প্রতীকী ছবি।
পরপর কিছু ঘটনাক্রম ইঙ্গিত দিচ্ছে জঙ্গলমহলে জনমনের ক্ষোভ উস্কে ফের সক্রিয় হতে পারে অতিবাম শক্তি। গোয়েন্দা সূত্রেও তেমনই খবর। কোনও ‘রাজনৈতিক শূন্যতা’ যাতে সে কাজে সহায়ক না হয়, মূলত সেই লক্ষ্যেই এক সময়ের মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় দলীয় কর্মসূচি বাড়াতে উদ্যোগী হচ্ছে তৃণমূল। এ জন্য ব্লক স্তরে সম্মেলন করে সংগঠনের রাশ পোক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শাসকদল সূত্রের খবর, বেলপাহাড়ি ও লালগড় ব্লকের পাশাপাশি, জেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে লাগাতার দলীয় কর্মসূচি প্রয়োজন বলে মানছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। সেই মতো ব্লক নেতৃত্বকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি আদিবাসী-মূলবাসী ও পিছিয়ে পড়া কয়েকটি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা একযোগে বৈঠক করেছেন। সূত্রের খবর, জাতিসত্তার প্রশ্নে মূল কিছু দাবি নিয়ে সহমতের ভিত্তিতে সরকারের কাছে প্রথমে আবেদন-নিবেদন ও পরে সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলনে নামারও ইঙ্গিত মিলছে। তার উপর সম্প্রতি মাওবাদী বন্ধে ঝাড়গ্রামের নানা জায়গায় সাড়া পড়ার বিষয়টি ভাবাচ্ছে শাসকদলকেও। ২০১১ সালের পর থেকে মাওবাদীরা বিভিন্ন সময়ে বন্ধ ডাকলেও এতদিন জঙ্গলমহলে তার প্রভাব পড়েনি। কিন্তু ঝাড়খণ্ডে সংগঠনের শীর্ষনেতা প্রশান্ত বসু ওরফে কিসানদার গ্রেফতারের প্রতিবাদে গত ২০ নভেম্বর মাওবাদীদের ডাকা ভারত বন্ধে বেলপাহাড়ি ও লালগড় ব্লকে ভাল সাড়া পড়ে। তৃণমূলের পদাধিকারী নেতার মাওবাদী প্যাকেজ না পাওয়ার হতাশায় ঝাড়খণ্ড-ওড়িশার মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং এ রাজ্যের জঙ্গলমহলে নানা জায়গায় বিস্ফোরক পুঁতে রাখার বিষয়টিও সামনে এসেছে সম্প্রতি।
এই আবহে পোড় খাওয়া তৃণমূল নেতাদের ব্যাখ্যা, বাম আমলে তৎকালীন সরকারের প্রধান শরিক সিপিএমের সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ কমে যাওয়ার সুযোগটাই নিয়েছিল মাওবাদীরা। এখন তৃণমূল আমলে ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী এলাকায় ফের সেই রাজনৈতিক শূন্যতার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমনকি বাঁকুড়া জেলা ও পশ্চিম মেদিনীপুরের সদর ব্লক ও শালবনি ব্লক লাগোয়া ঝাড়গ্রামের লালগড় ব্লকেও সক্রিয় হচ্ছেন প্রাক্তন মাওবাদীরা। প্রাক্তন মাওবাদীদের একাংশের মধ্যেও ক্ষোভ উস্কে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্লক সভাপতি স্পষ্ট জানাচ্ছেন, ‘‘মাওবাদী বন্ধে সর্বাত্মক প্রভাব পড়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। জেলা নেতৃত্বের নজরে এনেছি।’’
একদা মাওবাদী ঘাঁটি বেলপাহাড়ি ও লালগড়ের মতো এলাকার চেহারা চরিত্র গত এক দশকে আমূল বদলেছে। রাস্তা ও সেতু তৈরির ফলে যোগাযোগ সহজ হয়েছে। পর্যটনের প্রসারও ঘটছে প্রত্যন্ত এলাকায়। কিন্তু পঞ্চায়েতের পরিষেবা নিয়ে একাংশের খনও ক্ষোভ রয়েছে। ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের পরেও প্রাপ্তিতে ‘আমরা–ওরা’র অভিযোগ উঠছে। সম্প্রতি বেলপাহাড়িতে ‘দুয়ারে পুলিশ’ কর্মসূচিতে এলাকাবাসীর একাংশ পরিষেবা না পাওয়ার নালিশ জানিয়েছেন। বেহাল রাস্তা, অপ্রতুল পানীয় জল নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে অনেকের।
সেই ক্ষোভে প্রলেপ দিতে প্রশাসন-পুলিশের তরফে চেষ্টা শুরু হয়েছে। সমান্তরাল ভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জোর দিচ্ছে শাসক দল। নিচুতলার একাংশ তৃণমূল কর্মীর অভিযোগ, গোষ্ঠী-কাজিয়ার কারণে বিভিন্ন ব্লকে সে ভাবে দলীয় কর্মসূচিই হচ্ছে না। তাই আপাতত ‘রাজনৈতিক শূন্যতা’ পূরণেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদা বলছেন, ‘‘বেলপাহাড়ি ও লালগড়-সহ জেলার সর্বত্রই দলীয় কর্মসূচি আরও জোরদার করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy