নেতাইয়ের শহিদ বেদি। — ফাইল ছবি।
লালগড়ের নেতাইয়ে শহিদ দিবস পালনে যুযুধান দু’পক্ষ। নেতাই স্মৃতিরক্ষা কমিটি দিনভর বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। ওই কমিটির মাথায় তৃণমূল। রবিবার ওই মঞ্চে থাকবেন মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়প্রকাশ মজুমদাররেরা। পিছিয়ে নেই বিজেপিও। হাই কোর্টের শর্তসাপেক্ষে নেতাইয়ে শহিদ দিবস পালন অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার অনুমতি পেয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফলে, তিনিও যাচ্ছেন রবিবার। আবার একই দিনে নন্দীগ্রামেও শহিদ দিবসের কর্মসূচি রয়েছে দু’দলের। সব মিলিয়ে নেতাই ও নন্দীগ্রামে জোড়া শহিদ দিবস পালন ঘিরে আবার চড়ছে রাজ্য রাজনীতির পারদ।
শহিদ তুমি কার! এখন এই প্রশ্নই উড়ে বেড়াচ্ছে লালগড়ের নেতাই গ্রামের আনাচেকানাচে। তৃণমূলের দাবি, নেতাইয়ের শহিদরা তাঁদের। উল্টো দিকে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া শুভেন্দুর দাবি, নেতাইয়ে গিয়ে তিনিই ‘লাশ’ কুড়িয়েছিলেন। শহিদ বেদিতেও রয়েছে তাঁরই নাম। তাই নেতাইয়ের শহিদরা তাঁরই সঙ্গে। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের গোড়াতেই এই বিতর্ক মাথাচাড়া দেয়। এ বারও তার ব্যতিক্রম হল না।
পুলিশ প্রথমে গোলমালের আশঙ্কায় বিজেপিকে নেতাই গ্রামে শহিদ দিবস পালনের অনুমতি দেয়নি। অনুমতি চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় বিজেপি। হাই কোর্ট শুভেন্দুকে নেতাই যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে ঠিকই কিন্তু সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে বেশ কিছু শর্তও। বিজেপি সূত্রে খবর, আদালতের শর্ত মেনেই রবিবার নেতাইয়ে যাবেন শুভেন্দু। হবে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিও। ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপির সভাপতি তুফান মাহাতো বলেন, ‘‘নেতাই দিবস পালনের জন্য ঝাড়গ্রাম পুলিশ-প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। আমরা এ জন্য হাই কোর্টে গিয়েছি। হাই কোর্ট বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষে শুভেন্দু অধিকারীকে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। উনি বিকেল ৫টা নাগাদ আসবেন, শ্রদ্ধা জানাবেন শহিদ বেদিতে। শহিদদের পরিবার উপস্থিত থাকলে তাঁদের সঙ্গেও কথা বলবেন।’’
নেতাই দিবস উপলক্ষে শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির জোরদার প্রস্তুতি। ব্যানার, পোস্টার ছাপানোর কাজও শেষ। জেলা তৃণমূল কয়েক দফায় স্মৃতিরক্ষা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছে। প্রতি বারের মতো এ বারও নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির ব্যানারেই দিনটি পালিত হবে। উল্লেখ্য, গত বছর এই দিনে মন্ত্রী বিরবাহা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নেতাই গ্রামের মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। এ বার তৃণমূল বিরবাহার পাশাপাশি, তাবড় নেতাদের হাজির করাচ্ছে নেতাইয়ে। মন্ত্রী বিরবাহা বলেন, ‘‘প্রতি বার যে ভাবে শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটি নেতাই দিবস পালন করে, এ বারও তাই হবে। আমরা ওই দিন তাঁদের সঙ্গেই থাকি। শহিদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করি। এ বারও যাব।’’ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শ্যামল মাহাতো বলেন, ‘‘এ বার নেতাই দিবসে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধায় এবং নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার উপস্থিত থাকবেন। স্মৃতিরক্ষা কমিটির আয়োজিত শহিদ দিবস অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন এলাকার মন্ত্রী। আমরা ওঁদের পাশেই আছি।’’ নেতাই স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি নুন্টু অধিকারী বলেন, ‘‘শহিদ দিবস পালন করা হবে। শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি শহিদদের পরিবারের সদস্যদের হাতে শীতবস্ত্রও তুলে দেওয়া হবে।’’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি নেতাই গ্রামে সিপিএম নেতা রথীন দণ্ডপাটের বাড়ি থেকে গ্রামবাসীদের উপর নির্বিচার গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। নিরস্ত্র জমায়েত লক্ষ্য করে ছোড়া গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন চার মহিলা-সহ ন’জন। আহত হয়েছিলেন ২৮ জন। এই ঘটনাকে নিয়ে গোটা রাজ্যে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পালাবদলের পর নিহত পরিবারের সদস্যদের চাকরির ব্যবস্থা করে রাজ্য সরকার। সেই ঘটনা নিয়ে ১৩ বছর পরেও রাজনীতি চঞ্চল।
রবিবার শুধু নেতাই নয়, শহিদ দিবস পালন করে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামও। রবিবার নন্দীগ্রাম শহিদ দিবসে ভোর ৪টেয় সোনাচূড়ার ভাঙাবেড়া ব্রিজের কাছে প্রদীপ জ্বেলে শহিদ স্মরণ করবে তৃণমূল। সকাল ১০টায় স্থানীয় বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে সোনাচূড়ার শহিদ বেদিতে স্মরণ সভা হওয়ার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy