Advertisement
২৩ জানুয়ারি ২০২৫
চলছে পারস্পরিক দোষারোপ

শাসক দলের কর্মী খুনে অশান্ত বাকচা

সোমবার দুপুরে ময়নার আন্ধারিয়া গ্রামের রাস্তায় বসুদেব মণ্ডল নামে ওই তৃণমূল নেতাকে  মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে।

নিহত বসুদেব মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

নিহত বসুদেব মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

আনন্দ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০০:১৫
Share: Save:

নবমীর রাতে পাঁশকুড়ার মাইশোরায় তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি কুরবান শা খুনের ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি। ফের ময়নার বাকচায় তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যকে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় উত্তপ্ত হল গোটা এলাকা।

সোমবার দুপুরে ময়নার আন্ধারিয়া গ্রামের রাস্তায় বসুদেব মণ্ডল নামে ওই তৃণমূল নেতাকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। তৃণমূলের ব্লক নেতৃত্বের অভিযোগ, বসুদেব সহ এলাকার তৃণমূল কর্মীদের কিছুদিন ধরেই হুমকি দিচ্ছিল বিজেপির লোকজন। রবিবার রাতে বাকচাক চাঁদিবেনিয়া গ্রামে দুই তৃণমূল কর্মীকে মারধর করেছিল বিজেপির লোকজন। তারপর সোমবার আন্ধারিয়া গ্রামের রাস্তায় বিজেপি সশস্ত্র লোকজন জড়ো করেছিল। ওই রাস্তা ধরে যাওয়ার পথেই বসুদেবকে খুন করা হয়। পরে পুলিশ তাঁর দেহ ময়না ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যায়। বসুদেবের এক ভাইপো রাজু মণ্ডল বলেন, ‘‘ছেলে অসুস্থ। তাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিলাম। পুলিশ ও জটলা দেখে এগিয়ে যেতেই কাকার মৃতদেহ দেখতে পাই।’’

জেলার পুলিশ সুপার ভি সলোমন নেসাকুমার বলেন, ‘‘নিহতের পায়ে, মাথায় অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। তদন্ত চলছে। ’’

তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি, বিজেপির দক্ষিণ মণ্ডলের নেতা অলোক বেরা এবং পঞ্চানন মণ্ডলের নেতৃত্বে লোকজন জড়োও হচ্ছিল। পুলিশে মৌখিক ভাবে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারপরই এই খুন।

অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপি জেলা নেতৃত্বের দাবি তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলেই এই খুন। যদিও বাকচার এই খুন ফের উস্কে গিয়েছে গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর প্রধান পদের দখল ঘিরে রাজ্যের শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল। যার জেরে এলাকায় বিজেপির প্রভাব ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ২১ আসনের বাকচা পঞ্চায়েতে তৃণমূল ১৫, বিজেপি ও নির্দল ৩টি আসনে জেতে। কিন্তু প্রধান পদের দখল নিয়ে তৃণমূলের শুকলাল মণ্ডল ও মিলন ভৌমিকের মধ্যে কোন্দল বাধে। বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রধান পদে লড়ে হেরে যান মিলন। প্রধান হন শুকলাল। কিন্তু পরে তৃণমূলের একাংশ বিজেপি শিবিরে যোগ দেয় বলে অভিযোগ। যার জেরে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শুকলাল সহ তৃণমূলের বহু কর্মী ঘরছাড়া হন বলে অভিযোগ। যার মধ্যে ছিলেন বরুণা গ্রামের তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য বসুদেব।

লোকসভা নির্বাচনের পর পুলিশ-প্রশাসনের সহায়তায় পঞ্চায়েতের কাজে অচলাবস্থা কাটে। তৃণমূলের ঘরছাড়াদের পাশাপাশি বসুদেবও মাসচারেক আগে ঘরে ফেরেন। এলাকায় ডাকাবুকো নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন বসুদেব। মাছের ভেড়ির মালিক বসুদেবের দুই ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। বাড়ি ফেরার পর দলের পুরনো কর্মীদের দলের কাজে যুক্ত করে ফের এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু সোমবার প্রকাশ্যে রাস্তায় তাঁকে কুপিয়ে খুনের ঘটনার পর ফের সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছে বাকচা। তৃণমূলের ময়না ব্লক সভাপতি সুব্রত মালাকারের অভিযোগ, ‘‘বাকচায় বিজেপির সন্ত্রাসে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। মানুষ বিজেপির বিরুদ্ধে জোট বাঁধতে শুরু করেছে। এলাকায় ফের সন্ত্রাস কায়েম করতেই পরিকল্পনা করে বসুদেবের মতো নেতাকে খুন করেছে বিজেপি।’’

বিজেপির তমলুক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘বাকচা-সহ ময়নায় তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল কারও অজানা নয়। তোলাবাজির বখরা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধে বসুদেবকে তৃণমূলের লোকজনই খুন করেছে। ওদের দলের কর্মীর বাড়িতে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিকভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে তৃণমূল নেতারা আমাদের দলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলছেন।’’

দলীয় কর্মী খুন ও নেতা-কর্মীদের উপরে আক্রমণ ও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে এ দিন বিকেল ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। অবরোধ করা হয় ময়না ব্লক হাসপাতালের সামনে ময়না-মেদিনীপুর রাজ্য সড়ক। পরে সেখানে তৃণমূল নেতা ও তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী পৌঁছলে বিক্ষোভ আরও বাড়ে। বিক্ষোভে ছিলেন বাকচার পঞ্চায়েত প্রধান শুকলাল মণ্ডল, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অভয় দাস, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শেখ সাজাহান প্রমুখ। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই ময়নায় বিশেষ করে বাকচায় আক্রান্ত হচ্ছেন তৃণমূল কর্মীরা। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতারা বিষয়টি নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করছেন না।

যদিও দিব্যেন্দুবাবুর বক্তব্য, ‘‘একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাই মানুষের এমন ক্ষোভ-বিক্ষোভ স্বাভাবিক। তবে তা আমার জন্য নয়। আমি পুলিশ সুপারকে বলেছি সংশ্লিষ্ট থানার ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy