শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘কুমন্তব্য’কে সামনে রেখে জঙ্গলমহলে আদিবাসী ও কুড়মি আবেগের তাস খেলতে তৎপর তৃণমূল। দলীয় সূত্রে এমনই ইঙ্গিত মিলছে।
ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের একাংশ নেতৃত্বও বলছেন, ‘‘বিধানসভা চত্বরে বি আর অম্বেডকরের মূর্তি গঙ্গাজল দিয়ে ধুয়ে বিরোধী দলনেতা কার্যত দলিতদেরই অপমান করেছেন। তাঁর এই কর্মসূচি আদিবাসী ও কুড়মি ভাবাবেগেও আঘাত করেছে। ফলে লোকসভা ভোটের আগে বিষয়টিকে নিয়ে জোরদার প্রতিবাদ-প্রচার তো হবেই।’’ তৃণমূলে থাকার সময় শুভেন্দুকে ‘জঙ্গলমহলের মুক্তিসূর্য’ বিশেষণে সভা গরম করা হতো। বাম আমলের অন্তিম পর্বে ঝাড়গ্রাম জেলায় তৃণমূলের সংগঠন বিস্তারে শুভেন্দুই ছিলেন অগ্রগণ্য। বিজেপি শিবিরে যাওয়ার পর বারকয়েক শুভেন্দু ঝাড়গ্রাম জেলায় গেরুয়া শিবিরের কর্মসূচিতে এসেছেন। তবে সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম জেলায় তাঁর কর্মসূচি হচ্ছে না। লোকসভা ভোটের আগে শুভেন্দুকে সামনে রেখে বিজেপিও নানা কর্মসূচি করতে পারে বলে মনে করছে তৃণমূল শিবির। তাই আগে ভাগে বিজেপির প্রচারের ধার কমাতে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ‘অচ্ছুৎ’-কাণ্ডের অবতারণা করা হচ্ছে। তৃণমূলের এসটি সেলের রাজ্য সভানেত্রী রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলার বিধায়ক (ঝাড়গ্রাম) বিরবাহা হাঁসদা বলছেন, ‘‘উনি (শুভেন্দু) এর আগেও লালগড়ে এসে আমাদের সম্পর্কে ‘পায়ের নীচে জুতোর তলায় থাকে’ বলে কুমন্তব্য করেছিলেন। আদিবাসী ও অনগ্রসর শ্রেণি সম্পর্কে বিজেপির মনোভাব কেমন সেটা তাঁদের নেতাদের কথাতেই স্পষ্ট বোঝা যায়। ফলে এই বিষয়টি ধারাবাহিক ভাবে জঙ্গলমহলের জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।’’
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই বিরোধী দলনেতার মন্তব্য ও অম্বেডকরের মূর্তির শুদ্ধিকরণের বিষয়টি নিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল ও পথসভা হচ্ছে। লোকসভা ভোটের আগে বিষয়টিকে প্রচারের হাতিয়ারও করতে চায় রাজ্যের শাসকদল। এক প্রবীণ তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের বিপুল সাফল্যের পর আদিবাসী ও কুড়মিদের একটি অংশকে বিজেপি নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফলে, বিরোধী নেতার অপমানসূচক মন্তব্যের নিশানায় যে কার্যত আদিবাসী ও কুড়মিরাও আছেন, সেটাও প্রতিটি এলাকার দলীয় কর্মসূচিতে মনে করিয়ে দেওয়া হবে।’’
জঙ্গলমহলের কুড়মিরা জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করছে। অন্যদিকে বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায় কুড়মিদের দাবির বিরোধিতা করছে। সাঁওতাল, মুন্ডা, ভূমিজদের মতো আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলিও তাদের নিজস্ব নানা দাবিতে প্রায়ই সরব হচ্ছে। লোকসভা ভোটের আগে তাই আদিবাসী ও কুড়মিদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে বিরোধী দলনেতার মন্তব্যকেই তুরুপের তাস করতে চায় তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘বিরোধী দলনেতার মন্তব্য নিয়ে জেলা জুড়ে দু’দিন ধরে প্রতিবাদ মিছিল ও পথসভা হয়েছে। এরপর প্রতিটি দলীয় সভা-মিছিল থেকে আওয়াজ উঠবে আদিবাসী-কুড়মি বিদ্বেষী বিজেপির স্থান নেই জঙ্গলমহলে।’’ তিন রাজ্যে বিজেপির জয়যাত্রার পর তৃণমূল শিবিরের এমন রণকৌশল নিয়ে বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সহ সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলছেন, ‘‘রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ে দলিত, আদিবাসী ও অনগ্রসর শ্রেণির বহু মানুষ থাকেন। এর থেকেই প্রমাণ, বিজেপির প্রতি জনজাতি, দলিত ও অনগ্রসর শ্রেণির মানুষের আস্থা রয়েছে।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা চোরদের চোর বলেছেন, তাতেই তৃণমূলের গোঁসা হয়েছে। আদিবাসী ও কুড়মিদের তৃণমূল ব্যবহার করেছে, তাদের প্রকৃত উন্নয়ন করেনি। তাই ভুল বুঝিয়ে তৃণমূল আর সুবিধা করতে পারবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy