বিতর্কিত ফ্লেক্স। নিজস্ব চিত্র
প্রথমে দল থেকে সাসপেন্ড। পরে তাঁকেই ফুলমালা দিয়ে ‘বরণ’ দলের একাংশের।
দিবাকর জানাকে নিয়ে সম্প্রতি যে যে কাণ্ড ঘটে গিয়েছে, সে সবের ‘কান্ডারি’ নাকি পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। এমনই অভিযোগে ফ্লেক্স পড়ল ‘অধিকারী গড়’ পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদায়। রবিবার সকালে মেচেদা বাজার সংলগ্ন জাতীয় সড়কের মাঝে একটি জায়গায় ওই ফ্লেক্সটি দেখা যায়। শুক্রবার মেচেদায় শুভেন্দুর সভার সমর্থনে লাগানো ব্যানারের উপরেই ওই ফ্লেক্সটি সাঁটানো হয়েছে। সেখানে শুভেন্দু-সহ স্থানীয় কয়েকজন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে। ওই ফ্লেক্সের ব্যাপারে তৃণমূলের তরফে ইতিমধ্যেই থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
সপ্তাহখানেক আগে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক আধিকারিককে মারধরে নাম জড়ানোর পরে দলের দুই নেতা দিবাকর জানা ও সেলিম আলিকে সাসপেন্ড করেছিলে জেলা তৃণমূল। দিবাকর পরে থানায় আত্মসমর্পণ করেন। জামিন পাওয়ার পরে গলায় মালা পরিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
গত শুক্রবার মেচেদার সভায় শুভেন্দু অবশ্য বলেন, ‘‘কোলাঘাটে যে ঘটনা ঘটেছে তা আমরা সমর্থন করিনি। আমরা ধরতেও বলিনি, ছাড়তেও বলিনি। আইন আইনের পথে হেঁটেছে। এখানকার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আত্মসমর্পণ করে গ্রেফতার হয়েছেন। এটাই বিরোধীদের সঙ্গে তৃণমূলের তফাত।’’ মন্ত্রীর এমন কথায় সে দিন উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন দিবাকর অনুগামীরা।
এর পরেই রবিবার ফ্লেক্স-বার্তা সামনে আসে। ফ্লেক্সটিতে লেখা ছিল, ‘কেটিপিপি-র নির্ভীক জিএম-কে জব্দ করার জন্য লালু (দিবাকরের ডাকনাম) ও সেলিম দ্বারা একান্ত নাটক রচয়িতা ও জামিনের পর রাজকীয় বরণ। ছাই খাদানে নতুন তোলাবাজির গ্রুপ টুটুল মল্লিক, লক্ষ্মণ মাইতি, সুবর্ণ সামাই প্রভৃতি খাদানে প্রত্যহ ৭ লক্ষ ২০ হাজার তোলা আদায়ের কান্ডারি শুভেন্দু অধিকারী। ছিঃ শুভেন্দু ছিঃ ছিঃ ছিঃ’।
ওই ফ্লেক্সের ছবি সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি নজরে আসে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই খাদান ও সংলগ্ন একটি সিমেন্ট কারখানার শ্রমিক নেতা টুটুলেরও। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ শুরু করেন শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক তৃণমূলের আহ্বায়ক শরৎ মেট্যা, পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ পঞ্চানন দাস, খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জয়দেব বর্মণেরা। টুটুল জানিয়েছেন, তাঁরা ওই এলাকায় গিয়ে কোনও ফ্লেক্স দেখতে পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ হয়তো ফ্লেক্সটা ওখানে রেখে ছবি তুলে তা ভাইরাল করেছে। আর ছবি তোলার পরেই ফ্লেক্সটাও তারা খুলে ফেলেছে।’’ টুটুলের দাবি, ‘‘শুভেন্দুর জনসভায় বিপুল মানুষের ভিড় দেখেই বিজেপি মিথ্যা অভিযোগ তুলে এ ধরনের কাজ করেছে। ওই ব্যানার যেখানে ছাপা হয়েছে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জড়িতদের চিহ্নিত করা হবে এবং জানানো হবে।’’ শরতেরও দাবি, ‘‘বিজেপির লোকজন এতে জড়িত। দলের জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’ ফ্লেক্সের ব্যাপারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীও বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা ওই এলেকায় গিয়ে কোনও ফ্লেক্স দেখতে পাননি।’’
এ ব্যাপারে দিবাকরকে ফোন করা হয়েছিল। তার ফোন ছিল ‘নট রিচেবল’। তবে এ দিন রাতে ডিমারি বাজারে একটি মোমবাতি মিছিলে তাঁকে দেখা গিয়েছে। দিল্লিতে হিংসার ঘটনার প্রতিবাদে ওই মিছিল করেছিল স্থানীয় একটি ক্লাব। দিবাকরের সঙ্গে ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য উত্তম সাহু ও ধলহরা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান আতিয়ার রহমান।
বিজেপির জেলা (তমলুক) সভাপতি নবারুণ নায়েক পাল্টা বলছেন, ‘‘তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে এই ধরনের কাজে কারা জড়িত ছিল, সবাই জানেন। নিজেদের দলের কোন্দল ঢাকা দিতে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা এবং রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতেও, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ছাই খাদানের শ্রমিক সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের কোন্দলের জেরেই এই ফ্লেক্স পড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy