রবিবার খেজুরিতে শুভেন্দু। নিজস্ব চিত্র
ক’দিন আগে বর্ধমানের প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশকে ‘ভর্ৎসনা’ করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার দলের সভা থেকে পুলিশকে ‘অপদার্থ’ বলে দুষলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শুভেন্দু অধিকারী।
রবিবার বিকেলে ‘অধিকারী গড়’ পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে কলেজ মাঠে তৃণমূলের এক সভা ছিল। খেজুরি বিধানসভার তৃণমূল কমিটি আয়োজিত সেই সভায় এসেছিলেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু। পুরনো একটি মামলার সূত্র ধরে সেখানেই নন্দীগ্রামের বিধায়ক বলেন, ‘‘পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের পরেও অভিযুক্ত রাতে বাড়িতে ঘুমোতে পারে কেন! এখানকার পুলিশের একাংশ অপদার্থ। তাই অপরাধী এখনও গ্রেফতার হয়নি।’’ ব্লকের তৃণমূল নেতারা মানছেন, শুভেন্দুর নিশানায় ছিলেন স্থানীয় এক বিজেপি নেতা।
গত অক্টোবর মাসে বারাতলায় এক মহিলার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনাতেই নাম জড়িয়েছিল স্থানীয় বিজেপি নেতা অতনু পাণিগ্রাহীর। তৃণমূল ছেড়েই তিনি বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। কিন্তু পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরে অভিযুক্ত ওই বিজেপি নেতা এখন গ্রেফতার না হওয়ায় শুভেন্দু যে ক্ষুব্ধ, এ দিন সেই বার্তাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
নন্দীগ্রামের জমি রক্ষা আন্দোলন ও রাজ্যে পালাবাদলের পর থেকে খেজুরি বরাবরই তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি ছিল। ইদানিং অবশ্য এই এলাকাতেই বাড়ছে বিজেপি। ২০১৬ সালে খেজুরি বিধানসভা থেকে তৃণমূল জিতেছিল প্রায় ৪৩ হাজার ভোটে। অথচ এ বারের লোকসভা ভোটে খেজুরি থেকে তৃণমূলের লিড কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭ হাজারে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের শাসকদলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর পুলিশকে দোষারোপ করার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল।
খেজুরির সভায় এ দিন শুভেন্দু আরও অভিযোগ করেন, বীরবন্দর পঞ্চায়েতে তাঁর দলের প্রধানকে কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিলাম। তারপর আমি দাঁড়িয়ে থেকে ওখানে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা সচল করব।’’ খেজুরিকে পুনরায় অশান্ত করার চেষ্টার অভিযোগে শুভেন্দু বিঁধেছেন সিপিএমকেও। হুমকির সুরেই বলেছেন, ‘‘কলাগেছিয়ায় সিপিএম পার্টি অফিস খুলেছে। নন্দীগ্রামের শহিদ পরিবারের লোকেরা এসে তা বন্ধ করে দিয়ে যাবে।’’
শুভেন্দুকে নিশানা করে সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি পাল্টা বলছেন, ‘‘নন্দীগ্রামে গন্ডগোলের সময় আমাদের দলের ৫২ জন শহিদ হয়েছেন। তার মূল হোতা আজকের প্রধান বক্তা। ওরা প্রশাসনের সমর্থন নিয়ে আমাদের কার্যালয় বন্ধের চেষ্টা করছে। তা হলে আমরাও পাল্টা কার্যালয় খোলার চেষ্টা করব।’’ খেজুরিতে তৃণমূলের পঞ্চায়েত অচল করার পিছনে দলের মানতে চাননি বিজেপি নেতৃত্ব। দলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলই তো খেজুরি জুড়ে হার্মাদ তৈরি করে উন্মাদনা তৈরি করেছে।’’
এ দিনই চণ্ডীপুরের হাঁসচড়াবাজারের সমাবেশে আবার শুভেন্দু অভিযোগ করেছেন, ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে পুলিশি অভিযানের আগের দিন চণ্ডীপুরের ফুলনি মোড়ের কাছে সিপিএমের সশস্ত্র সমর্থকরা তাঁকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি তো ১৩ মার্চ মারা যেতাম ফুলনি মোড়ে। আমার আগের গাড়িতে কলকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলর রুবি দত্ত, অপর্ণা নিয়োগী ও স্মিতা বক্সীরা ছিলেন। ফুলনি মোড়ের কাছে সেই গাড়িতে আমি আছি ভেবে গাড়িটাকে ভেঙেছে, মহিলাদের মারধর করেছে। ওই গাড়ি থেকে ১ কিলোমিটার দূরে আমি ছিলাম।’’ সে দিন তিনি নবজীবন পান বলেও জানান শুভেন্দু।
সম্প্রতি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ চণ্ডীপুরের হাঁসচড়া থেকেই সঙ্কল্প পদযাত্রা শুরু করেছিলেন। তারপর গত ১৮ নভেম্বর জেলা সিপিএমের উদ্যোগে চণ্ডীপুর ফুটবল ময়দানে সমাবেশে আসেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। বিরোধীদের পাল্টা হিসেবেই এ দিন শুভেন্দুর সমাবেশ বলে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা জানিয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারি চণ্ডীপুর ফুটবল ময়দানে এক লক্ষ মানুষের সমাবেশ হবে বলেও এ দিন ঘোষণা করেন শুভেন্দু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy