Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

অতিথি নেতার নাসিকা গর্জনে ঘুমের দফারফা

খানিক পরে এ দিক-সে দিক দেখে নিশ্চিন্ত হলেন, চোর আসেনি। অতিথি সাহেবই ঘুমের ঘোরে চোর-চোর বলে চেঁচিয়ে উঠেছেন। অতিথি যে-সে নন, মহিষাদলের তৃণমূল নেতা, পঞ্চায়েত সমিতির বন কর্মাধ্যক্ষ রাখাল মণ্ডল। 

অঙ্কন: রৌদ্র মিত্র

অঙ্কন: রৌদ্র মিত্র

দিগন্ত মান্না
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৪০
Share: Save:

ঘরে অতিথি হাজির। রাতের খাওয়া সেরে শুতে গিয়েও তাই সজাগ ছিলেন বাড়ির কর্তা।

শীতের আমেজে চাদর মুড়ি দিতেই অবশ্য চোখ জুড়ে এল। হঠাৎ ‘চোর চোর’ চিৎকার। ধড়মড়িয়ে উঠে বসলেন গৃহকর্তা। ঘরে অতিথি ঘুমোচ্ছেন। তার মধ্যে চোর!

খানিক পরে এ দিক-সে দিক দেখে নিশ্চিন্ত হলেন, চোর আসেনি। অতিথি সাহেবই ঘুমের ঘোরে চোর-চোর বলে চেঁচিয়ে উঠেছেন। অতিথি যে-সে নন, মহিষাদলের তৃণমূল নেতা, পঞ্চায়েত সমিতির বন কর্মাধ্যক্ষ রাখাল মণ্ডল।

জনসংযোগে জোয়ার আনতে রাজ্য জুড়ে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি শুরু করেছে তৃণমূল। শাসকদলের বড়-মেজ-ছোট নেতারা আমজনতার বাড়িতে রাত কাটাচ্ছেন। আর সেই সব নেতাদের নানা অভ্যাস, মুদ্রাদোষে ঘুম ছুটছে গৃহস্থের।

সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরের বাড় অমৃতবেড়িয়ার বাসিন্দা কানাইলাল মাইতির বাড়িতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের মহিষাদল ব্লক সভাপতি তিলক চক্রবর্তী। সঙ্গে মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত ও পরিবহণ কর্মাধ্যক্ষ ঘনশ্যাম দেবনাথ, বন কর্মাধ্যক্ষ রাখাল মণ্ডল, স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তরুণকান্তি মণ্ডলরা। রাখাল ঘুমের ঘোরে চোর চোর বলে চেঁচিয়েছেন। আর ঘনশ্যামের নাকি বাঁশির সুরের মতো নাক ডাকে।

নিশিযাপনের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে হাসতে হাসতে তিলক বললেন, ‘‘ঘনশ্যামের নাক ডাকাটা বেশ মিষ্টি। রাখাল আবার দেখি, ঘুমের ঘোরে চোর তাড়ান। ওঁদের এই কাণ্ড কারখানায় সকলেরই ঘুমের দফারফা। ওঁদের ঠেলে ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি।’’ সব শুনে রাখালের সলজ্জ উক্তি, ‘‘ঘুমের ঘোরে কী বলেছি, তা কী করে বলি বলুন তো!’’

নাসিকা গর্জনের অভ্যাস রয়েছে অনেক নেতারই। পূর্ব মেদিনীপুরেরই কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির-সহ সভাপতি রাজকুমার কুণ্ডু ইতিমধ্যে চারটি ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি শেষ করেছেন। দলীয় কর্মীদের বাড়িতে রাত্রিযাপনে রাজকুমারের সঙ্গী থাকেন সৌমিত্র সাহু। তিনি জানান, রাতে রাজকুমারের নাক ডাকার চোটে কোনও দিনই ভাল করে ঘুম হয়নি তাঁর। সৌমিত্রের কথায়, ‘‘রাজুদার নাকের ডাকটা খুব ভয়ঙ্কর। পাশে থেকে আমার কোনওদিনই ঘুম হয়নি।’’

ভোগপুর এলাকায় ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে গিয়ে তৃণমূল নেতা তপন ঘড়ার বাড়িতে এক রাত কাটিয়েছিলেন রাজকুমার। তপনও বলেন, ‘‘রাজকুমারবাবুর নাকের ডাকে আমিও সে দিন সারারাত ঘুমতে পারিনি।’’ রাজকুমারের ব্যাখ্যা, ‘‘সবাই বলে বটে আমার নাকি খুব নাক ডাকে। আসলে সারাদিন হেঁটে জনসংযোগ করেছিলাম। ক্লান্তির জন্য মনে হয় এটা হয়েছে।’’

মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তরুণকান্তি মণ্ডলের আবার রাতে ঘুমনোর সময় রয়েছে অন্য অভ্যাস। তিনি জানান, ঠান্ডা লাগার ধাত। তাই রাতে গামছা দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে মাথা ঢেকে ঘুমোন। বেরিয়ে থাকে শুধু নাকটুকু। আর সেই নাকও ডাকে। তরুণ নিজে অবশ্য বলছেন, ‘‘আমার নাক ডাকে লোকে বলে। কিন্তু আমি নিজে তা কী করে শুনব বলুন তো!’’ এ সব কাণ্ড ঘটিয়েই লোকের বাড়ি বাড়ি তৃণমূল নেতাদের রাত কাটানো চলছে। আর ভুক্তভোগী গৃহস্থ মুচকি হেসে বলছেন, অতিথি তো ভগবান!

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Snor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy