বোর্ডে অঙ্ক শেখাতে ব্যস্ত যুগল স্যর। নিজস্ব চিত্র
কথায় আছে, ‘ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে’। কার্যত সেই প্রবাদেরই বাস্তব ছবি দেখা গেল ‘যুগল স্যরে’র বাড়িতে।
রামনগর-২ ব্লকের বালিসাইর অদূরে বাকশাল গ্রামের বাসিন্দা যুগলকিশোর শতপথি। বোধড়া পন্তেশ্বরী হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। অবসর নিয়েছেন কয়েক বছর আগেই। কিন্তু পড়ানো থেকে অবসর নেননি তিনি। আশেপাশের মৎস্যজীবী অধ্যুষিত গ্রামের গরিব ছেলেমেয়েদের ওই শিক্ষক নিজের বাড়িতে বিনা পয়সায় অঙ্ক শেখান।
বাকশাল এবং আশেপাশের এলাকায় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের অনেক লোকের বসবাস। তাঁরা মূলত ছোট নৌকো নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরেন। আর্থিক কারণে ওই পরিবারের ছেলেমেয়েদের কাছে পড়াশোনাটা কার্যত বিলাসিতা। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলির ছেলেমেয়েদের পড়ানোটা বর্তমানে ‘নেশা’ গিয়েছে যুগলের।
জাতীয় সড়ক ছেড়ে দু’চার পা এগোলে সরু রাস্তার ধারে দোতলা বাড়ি যুগলের। স্থানীয়েরা জানান, রোজ সকালে ওই বাড়িতে ছেলেমেয়েদের ভিড় পড়ে যায়। মূলত নবম এবং দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের টিউশন দেওয়া হয়। শুধু গণিত নয়, আরও পাঁচটি বিষয় পড়ানোর জন্য রীতিমতো কোচিং বানিয়ে ফেলেছেন যুগল। অন্য বিষয়গুলির জন্য নিয়োগ করেছেন শিক্ষক। পড়ুয়াদের কাছ থেকে টাকা নেন না যুগল। তবে অন্য শিক্ষকদের জন্য নিজের পকেট থেকেই বেতনের বন্দোবস্ত করেছেন ওই শিক্ষক। এ ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করেন তাঁর দাদা।
সম্প্রতি যুগলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ব্ল্যাকবোর্ডে ত্রিকোণমিতি বোঝাচ্ছেন তিনি। যুগল বলেন, ‘‘মাছ ধরেই ওই অভিভাবকেরা সংসার চালান। ছেলেমেয়েদের এক সময় পড়া বন্ধ করে দিচ্ছিল। তাই ওদের যথাসাধ্য পাশে থাকার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’ যুগল জানাচ্ছেন, এত পড়ুয়া আসে যে, বাড়িতে বসার জায়গা হয় না। এলাকার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাছে এ ব্যাপারে ক্লাস ঘরের ব্যাপারে সহযোগিতা করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। সুজাতা বেরা নামে দশম শ্রেণির এক ছাত্রী বলে, ‘‘হাইস্কুলে পড়ার সময় এক সময় বাবা বলেছিলেন, টিউশন চাইলে পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হবে। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু যুগল স্যরের কাছে অঙ্ক শিখে এ বার মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’
‘যুগল স্যরে’র এমন চেষ্টায় অভিভূত অভিভাবকেরাও। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন বেরা বলেন, ‘‘গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের যাতে পড়াশোনা বন্ধ না হয়, তার জন্য যুগল স্যর ওদের এখানে নিয়ে এসেছেন।’’ এখন আর গ্রামেই সীমাবদ্ধ নয় যুগল স্যরের কর্মকাণ্ড। এ ব্যাপারে নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির কাঁথি মহকুমা সম্পাদক দীপক প্রধান বলেন, ‘‘শিক্ষকতা মানে শুধু স্কুলে পাঠদান নয়, এটা গত কয়েক বছর ধরে যুগল প্রমাণ করে দিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy