অমর্ত্য সেন। —ফাইল চিত্র।
অমর্ত্য সেন বনাম বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের জমি বিবাদ এখনও অব্যাহত। শনিবার সেই মামলার শুনানির শেষ দিনে অর্থনীতিবিদ অমর্ত্যকে বেনজির আক্রমণ করলেন বিশ্বভারতীর আইনজীবী সুচরিতা বিশ্বাস। সিউড়ি জেলা আদালতে শুনানি শেষে বিশ্বভারতীর আইনজীবীর কটাক্ষ, ‘‘উনি যদি মনে করেন গুরুদেবের সম্পত্তি নেবেন, সেটা ওঁর নির্লজ্জতা এবং অসভ্যতা।’’ অন্য দিকে, অমর্ত্যের আইনজীবী সৌমেন্দ্র রায়চৌধুরীর দাবি, দখলদারির কোনও ঘটনাই ঘটেনি। তাই বিশ্বভারতীর দাবি ভিত্তিহীন।
বস্তুত, দীর্ঘ দিন ধরে জমি নিয়ে অমর্ত্য বনাম বিশ্বভারতীর আইনি লড়াই চলছে। শনিবার ছিল সেই মামলার শুনানির শেষ দিন। দু’পক্ষ সিউড়ি আদালতে সওয়াল করে। বিশ্বভারতীর তরফে দাবি করা হয়, অমর্ত্যকে তিন বার চিঠি, চার বার নোটিস পাঠানো হয়েছিল। তিনি এক বার নোটিস নিজে রিসিভ করেন। কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবে হাজিরা দেননি। বস্তুত, অমর্ত্যের শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’র সীমানাবর্তী জমি নিয়েই বিতর্ক। বিশ্বভারতী বার বার দাবি করে এসেছে, ১.৩৮ একর নয়, ১.২৫ একর জমি লিজ় দেওয়া হয়েছিল অমর্ত্যের প্রয়াত বাবা আশুতোষ সেনকে। বাকি ১৩ ডেসিম্যাল জমি অমর্ত্য ‘জবরদখল’ করে আছেন বলে বিশ্বভারতীর দাবি। যদিও ১.৩৮ একর জমিই অমর্ত্যের নামে মিউটেশন করা হয়েছে বলে রাজ্য সরকার জানিয়েছে।
বিশ্বভারতী জমি দখলের অভিযোগ তুলে চিঠি দেওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ‘প্রতীচী’তে এসে তাঁর হাতে জমির নথি তুলে দেন। কিন্তু শনিবারের শুনানিতেই অমর্ত্যের বিরুদ্ধে জমি দখল করে রাখার অভিযোগ করেন বিশ্বভারতীর আইনজীবী। শুনানি শেষে ওই আইনজীবী বলেন, ‘‘ওঁর শুরু থেকেই সব কিছু মিথ্যা। ব্যাঙ্ক অফ সুইডেন থেকে একটি কমিটি ফর্ম করে পুরস্কৃত করেছিল। সেটাকে উনি নোবেল বলে চালাচ্ছেন।’’ বিশ্বভারতীর আইনজীবী আরও বলেন, ‘‘আপনারা কেউ বলতে পারবেন, ভারতে ওঁর অবদান কী আছে? ভারতে ওঁর অবদান শূন্য। আমি রিসার্চ করে দেখেছি। উনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্লাস পর্যন্ত কোনও দিন নেননি। সেখানে কবিগুরু আমাদের বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন। স্বদেশি গান লিখে অনুপ্রাণিত করেছেন। তাঁদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন। তাই রবীন্দ্রনাথের সম্পত্তি রক্ষা করা আমার দায়িত্ব ছিল।’’ ওই আইনজীবী জানান, উপাচার্য হিসাবে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী (বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য)-র কর্তব্য ছিল রবীন্দ্রনাথের সম্পত্তি রক্ষা করা। তাই তিনি পদক্ষেপ করেছিলেন। কোথাও কোনও ভুল হয়নি।
অমর্ত্যের আইনজীবী জানান, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের আইনি দাবিতে জটিলতা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা উচ্ছেদ চাইছেন। কিন্তু কোন জায়গা? নির্দিষ্ট করে সেটা বলতে পারেননি। লিজ়ে নেওয়া জায়গা জোর করে কেড়ে নেওয়া যায় না। সেটাই আমরা সওয়াল করেছি। দখলদারির কোনও ঘটনাই ঘটেনি। সেখানে ওঁরা কী ভাবে ধরে নিচ্ছেন যে অবৈধ ভাবে জমির দখলদারি হয়েছে?’’
উল্লেখ্য, এর আগেও অমর্ত্যের বিরুদ্ধে ‘অপমানজনক’ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বেশ কিছু দিন আগে নোবেলজয়ীর নাম না করে তাঁকে ‘দখলদার’, ‘দোষী’, ‘অপরাধী’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সমালোচনায় সরব হন বিশ্বভারতীর আশ্রমিক থেকে শুরু করে প্রাক্তনী এবং শিক্ষকদের একাংশ। অমর্ত্যকে ‘হেনস্থা’র নিন্দায় রাষ্ট্রপতিকে চিঠিও দিয়েছেন দেশ-বিদেশের বহু বিশিষ্ট মানুষ। অন্য দিকে, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, জমি বিতর্কে নিজেদের দাবি থেকে একচুলও সরবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy