একাংশ কুড়মি নেতাকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পরে দলের তরফেও পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর তথা পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতিকে সতর্ক করা হয়। ফাইল ছবি।
স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তাঁর হয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ায় চাপ তৈরি হয়েছিল। সূত্রের খবর, একাংশ কুড়মি নেতাকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পরে দলের তরফেও পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর তথা পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতিকে সতর্ক করা হয়। আর তারপরই সুর নরম এই নেতার।
মঙ্গলবার অজিত বলেন, ‘‘আমি কুড়মি ভাইবোনেদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করছি, ক্ষমা চাইছি। আমরা সমস্ত ধর্ম, সমস্ত শ্রেণির মানুষ, সবাইকেই শ্রদ্ধা করি। সবাইকে সহযোগিতাও করি। যাই হোক, আমি ওই বিষয়টা সমাপ্ত করতে চাইছি।’’ অজিতের সংযোজন, ‘‘আমার একটা বক্তব্য নিয়ে কোথাও কারও হয়তো একটা আঘাত লেগে থাকতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে কুড়মি ভাইদের আঘাত করতে চাইনি। দাবি থাকলে নিশ্চয়ই বলবেন। আমরা তার বিরুদ্ধে নই।’’ তৃণমূলের এই বিধায়ক জুড়েছেন, ‘‘আমি আমার রাজনৈতিক জীবনে কোনও দিন কুড়মি ভাইদের, আদিবাসী ভাইদের অসম্মান করিনি। আমি সবার কাছে দুঃখপ্রকাশ করছি, ক্ষমা চাইছি। এমন ভুল আর হবে না।’’
এর আগে পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর চেহারা নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করে বিতর্ক বাধিয়েছিলেন। সে বারও আগে ক্ষমা চেয়েছিলেন মমতা। তারপর অখিল দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চান। অজিতের ক্ষেত্রেও কার্যত তারই পুনরাবৃত্তি হল।
ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার। ওই দিন মেদিনীপুরে জেলা তৃণমূলের বর্ধিত সাধারণ সভায় একাংশ কুড়মি নেতাকে নিয়ে অজিতের ওই মন্তব্যের ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়ায়। প্রতিবাদে পথে নামের কুড়মিরা। শালবনিতে অজিত ও মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোকে ধিক্কার জানিয়ে পোস্টার সাঁটানো হয়। অজিতকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে- এই দাবি করা হয় পোস্টারে। বিষয়টি পৌঁছয় রাজ্যস্তরে। তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বও খোঁজখবর শুরু করেন। পরিস্থিতি এমনই পর্যায়ে পৌঁছয় যে অজিতের হয়ে ক্ষমা চেয়ে নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার দুপুরে অজিত মেদিনীপুরে যখন দাবি করছেন তিনি তাঁর মন্তব্যের জন্য অনুতপ্ত নন, তখন নবান্নে এক প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি ওকে (অজিতকে) ফোন করেছিলাম। আমারও খুব খারাপ লেগেছে। ও আমাকে বলল, আমি বলতে চেয়েছি অন্যভাবে, ওরা ঘুরিয়ে অন্যভাবে বলেছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী আরও জোড়েন, ‘‘অজিত যদি কিছু বলে থাকে, বা যদি তাঁর বক্তব্যকে বিকৃত করে থাকে বিজেপি, আমি বলছি, ওই বক্তব্যটা আমাদের বক্তব্য নয়। যদি কেউ অজিতের বক্তব্যে, সেটা ঘুরিয়ে বলার জন্য বা মুখ ফস্কে বলার জন্য, মাহাতোরা দুঃখ পেয়ে থাকে, আমি নিজে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি (করজোড়ে)। এটা নিয়ে রাজনীতি করার জায়গা নেই। আমরা সবাই আপনাদের সঙ্গে রয়েছি।’’মুখ্যমন্ত্রী তাঁর হয়ে ক্ষমা চাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েন অজিত। তারপরই সুর নরম করে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘উনি আমার হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন, অভিভাবিকাসুলভ মনোভাব দেখিয়েছেন। উনি ক্ষমা চেয়ে আমায় যে শিক্ষা দিলেন, আমি সারা জীবন সেই শিক্ষা মনে রাখব।’’
দু’দিনের মধ্যে ক্ষমা চাইতে হবে অজিতকে, না হলে তাঁকে ঘেরাওয়ের (ঘাঘর ঘেরা) হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন কুড়মিরা। তাঁর বাড়ি ঘেরাও করার হুঁশিয়ারিও ছিল। অজিত ক্ষমা চাওয়ায় বরফ গলেছে। কুড়মি নেতা সুমন মাহাতো বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা চেয়েছেন। উনিও ক্ষমা চেয়েছেন। ঘাঘর ঘেরা থেকে বিরত থাকছি।’’
দলের এক সূত্রে খবর, তৃণমূলের তরফে অজিতকে ‘সেন্সর’ করার পাশাপাশি তাঁকে আটপকা কোনও মন্তব্য না করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোত ঘোষ বলেন, ‘‘শুনেছি, ওঁকে সতর্ক করা হয়েছে।’’ অজিত বলছেন, ‘‘আমি তৃণমূলের একনিষ্ঠ সৈনিক। দল যেটা বলবে, সেটা করব। আমি চাই, ওই বিষয়টা এখানেই শেষ হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy