি জেলাগুলিকে নিয়ে ভিডিয়ো বৈঠক হয়েছে রাজ্যের। রাজ্যের তরফে ছিলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী প্রমুখ। সেখানে প্রয়োজনীয় নির্দেশ এবং পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরে ব্লকগুলিকে নিয়ে ভিডিয়ো বৈঠক করেছে জেলা। শুধু অস্থায়ী শিবির নয়, বেশ কিছু ভ্রাম্যমাণ শিবিরও হবে। কোন ব্লকের, কোন কোন প্রত্যন্ত এলাকায় শিবির প্রয়োজন, জেলা প্রশাসনকেই তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। সেই তালিকা তৈরি করে এলাকার নাম সংশ্লিষ্ট পোর্টালে নথিভুক্ত করতে হবে। বুধবার থেকে পোর্টালে এলাকার নাম নথিভুক্তি শুরুও হয়েছে। ১৩ জুন থেকে শিবির চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। রাজ্য জানিয়েছে, শুধু রবিবার বাদে সপ্তাহের যে কোনও দিনই শিবির হতে পারে।
ঝাড়গ্রামে মোট ৩৪০টি জায়গায় এই ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির হবে। প্রতিটি ব্লকে ৪০-৫০টি শিবির হবে। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল বলেন, ‘‘১৩ জুন থেকে জেলাজুড়ে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় দুয়ারে সরকার শিবির শুরু হবে। প্রথম শিবিরে আবেদন জমা দিতে পারবেন। দ্বিতীয় শিবির থেকে পরিষেবা দেওয়া হবে।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক আয়েষা রানির কথায়, ‘‘জেলার কোথায় কোথায় এই শিবির করা হবে, সেটা দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সারা হচ্ছে।’’
শিবিরে ভূমি দফতরের পরিষেবা নিয়ে বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসনের সিদো-কানহো হলে জেলার ভূমি দফতরের কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন জেলা ভূমি দফতরের আধিকারিকরা। তাঁরা জানান, সব আবেদন জমা নিতে হবে। কাউকে ফেরেনো যাবে না। সমাধান না করলেও আবেদন নিতে হবে। শিবিরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আবেদন জমা নেওয়ার পরে কর্মীদের সরেজমিনে গিয়ে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি দফতর) ধীমান বারুই বলেন, ‘‘আদিবাসী অধ্যুষিত চার থেকে পাঁচটি মৌজা ভিত্তিক শিবির হবে। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অঙ্গনওয়াড়িতে শিবিরগুলি হবে।’’
গত ২১ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত চলেছে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির। এ বারের এই শিবিরকে ওই কর্মসূচির বর্ধিত শিবির হিসেবেই দেখা হচ্ছে। একাধিক মহলের ব্যাখ্যা, প্রশাসন বুঝতে পেরেছে, এমন অনেক প্রত্যন্ত এলাকা রয়েছে, যেখানকার মানুষজন অস্থায়ী শিবিরে আসতে আগ্রহ দেখাননি। তাই সরকারি প্রকল্পের সুফলও পাননি। বর্ধিত শিবিরের মাধ্যমে ওই সব এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছনোই নিশ্চিত করতে চাইছে তৃণমূল সরকার। মনে করা হচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘পিছিয়ে পড়া’ এলাকার মানুষের অভাব-অভিযোগ দূর করতে চাইছে রাজ্য সরকার। সেই মতো বর্ধিত শিবিরে খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, কৃষকবন্ধু, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে আবেদনের সুযোগ থাকছে। তবে লক্ষ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে ভূমি দফতরের বিভিন্ন পরিষেবাই। যেমন মিউটেশন, নাম সংশোধন প্রভৃতি। রাজ্যের নির্দেশ, শিবিরে যাঁরা আবেদন করবেন, তাঁদের ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পরিষেবা প্রদান করতে হবে।
ঝাড়গ্রামের আদিবাসী নেতা রবীন টুডু বলেন, ‘‘এতে আদিবাসী এলাকার মানুষজন খুবই উপকৃত হবেন। জাতিগত শংসাপত্র না থাকায় অনেকের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ হয়নি। আশা করছি এই শিবিরে প্রশাসন তৎপরতার সঙ্গে জাতিগত শংসাপত্র করে দেবে।’’ রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি শমিত দাশের অবশ্য খোঁচা, ‘‘আদিবাসী এলাকায় তেমন উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি তৃণমূল সরকার। তবে শিবির করেও কিছু হবে না।’’ তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা চেয়ারম্যান অজিত মাইতির পাল্টা দাবি, ‘‘আদিবাসী এলাকায় উন্নয়নের প্রচুর কাজ হয়েছে। জঙ্গলমহল এখন হাসছে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy