বিজয়া সম্মিলীর মঞ্চে মেদিনীপুরের তৃণমূলের বিধায়ক জুন মালিয়া (উপরে)। সমাজমাধ্যমে তৃণমূলের মেদিনীপুর শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডবের করা সেই পোস্ট (বাঁ-দিকে)। নিজস্ব চিত্র
সন্ধ্যায় যুব তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চে মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক জুন মালিয়া বললেন, ‘‘অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে (বিজয়া সম্মেলন করতে)। বাট, নেভার মাইন্ড। আজকে আমরা এটা সেলিব্রেট করছি!’’ আর রাতে তৃণমূলের মেদিনীপুর শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডব সমাজ মাধ্যমে লিখলেন, ‘এটা নিম্নরুচির পরিচয়!’
বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রাম দিবসে যুব তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন ঘিরেই ফের সামনে এল মেদিনীপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। দলে গুঞ্জন, এখানে একদিকে বিধায়ক জুন, পুরপ্রধান সৌমেন খানের অনুগামী এবং অন্যদিকে, দলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, দলের শহর সভাপতি বিশ্বনাথের অনুগামীদের বিরোধ রয়েছে। একাংশ কর্মী শোনাচ্ছেন, বিবাদ এলাকার কর্তৃত্ব নিয়েই। তারই জের নন্দীগ্রাম দিবসে বিজয়া সম্মিলনী নিয়ে এই বিতর্ক।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর হলে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিল মেদিনীপুর শহর যুব তৃণমূল। ছিলেন বিধায়ক জুন, দলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি, পুরপ্রধান সৌমেন প্রমুখ। ওই একই সময়ে শহরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নন্দীগ্রাম দিবস পালন করেছে শহর তৃণমূল। সেখানে ছিলেন দলের জেলা সভাপতি সুজয়, দলের শহর সভাপতি বিশ্বনাথ প্রমুখ। জুনের অনুগামী কাউন্সিলরেরা ছিলেন বিজয়া সম্মিলনীতে। আর বিশ্বনাথ অনুগামী বলে পরিচিত কাউন্সিলরেরা ছিলেন নন্দীগ্রাম দিবসের কর্মসূচিতে। তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত বলছেন, ‘‘দল সবদিকে নজর রেখেছে। কেউ শৃঙ্খলার বাইরে গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তবে দলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয়ের বক্তব্য, ‘‘মনে হয় ওই কর্মসূচি (বিজয়া সম্মিলনী) পূর্ব ঘোষিত। তাই পিছনো যায়নি।’’ তবে বিতর্ক হওয়ায় শুক্রবার সকালে ফেসবুক পোস্টটি মুছে দিয়েছেন বিশ্বনাথ। তাঁর দাবি, ‘‘আমি কিছু লিখিনি।’’
বিশ্বনাথের ফেসবুক ওয়ালের পোস্টে অবশ্য লেখা হয়েছিল, ‘আজ নন্দীগ্রাম দিবস। আজকের দিনে বহু মানুষ রক্তাক্ত হয়েছিল। আজকের দিনটিতে আমরা মোমবাতি জ্বালিয়ে তাঁদের শ্রদ্ধা জানাই। আবার অপরদিকে আজকের দিনে বিজয়া সম্মেলন, আনন্দ-উচ্ছ্বাস। আপনারাই বলুন, এটা কি ঠিক? নিম্নরুচির পরিচয়!’ যুব তৃণমূলের শহর সভাপতি বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী যদিও বলেন, ‘‘বিজয়া সম্মিলনী শুরুর আগে শহিদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়েছে। শহিদবেদি তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে বিধায়ক, পুরপ্রধান প্রমুখও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন।’’
তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, সাংগঠনিক রদবদলের আগে জেলার বিধায়ক, দলের শীর্ষ পদাধিকারীদের কলকাতায় ডেকে পাঠিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। মেদিনীপুর শহরে যে দলে তীব্র কোন্দল রয়েছে, সেই বৈঠকেও স্পষ্ট বুঝেছিলেন রাজ্য নেতৃত্ব। শোনা যায়, বিধায়ক অনুগামীরা চেয়েছিলেন শহর সভাপতির পদ থেকে বিশ্বনাথকে সরাতে। নানা মহলে সুপারিশও করেছিলেন। দল অবশ্য বিশ্বনাথেই আস্থা রেখেছে।
বৃহস্পতিবার বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চে বিধায়ক জুনের অবশ্য বার্তা, ‘‘ঝগড়া করলে চলবে না। নিজেদের মধ্যে মান-অভিমান করে বাড়িতে বসে থাকা চলবে না। যে ঝগড়া করবে, তাঁর তৃণমূলে কোনও স্থান হবে না। এটা দিদি বলে দিয়েছেন। আমাদের একসাথে থাকতে হবে।’’বিশ্বনাথ অনুগামী শহরের এক তৃণমূল নেতার পাল্টা মন্তব্য, ‘‘আপনি আচরি ধর্ম শিখাও অপরে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy