বসুদেবের শহিদ বেদিতে মালা দিচ্ছেন শুভেন্দু। নিজস্ব চিত্র
উদ্দেশ্য ছিল বাকচার নিহত তৃণমূল নেতা বসুদেব মণ্ডলের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে দেখা করা ও এলাকার দলীয় কর্মীদের ‘তলানিতে ঠেকা’ মনোবল বাড়ানো। মঙ্গলবার দুপুরে বাকচায় পৌঁছন জেলার দাপুটে তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। অথচ নেতা যাওয়ার খবরেও বাকচায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তেমন সাড়া দেখা গেল না। থমথমে পরিবেশে অনেককেই ঘরের বাইরে বেরোতে দেখা যায়নি। ফলে সন্ত্রস্ত বাকচায় গিয়ে শুভেন্দু তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মনোবল কতটা বাড়াতে পারলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন দলের একাংশ।
গত ১৪ অক্টোবর বাকচার আন্ধারিয়া গ্রামে প্রকাশ্যে রাস্তায় তৃণমূল কর্মী বসুদেব মণ্ডলকে কুপিয়ে খুন করা হয়। ঘটনায় বিজেপির লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ তোলে তৃণমূল নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই বিজেপি কর্মী বিজয় ভুঁইয়া সহ চারজনকে খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কিন্তু বসুদেব খুন হওয়ার পর বাকচা পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান সহ অধিকাংশ পঞ্চায়েত সদস্য ও অনেক কর্মী ঘরছাড়া বলে অভিযোগ। তাই এলাকায় দলের সংগঠন যাতে দুর্বল না হয়, দলের নেতা-কর্মীদের সাহস জোগাতে মঙ্গলবার বসুদেবের বাড়ি গিয়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কর্মসূচি ছিল শুভেন্দুর।
এ দিন দুপুরে ময়নার পেটুয়া মোড় থেকে কয়েকশো মোটর সাইকেলে ময়না ব্লকের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে বাকচার বরুণা গ্রামে পৌঁছন পরিবহণ ও সেচৃজলপথ দফতরের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। সঙ্গে ছিলেন ময়নার বিধায়ক সংগ্রাম দোলই, জেলা পরিষদের সেচ কর্মাধ্যক্ষ শেখ সাজাহান, ময়না পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুব্রত মালাকার প্রমুখ ব্লক নেতারা। দুপুর ২ টো নাগাদ পেটুয়ামোড় থেকে রওনা হয়ে আড়ংকিয়ারানা হয়ে বরুণা গ্রামে বসুদেবের বাড়িতে গিয়ে অস্থায়ী শহিদ বেদিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শুভেন্দু । বসুদেবের স্ত্রী, মা ও ছেলেকে সান্ত্বনা দেন তিনি। দলীয় সূত্রে খবর, বসুদেবের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি বড় ছেলে অনুপকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেন শুভেন্দু। মন্ত্রীকে পেয়ে বসুদেবের স্ত্রী খুকুমণি স্বামীকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তি দাবি জানান। শুভেন্দু এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
বসুদেবের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাকচা হাইস্কুলের কাছে বেসিক বাজারে জড়ো হওয়া তৃণমূল সমর্থকদের সঙ্গে দেখা করে পেটুয়ামোড় হয়ে ফিরে আসেন শুভেন্দু। এ দিন মন্ত্রীর সফরকে ঘিরে পেটুয়ামোড় থেকেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। শুভেন্দুর কনভয়ের সঙ্গে থেকে নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন তমলুকের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস-সহ অন্য পুলিশ আধিকারিকরা। তবে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা সত্ত্বেও বরুণা, গোড়ামহল, আন্ধারিয়া, খিদিরপুর, আড়ংকিয়ারানা প্রভৃতি গ্রামের মানুষকে তেমন ঘর থেকে বেরোতে দেখা যায়নি। কেউ কেউ বেরোলেও চুপচাপ থাকাই শ্রেয় মনে করেছেন। বোঝা যাচ্ছিল এলাকায় এখনও চাপা সন্ত্রাসের আবহ রয়েছে।
কনভয়ের সঙ্গে থাকা এক তৃণমূল কর্মী বলেন, ‘‘মন্ত্রী বসুদেবের বাড়িতে যাওয়ার পথে আমাদের যে সব কর্মী-সমর্থক উৎসাহী হয়ে বাড়ির বাইরে এসেছিল বিজেপির আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাদের উপর নজর রেখেছে ভেবে ভয়ে কেউ মন্ত্রীর কাছে এগিয়ে আসেননি। এলাকায় দলের কমী-সমর্থকেরা সন্ত্রস্ত।’’ বসুদেবের খুনিদের সকলকে গ্রেফতার না করা এই আতঙ্ক কাটবে না।’’ ময়নার বিধায়ক সংগ্রাম দোলই অবশ্য বলেন, ‘‘বসুদেবের বাড়ির সামনে ও বাকচা বেসিক বাজারে প্রচুর মানুষ ছিলেন। আগের চেয়ে পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল। আগামী সপ্তাহে বাকচায় শুভেন্দুবাবুর সভা হবে।’’ এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘খুনের ঘটনায় জড়িত বাকি অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি চলছে। এলাকার মানুষের ভয় কাটাতে নিয়মিত মাইক প্রচার চালানো হচ্ছে।’’
যদিও বিজেপির জেলা সভাপতি (তমলুক) নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘বাকচার পরিস্থতি স্বাভাবিকই আছে। মিথ্যে সন্ত্রাসের তত্ত্ব খাড়া করা হচ্ছে। আসলে বাকচার মানুষ তৃণমূলকে প্রত্যাখান করেছে। শুভেন্দুবাবু নিজেও এদিন তা টের পেয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy