প্রতীকী ছবি।
অভিমানে যাঁরা দূরে সরে গিয়েছিলেন, নেত্রীর নির্দেশে ইতিমধ্যে তাঁদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কেশপুরে তৎপর হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী স্বয়ং। তৃণমূল সূত্রের খবর, নতুন করে ‘শহিদ পরিবারে’র সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু হয়েছে। কেশপুর পুনরুদ্ধারে কোর কমিটি গড়ে দিয়েছেন শুভেন্দু। সেই কমিটির তরফে বিশ্বজিৎ বরদোলুই বুধবারই শ্যামল আচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
কে এই শ্যামল আচার্য? শ্যামলের বাবা অজয় আচার্যকে ২০০২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সিপিএমের লোকজনেরা গুমখুন করে বলে অভিযোগ। রাজ্যে পালাবদলের পরে দাসেরবাঁধ থেকে মাটি খুঁড়ে কঙ্কাল মেলে। এই মামলাতেই নাম জড়ায় সুশান্ত ঘোষ সহ বেশ কয়েকজন সিপিএম নেতাকর্মীর। শ্যামলের অভিযোগের ভিত্তিতেই সেই সময়ে দাসেরবাঁধ কঙ্কাল মামলা নতুন প্রাণ পায়। রাজ্যে পালাবদলের পরে শ্যামলকে কেশপুর ব্লক যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছিল। এক সময়ে নবান্নে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন শ্যামল। পরে তাঁকে কেশপুর ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতিও করা হয়। বছর কয়েক পরে অবশ্য তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই দলের থেকে দূরত্ব বাড়ান শ্যামল।
এই শ্যামলকেই ফের দলের মূলস্রোতে টানার চেষ্টা শুরু হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, বুধবার তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির সঙ্গেও দেখা করেছেন বিশ্বজিৎ। শ্যামলের সঙ্গে তাঁর কী কথা হয়েছে তা অজিতকেও জানিয়েছেন তিনি। বিশ্বজিৎ মানছেন, ‘‘বুধবার খেতুয়ায় গিয়েছিলাম। শ্যামলের সঙ্গে কথা হয়েছে। আরও কয়েকজনের সঙ্গেও কথা হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘শ্যামল দলের পুরনো কর্মী। ওর বাবা দলের জন্য শহিদ হয়েছেন। ওকে দলের কাজ করার অনুরোধ করেছি।’’ শ্যামলও বলছেন, ‘‘বিশ্বজিৎদার সঙ্গে কথা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালবেসেই দলটা করি। এই সময়ের মধ্যে অনেকের অনেক কিছু হয়েছে। তবে আমরা যে কিছুই পাইনি তাও জানিয়েছি।’’ দলের একাংশ মানছে, অনেক ‘শহিদ’ পরিবার এখনও আঁধারে ডুবে। অর্থ সাহায্য থেকে কর্মসংস্থান, কিছুই জোটেনি। পরিস্থিতি বুঝেই ‘বঞ্চিত’ শহিদ পরিবারের পরিজনদের ক্ষোভ- অসন্তোষের কথা শুনতে শুরু করেছেন শাসক দলের নেতৃত্ব।
তৃণমূল সূত্রের খবর, বুধবার বিশ্বজিতের কাছে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ওই এলাকার দলের এক পুরনো কর্মীও। তিনি না কি বলেছেন, যারা সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি, তারাই এখন নেতা হয়েছে। কাগুজে ওই নেতারা নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছে। অথচ পুরনো দিনের কর্মীদের পরিবারের দিকে এতদিন দলের নজরই পড়েনি। ওই পুরনো কর্মী নাকি এ-ও নালিশ করেছেন, সরকারি প্রকল্পে এত বাড়ি হলেও তিনি তা পাননি। পয়সা দিতে পারেননি বলেই কি বাড়ি পাননি! বিশ্বজিতের কাছে এমন আক্ষেপও করেছেন ওই পুরনো কর্মী। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘কারও কারও মনের মধ্যে দু:খ- বেদনা রয়েছে। বিষয়টির দিকে দলের নজর রয়েছে। দল কিছু পদক্ষেপও করবে।’’
দিন কয়েক আগেই কেশপুরে এসে পদযাত্রা, সভা করেছেন শুভেন্দু। জানিয়েছেন, কেশপুর তাঁর চেনা। এখানে সংগঠন সাজাতে তাঁর অসুবিধে হবে না। এলাকায় এসে দলের মধ্যে বার্তা দিয়েছেন শুভেন্দু। যাঁরা ভুল বুঝে দূরে সরে গিয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য দলের নেতাদের সচেষ্ট হওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। তাঁর পরামর্শ, ‘‘যাঁরা ভুল বুঝে দূরে সরে গিয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনুন। তাঁদের বোঝান, বিজেপি দলটা কেমন।’’ দলের এক সূত্রে খবর, এই সূত্রেই শ্যামলের মতো দলের পুরনো কর্মীদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন বিশ্বজিৎরা।
সব শুনে বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূল দলটাই কর্পূরের মতো উবে যাচ্ছে! পুরনোদের মান- অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করেও লাভ কিছু হবে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy