প্রতীকী ছবি।
দুর্নীতির অভিযোগ বাড়ছিল। দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং আমজনতার কাছ থেকে চাপও বাড়ছিল। এই পরিস্থিতি আমপান দুর্নীতিতে ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরাতে শুরু করেছেন বহু তৃণমূল নেতা। সম্প্রতি সেই তালিকায় যোগ হয়েছে ময়না ব্লকের নৈছনপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের নাম। অন্য দিকে, ক্ষতিপূরণ দুর্নীতিতে বিক্ষোভও চলছে। কোলাঘাটের সিদ্ধা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে সোমবার তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন স্থানীয়েরা। তমলুকের নোনাকুড়ি বাজারের কাছে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তৃণমূলের একাংশ কর্মী-সমর্থক।
স্থানীয় প্রশাসন সূ্ত্রের খবর, ময়না ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত সব ক’টি পঞ্চায়েতে ৪২৩টি বাড়ির জন্য সরকারি ক্ষতিপূরণ হিসাবে ২০ হাজার টাকা ব্যাঙ্ক আকাউন্টে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকায় স্বজনপোষণের অভিযোগ ওঠায় তৃণমূলের তরফে দলীয়ভাবেও খতিয়ে দেখা হয়। তাতে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত মালাকার নৈছনপুর-১ পঞ্চায়েতের প্রধান সন্দীপন জানা-সহ তিন জন পঞ্চায়েত সদস্যকে সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরতের নির্দেশ দেন। সন্দীপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজের পরিবারের এক সদস্যকে তিনি ক্ষতিপূরণের টাকা পাইয়ে দিয়েছেন। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতেরই এক সদস্য আবার তাঁর স্ত্রী’র নামে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ। আবার রামচক গ্রাম পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল সদস্য বাবা ও স্ত্রী’র নামে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ।
নির্দেশ মতো সন্দীপন টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। সুব্রত এ দিন বলেন, ‘‘নৈছনপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সহ দলের-তিন জনকে টাকা ফেরতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ যদিও পঞ্চায়েত প্রধান সন্দীপনের দাবি, ‘‘দলীয় ভাবে টাকা ফেরতের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। আমার বাবা যে বাড়িতে থাকেন সেটি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে জন্য সরকারি ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন। কিন্তু বাড়ির যা ক্ষতি হয়েছে তাতে মেরামতির জন্য এত টাকার প্রয়োজন নেই। তাই নিজেই টাকা ফেরত দিয়েছি।’’
অন্যদিকে, কোলাঘাটে সিদ্ধা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ এ দিন অভিযোগ করেন, ক্ষতিপূরণের জন্য যে ৬৫ জনের তালিকা বানানো হয়েছে, তার মধ্যে ৫৭ জনেরই পাকা বাড়ি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকায় পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান, তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যদের নিকট আত্মীয়দের পাশাপাশি বিরোধী দল বিজেপির দু’জন পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ির লোকজনও রয়েছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা তালিকায় ঠাঁই পায়নি— এই অভিযোগে এদিন এলাকার রেনুবাড় এলাকায় এবং সিদ্ধা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের সামনে পঞ্চায়েত সদস্য শেখ জাহিরুল হোসেনের নামে ফ্লেক্স ঝুলিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা।
পরে পঞ্চায়েত কর্মীরা অফিসে এলে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তাঁদের ভিতরে আটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান ও দুর্নীতিগ্রস্ত পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে স্লোগানও দেন। পাঁশকুড়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পুলিশের সামনেই পঞ্চায়েত সদস্যদের সাথে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিক্ষুব্ধরা। পর পুলিশের হস্তক্ষেপে তালামুক্ত করা হয় পঞ্চায়েত কর্মীদের।
বরুণ সিং নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘যাদের পাকা বাড়ি রয়েছে, তাঁরাই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় রয়েছেন। আমরা চাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা দেওয়া হোক।’’ গ্রামবাসীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে সিদ্ধা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান সন্দীপকুমার ওঝা বলেন, ‘‘তালিকা তৈরিতে কিছু ভুল ছিল। আমরা সংশোধন করেছি। ফোর ম্যান কমিটির সুপারিশ মেনেই নতুন তালিকা তৈরি হয়েছে। বিক্ষুব্ধ তৃণমূল এবং বিজেপির মদতে পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ হয়েছে।’’
আবার, ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চনার অভিযোগে তমলুকের নোনাকুড়ি বাজারের কাছে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কে অবরোধও করেছেন তৃণমূলের একাংশ। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে দলীয় সমর্থক থাকার কথা স্বীকার করলেও বল্লুক-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তথা ব্লক তৃণমূল আহ্বায়ক শরৎ মেট্যা বলেন, ‘‘তদন্ত করে ক্ষতিপূরণের নয়া তালিকা হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন। দলের একাংশ সমর্থক ভুল বুঝেই এদিন অবরোধ করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy